২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে দিল্লিতে একটি চলন্ত বাসে বছর তেইশের নির্ভয়াকে গণধর্ষণ, ভয়াবহ মারধর এবং যৌন অত্যাচার করে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দিয়ে গিয়েছিল ছ’জন। নির্ভয়ার প্রেমিককেও মারধর করে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়। প্রথমে দিল্লির সফদরজং ও পরে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজ়াবেথ হাসপাতালে এক নিষ্ফল লড়াইয়ের শেষে ২৮ ডিসেম্বর মারা যান নির্ভয়া। তত দিনে গ্রেফতার হয়েছে নাবালক-সহ ছয় অভিযুক্তই।
তার পর থেকে গত সাত বছর ধরে বিভিন্ন আদালতে নির্ভয়া মামলা চলেছে। এক বছরের মধ্যে তার ধর্ষক-খুনিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল দিল্লির দায়রা আদালত। দিল্লি হাইকোর্ট সেই রায় বহাল রাখার নির্দেশ দেয় ২০১৪ সালের মার্চ মাসে। ২০১৭ সালের মে মাসে সেই রায় বহাল রাখে শীর্ষ আদালত। দায়রা আদালতের রায় প্রকাশের আগেই তিহাড় জেলে আত্মহত্যা করে আসামি রাম সিংহ। আর এক অভিযুক্ত নাবালক হওয়ায় তার বিচার হয়েছে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে। ফলে মুকেশ সিংহ (৩২), পবন গুপ্ত (২৫), বিনয় শর্মা (২৬) ও অক্ষয় ঠাকুরের (৩১) ফাঁসির নির্দেশ কার্যকর করবেন তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষ।
তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তিন নম্বর জেলে ওই চার জনকে ফাঁসি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেল সূত্রের খবর, তিন দোষী রয়েছে ওই তিন নম্বর জেলে-ই। এক জন রয়েছে চার নম্বর জেলে। এই কাজের জন্য মেরঠের এক ফাঁসুড়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন জেল কর্তৃপক্ষ। ফাঁসির দড়ি আনা হয়েছে বিহারের বক্সার জেল থেকে। শেষ আইনি পদক্ষেপ করার জন্য আসামিদের ১৪ দিন সময় দিয়েছে
আদালত। সুপ্রিম কোর্টে কিউরেটিভ পিটিশন ও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানাতে পারে তারা। আসামিদের আইনজীবী এ পি সিংহ জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টে কিউরেটিভ পিটিশন পেশ করা হবে।
৮ ফেব্রুয়ারি দিল্লির বিধানসভা ভোট। তার আগে এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে সব রাজনৈতিক দলই। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, ‘‘এই রায়ে বিচারব্যবস্থার উপরে মানুষের আস্থা বাড়বে।’’ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের কথায়, ‘‘আদালতের এই সিদ্ধান্তে দিল্লিবাসীর বহু দিনের ইচ্ছে পূরণ হল। আশা করি, যারা মহিলাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে তারা এ থেকে শিক্ষা নেবে।’’ কংগ্রেস মুখপাত্র সুস্মিতা দেব বলেন, ‘‘শুনেছি ভয়ঙ্কর অপরাধের ক্ষেত্রে উচ্চতর আদালতে আপিল করার অধিকার তুলে দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। আমার মনে হয় সেটা ঠিক নয়। তবে ভয়ঙ্কর অপরাধের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপিলের শুনানি শেষ হওয়া উচিত।’’