Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিতর্কে বসুন, সনিয়াকে চ্যালেঞ্জ গডকড়ীর

জমি বিল নিয়ে সংসদের লড়াই এ বার সড়কে গড়াল। নরেন্দ্র মোদীর জমি নীতির বিরোধিতায় আগেই পথে নেমেছেন সনিয়া গাঁধী। তামাম বিরোধী দল ছাড়াও তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন অণ্ণা হজারে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তারই মোকাবিলায় এ বার মাঠে নামছে বিজেপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৫ ০৩:৫৭
Share: Save:

জমি বিল নিয়ে সংসদের লড়াই এ বার সড়কে গড়াল।

নরেন্দ্র মোদীর জমি নীতির বিরোধিতায় আগেই পথে নেমেছেন সনিয়া গাঁধী। তামাম বিরোধী দল ছাড়াও তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন অণ্ণা হজারে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তারই মোকাবিলায় এ বার মাঠে নামছে বিজেপি। আজই বিরোধীদের খোলা বিতর্কের চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সেই লড়াই শুরু করে দিলেন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী।

লড়াইয়ের কেন্দ্রীয় বিষয় একটাই। জমি বিলকে হাতিয়ার করে কংগ্রেসের লক্ষ্য, মোদী সরকারকে কৃষক বিরোধী প্রতিপন্ন করা। আর বিজেপি চাইছে, জমি বিল পাশ করাতে গিয়ে রাজনীতির জমি যেন সরে না যায়! সরকারের নীতি যে মোটেই কৃষক বিরোধী নয়, বরং তা রূপায়িত হলে শহর ও গ্রামে শিল্প ও পরিকাঠামোর উন্নয়ন হবে, মানুষকে তা বোঝানোর চাপ এখন বিজেপির ওপর। সূত্রের খবর, দলের সাংসদ ও নেতাদের প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী এক মাস ধরে এ কথাটাই গাঁ-গঞ্জে গিয়ে বোঝাতে হবে তাঁদের।

সংসদের বাজেট অধিবেশনের প্রথমার্ধ শেষ হচ্ছে কাল। বিরোধীদের আপত্তিতে এ যাত্রা রাজ্যসভায় জমি অধিগ্রহণ অর্ডিন্যান্সটি পাশের সুযোগ আর নেই। ফলে অর্ডিন্যান্সটি পুনর্বার জারি করতে হবে সরকারকে। এক মাস পরে ২০ এপ্রিল বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হলে ফের অর্ডিন্যান্সটি পাশ করানোর চেষ্টা করবে সরকার। প্রধানমন্ত্রী চাইছেন, মাঝের এই এক মাসে বিরোধীদের সঙ্গে বোঝাপড়ার পাশাপাশি জমি বিলের স্বপক্ষে জনমত গড়ার চেষ্টা করুক দল। গডকড়ীকে সেই দায়িত্বটা দিয়েছেন মোদী। প্রধানমন্ত্রী নিজেও এ বিষয়ে সক্রিয় হতে পারেন। কারণ, এই বিলের পথ পরিষ্কার না হলে শিল্প ও বিনিয়োগ সহায়ক বাতাবরণ তৈরি করা সম্ভব নয়।

কিন্তু বিরোধীরাই বা ছাড়বে কেন? কংগ্রেসের গতিবিধিতেই স্পষ্ট যে, এত দিনে সরকারের বিরুদ্ধে একটা মোক্ষম অস্ত্র পেয়েছেন তাঁরা। ‘নরেন্দ্র মোদী, কৃষক বিরোধী’ স্লোগান তুলে গোটা দেশের কৃষকদের খেপিয়ে তুলতে কাল থেকে রাজ্য সফরে নামছেন সনিয়া গাঁধী। শুধু জমি বিল নয়, সরকার যে সার্বিক ভাবে কৃষক বিরোধী সেই বার্তা দিতে কৃষি পণ্যের সহায়ক মূল্য না বাড়ানো, ইউরিয়া সঙ্কট ইত্যাদি বিষয়কে সঙ্গে জুড়তে চাইছেন। সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কৃষিপণ্যের ক্ষয়ক্ষতির জন্য কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিও তুলছেন সনিয়া। কাল-পরশু রাজস্থান ও হরিয়ানার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো দেখতে যাবেন কংগ্রেস সভানেত্রী। কংগ্রেস সূত্র বলছে, সনিয়া জমি তৈরি করে দেওয়ার পরে রাজ্য সফরে বেরোবেন রাহুলও। আগামী মাসে দিল্লিতে একটি বড় কৃষক সভার আয়োজনও করছে কংগ্রেস।

নিতিন গডকড়ীর চিঠির জবাবেও কংগ্রেস আজ সেই অনমনীয় মনোভাব বুঝিয়ে দিয়েছে। গডকড়ীর দফতর ও বিজেপির তরফে আজ বলা হয়, সনিয়া গাঁধী, অণ্ণা হজারে-সহ সব বিরোধীকে চিঠি দিয়েছেন নিতিন। তাতে তিনি এ-ও লিখেছেন, “কৃষক স্বার্থের কথা মাথায় রেখে মোদী সরকার অর্ডিন্যান্সে কিছু সংশোধন করেছেন, যা কৃষক স্বার্থকে রক্ষা করবে। তা সত্ত্বেও রাজনৈতিক স্বার্থে কিছু দল তার বিরোধিতা করছে।” কিন্তু পিচে বল পড়ার আগেই আজ স্টেপ আউট করে খেলেছে কংগ্রেস। দলের প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, “সনিয়া গাঁধী কোনও চিঠিই পাননি। তা ছাড়া, জমি বিল কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের আওতায় পড়ে। তা হলে গডকড়ী কেন চিঠি লিখছেন? উনি কি গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর মুখপাত্র!” জমি অর্ডিন্যান্স জারি করার সময় থেকেই গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী চৌধুরি বীরেন্দ্র সিংহকে এড়িয়ে যাবতীয় নীতি পরিবর্তন করছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়। বিরোধীদের দাবি, নামে মন্ত্রী থেকেও বীরেন্দ্র চৌধুরীর অবস্থা ‘পুতুলের’ মতো!

গডকড়ীর খোলা বিতর্কের চ্যালেঞ্জের মতোই এর পর খোলা চিঠিতে কিছু প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। তাদের বক্তব্য, দেড় বছর আগে সংসদে সর্বসম্মতিতে জমি আইন পাশ হয়েছিল। তাতে সমর্থন জানিয়েছিল বিজেপি। কিছু কর্পোরেটকে সুবিধা পাইয়ে দিতে এখন হঠাৎ কেন আইনে পরিবর্তন করা হয়েছে? প্রধানমন্ত্রী এখন জমি নীতি নিয়ে বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা চাইছেন, সেটা ভালো কথা। তা হলে কোনও কথা না বলে আগে তিনি অর্ডিন্যান্সটি জারি করে দিলেন কেন? তা হলে কি বিরোধী ঐক্য দেখে ভয় পাচ্ছে সরকার?

কংগ্রেস সূত্র বলছে, বাজেট অধিবেশনের দুই অর্ধের মাঝে জমি বিল নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনাতেই যেতে চান না তাঁরা। বরং সনিয়া দাবি জানাবেন, বিলটি প্রত্যাহার করা হোক। দলের এক নেতার কথায়, প্রত্যাশিত যে বিজু জনতা ও জয়ললিতাকে পাশে নিয়ে বিজেপি বিলটি পাশ করানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু সেই পথও বন্ধ করার চেষ্টা করবে বিরোধীরা। প্রয়োজন পড়লে ওড়িশা ও তামিলনাড়ুতেও জমি বিল বিরোধী আন্দোলন হবে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বিষয়টি এখন মনমোহন জমানার পরমাণু চুক্তি বিতর্কের মতোই হয়ে উঠছে। ফারাকটা হল, বিজেপি নৈতিক ভাবে এ ধরনের চুক্তির বিপক্ষে ছিল না। রাজনৈতিক কারণে বিরোধিতা করছিল। কিন্তু জমি বিল নিয়ে সনিয়ার নীতি ও রাজনীতির ফারাক নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE