অনিলকুমার সিনহা
সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার অনিলকুমার সিন্হাকেই নয়া সিবিআই প্রধান হিসেবে বেছে নিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দফতর। রঞ্জিত সিনহার পরে বিহার ক্যাডারেরই আর এক আইপিএস অফিসার এই দায়িত্ব পেলেন।
আজ ছিল রঞ্জিত সিন্হার কর্মজীবনের শেষ দিন। আর আজই বিকেলে তাঁর উত্তরসূরি খুঁজতে সাত নম্বর রেস কোর্স রোডে বৈঠক বসে। আইন মোতাবেক সেই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এইচ এল দাত্তু এবং লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে। সরকারি সূত্রে খবর, কর্মিবর্গ দফতরের তরফে ৪০ জনেরও বেশি আইপিএস অফিসারের নাম পাঠানো হয়েছিল। তাতে সিবিআইয়ের স্পেশ্যাল ডিরেক্টর তথা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদাধিকারী অনিল ছাড়াও এনআইএ প্রধান শরদ কুমার, রাজস্থান পুলিশের ডিজি ওমেন্দ্র ভরদ্বাজ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিশেষ সচিব প্রকাশ মিশ্রর নাম একেবারে উপরের দিকে ছিল। শেষ বেলায় কিছুটা এগিয়ে ছিলেন কেরলের ডিজিপি কে এস বালসুব্রহ্মণ্যমও। শেষ পর্যন্ত তিনটি নাম চূড়ান্ত হয়। তার মধ্যে থেকে অনিলের নাম গভীর রাতে ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রীর দফতর।
সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, মোদীর বিশেষ আস্থাভাজন হিসেবেই পরিচিত ১৯৭৯ ব্যাচের আইপিএস অনিল। এক সময়ে সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনের অতিরিক্ত সচিব ছিলেন তিনি। নতুন সিবিআই অধিকর্তা বাছার আগে সরকারের অবস্থানই ছিল যে, কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনে কাজ করা কোনও অফিসারই এই পদে অগ্রাধিকার পাবেন। অনিলের ক্ষেত্রে সেই সমীকরণই কাজ করেছে বলে সূত্রটির দাবি।
আর বিদায়ী সিবিআই প্রধান?
আজ নেলসন ম্যান্ডেলার উক্তি উদ্ধৃত করে রঞ্জিত সিন্হা বলেন, “আমাকে আমার সাফল্য দিয়ে বিচার করবেন না। আমি কত বার পড়ে গিয়েও আবার উঠে দাঁড়িয়েছি, তা দিয়ে বিচার করুন।”
তিনিই প্রথম সিবিআই প্রধান, যাঁকে শীর্ষ পদে থাকাকালীনই কোনও মামলার তদন্ত থেকে সরে যেতে হয়েছে। তা-ও আবার টুজি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির মতো স্পর্শকাতর মামলা। তার পরেও অবশ্য পদত্যাগ করেননি রঞ্জিত। আজ সন্ধ্যায় ফুল দিয়ে সাজানো নিজের দুধসাদা গাড়িতেই তিনি সিবিআই দফতর ছাড়েন। মনমোহন সরকারের আমলে বিভিন্ন দুর্নীতি নিয়ে এর আগে প্রাক্তন সিএজি প্রধান বিনোদ রাই, প্রাক্তন কয়লাসচিব পি সি পরাখ স্মৃতিচারণ করে বই লিখেছেন। তিনিও কি অন্যদের মতোই বই লিখবেন? রঞ্জিতের জবাব, “আমার যা করার আমি সেটাই করব। আমি অন্য কাউকে অনুসরণ করব না।”
তবে সিবিআই সূত্রের বক্তব্য, রঞ্জিত সিনহার আমলে তাঁকে নিয়ে বিতর্ক যেমন হয়েছে, তেমনই বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্তও করেছে সিবিআই। এ কথা ঠিক যে, টুজি ও কয়লা বণ্টন কেলেঙ্কারিতে সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ‘খাঁচার তোতা’ অপবাদও শুনতে হয়েছে। কিন্তু রঞ্জিতের আমলেই রেলের দুর্নীতি ধরা পড়েছে। তার জেরে মনমোহন সরকারের রেলমন্ত্রী পবন বনশলকে সরে যেতে হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন রেল বোর্ডের সদস্য। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সিএমডি, সেন্সর বোর্ডের সিইও-কে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। আরুষি তলোয়ার হত্যা মামলা, পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে লালু প্রসাদের জেল, হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমপ্রকাশ চৌটালার জেল-সবই রঞ্জিত সিনহার আমলে। সারদা মামলাতেও অল্প সময়েই অনেকটা এগিয়েছে সিবিআই। তৃণমূলের এক সাংসদ-সহ বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করেছে তারা। অনেকেই বলছেন, প্রভাবশালীদের ঘিরে জাল গুটিয়ে আনছে তারা।
অনিলের আমলে কী হয়, সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy