Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
National News

পিছোতে পারে নির্ভয়ার চার দণ্ডিতের ফাঁসি

২০১২-র ডিসেম্বরে দিল্লিতে গণধর্ষিতা হয়েছিলেন ২৩ বছরের তরুণী ‘নির্ভয়া’।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২০ ০২:৫৫
Share: Save:

পিছিয়ে যেতে পারে নির্ভয়া মামলায় দণ্ডিতদের ফাঁসি। বুধবারের আইনি টানাপড়েনের পরে দেখা যাচ্ছে, নির্ভয়াকে ধর্ষণ ও হত্যায় দণ্ডিত চার জনের মৃত্যুদণ্ড ২২ জানুয়ারি কার্যকর করা প্রায় অসম্ভব।

৭ জানুয়ারি দিল্লির দায়রা আদালত রায় দেয়, ২২ জানুয়ারি সকাল সাতটার সময়ে চার অপরাধী বিনয় শর্মা, মুকেশ কুমার, অক্ষয়কুমার সিংহ ও পবন সিংহের ফাঁসি হবে। আদালত চার জনকে আইনি পদক্ষেপের শেষ ধাপ হিসেবে সুপ্রিম কোর্টে রায় সংশোধনীর আর্জি (কিউরেটিভ পিটিশন) এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনের জন্য ১৪ দিন সময় দেয়।

কিন্তু আজ দিল্লি সরকারের প্রতিনিধি ও তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষ আদালতে জানান, যে হেতু গত কাল এক দণ্ডিত রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার জন্য আবেদন জানিয়েছে, ২২ জানুয়ারি ফাঁসি হওয়া সম্ভব নয়। কারণ, রাষ্ট্রপতি কবে তাঁর সিদ্ধান্ত জানাবেন ঠিক নেই। এবং রাষ্ট্রপতি যদি সাজা মকুব না-ও করেন, তবু তাঁর সিদ্ধান্ত জানানোর পরে অন্তত ১৪ দিন অপেক্ষা করে ফাঁসি কার্যকর করতে হয়। অর্থাৎ, আগামিকাল, ১৬ জানুয়ারিও, যদি রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত জানান, এবং তা নেতিবাচক হয়, তা হলেও ৩১ জানুয়ারির আগে ফাঁসি দেওয়া যাবে না। আর তার মধ্যে যদি বাকি তিন দণ্ডিতও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করে, তা হলে ফাঁসি আরও পিছিয়ে যাবে। এই আইনি জটিলতার জন্যই ২২ জানুয়ারি কোনও ভাবেই ফাঁসি হওয়া সম্ভব নয় বলে জানায় দিল্লি সরকার।

আরও পড়ুন: ‘মুখ্যমন্ত্রী ভণ্ড’, অরবিন্দ কেজরীবালকে তোপ গম্ভীরের

দায়রা আদালতে কিউরেটিভ পিটিশন দাখিল করেছিল দুই অভিযুক্ত মুকেশ ও বিনয়। গত কাল আদালত সেই আবেদন খারিজ করে দেওয়ার পরে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানায় মুকেশ। একই সঙ্গে তার আইনজীবী হাইকোর্টে মৃত্যু পরোয়ানা বাতিল করার আর্জি জানিয়ে বলেন, যত ক্ষণ না রাষ্ট্রপতি কিছু বলছেন, তত ক্ষণ মুকেশের ফাঁসি হওয়া সম্ভব নয়। তাই মৃত্যু পরোয়ানা বাতিল করে দেওয়া হোক। আজ মুকেশের সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মনমোহন ও বিচারপতি সঙ্গীতা ধিংড়া সেহগলের বেঞ্চ জানায়, দায়রা আদালতের রায় বাতিল করার জন্য দায়রা আদালত বা সুপ্রিম কোর্টেই আবেদন জানাতে হবে। হাইকোর্টের এ বিষয়ে কিছু বলার নেই। যা শুনে মুকেশের আইনজীবী জানান, এর পরে তিনি দায়রা আদালতে আবেদন জানাবেন।

হাইকোর্টের বেঞ্চকে তখন তিহাড় জেলের প্রতিনিধি ও দিল্লি সরকারের ফৌজদারি আইনজীবী রাহুল মেহরা জানান, এই পরিস্থিতিতে ২২ জানুয়ারি ফাঁসি কার্যকর করা আদপেই সম্ভব নয়। যা শুনে দৃশ্যতই বিরক্ত হন দুই বিচারপতি। বলেন, ‘‘নিজেদের ঘর সামলান। দণ্ডিত অপরাধীরা এ ভাবে ফাঁসি পিছোনোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, আর আপনারা কোনও ভাবেই তা আটকাতে পারছেন না?’’ উত্তরে আইনজীবী মেহরা জানান, নিয়মমাফিক মুকেশ রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানিয়েছিল। সেই আর্জি খারিজ করে উপ-রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ বার উপ-রাজ্যপাল সেই আর্জি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পাঠাবেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক পাঠাবে রাষ্ট্রপতি কোবিন্দের কাছে। আইনজীবীর কথায়, ‘‘আমরা চাই তাড়াতাড়ি প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ হোক। দণ্ডিতেরা কী করতে চাইছে তা সরকারের কাছেও স্পষ্ট। কিন্তু দোষীদের সমস্ত আইনি বিকল্প শেষ হওয়া এবং সব আর্জি খারিজ হওয়ার আগে ফাঁসি কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব নয়।’’

দিল্লি সরকারের আইনজীবীই জানান, ২১ জানুয়ারি দুপুর ১২টার মধ্যে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত জানা না-গেলে তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষকে দায়রা আদালতে নতুন মৃত্যু পরোয়ানার জন্য আবেদন করতে হবে। যদি ২২ জানুয়ারির আগে বা পরে রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ করে দেন, তা হলেও জেল কর্তৃপক্ষকে নতুন দিন-ক্ষণ দিয়ে নতুন মৃত্যু পরোয়ানার আবেদন জানাতে হবে।

২০১২-র ডিসেম্বরে দিল্লিতে গণধর্ষিতা হয়েছিলেন ২৩ বছরের তরুণী ‘নির্ভয়া’। দিন কয়েক বাদে হাসপাতালে মারা যান। ছয় অভিযুক্তের মধ্যে নাবালক ধর্ষক ছাড়া পেয়ে গিয়েছে। জেলেই আত্মহত্যা করেছে এক ধর্ষক-খুনি রাম সিংহ। সাত বছর পরে বাকি চার জনের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করল দিল্লির দায়রা আদালত। তাদের মধ্যে এক জন, মুকেশ সিংহের মায়ের দাবি, গরিব বলে তাঁর ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে। এই মুকেশই রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nirbhaya Nirbhaya Case Gang Rape
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE