Advertisement
E-Paper

হাত বাড়ালেন নীতীশ, আপত্তি নেই মমতার

জাতীয় রাজনীতিতে একঘরে হওয়ার আশঙ্কায় ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সমঝোতার বার্তা দিলেন নীতীশ কুমার। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দূত পাঠিয়েছেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:১৫

জাতীয় রাজনীতিতে একঘরে হওয়ার আশঙ্কায় ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সমঝোতার বার্তা দিলেন নীতীশ কুমার। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দূত পাঠিয়েছেন তিনি। নীতীশ জানিয়েছেন, কেন্দ্রের নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে মতের পার্থক্য থাকলেও দীর্ঘকালীন রাজনৈতিক লড়াইয়ে মমতার পাশেই রয়েছেন। নোট বাতিলের বিষয়টি ভুলে গিয়ে একসঙ্গে চলার বার্তাও দিয়েছেন নীতীশ।

নীতীশের দূতকে মমতা জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত ভাবে তিনিও নীতীশের বিরোধিতা করেননি। বিহারের সভায় নীতীশের নাম করে কোনও অভিযোগও করেননি। জাতীয় রাজনীতির স্বার্থে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়ে নীতীশ কুমারের সঙ্গে আন্দোলন করতে আপত্তি নেই তৃণমূল নেত্রীর। তবে নীতীশ সম্পর্কে কিছুটা হলেও যে তাঁর মোহভঙ্গ হয়েছে তা জানাতে ভোলেননি তৃণমূল নেত্রী।

গত কাল দিল্লিতে জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর রাজনৈতিক সম্মেলন হয়েছে। দলের সভাপতি হিসেবে সেই সম্মেলনে হাজির ছিলেন নীতীশ। গোটা সম্মেলন জুড়েই দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিজেপি- বিরোধী মনোভাব দেখা গিয়েছে। সেই ছবি চোখ এড়ায়নি রাজনৈতিক কৌশলে পারদর্শী নীতীশ কুমারের। দলীয় সূত্রে খবর, দলের সাধারণ সম্পাদক কে সি ত্যাগী এবং সাংসদ শরদ যাদবও তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক শোধরানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

নোট বাতিলের প্রেক্ষিতে দেশ জুড়ে কর্মসূচি নিয়েছে তৃণমূল। দলের নেত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই আন্দোলনের মুখ। দিল্লির যন্তরমন্তর থেকে লখনউয়ের গোমতীনগর হয়ে পটনায় গর্দনিবাগে সভা করেছেন তিনি। দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরীবাল, লখনউয়ে অখিলেশ যাদব এবং পটনাতে লালুপ্রসাদের সমর্থন পেয়েছেন তিনি। এক ধাক্কায় জাতীয় রাজনীতিতে মোদী-বিরোধী লড়াইয়ে সামনে চলে এসেছেন মমতা। কংগ্রেসও পুরনো তিক্ততা ভুলে পাশে দাঁড়িয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, এই ঘটনায় কিছুটা হলেও ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন নীতীশ। দীর্ঘদিন ধরেই নিজেকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী এবং নরেন্দ্র মোদীর বিরোধী শিবিরের প্রধান নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্র-বিরোধী আন্দোলন সেই আশায় জল ঢেলেছে।

দলীয় সূত্রে খবর, পটনায় এসে মমতার সভা করা মানতে পারেননি নীতীশ। প্রথমে চেষ্টা করেছিলেন সভা আটকানোর। কিন্তু তাতে সফল হননি। এমনকী বিমানবন্দরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য কোনও মন্ত্রীকেও পাঠাননি। তাতেই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। ঘনিষ্ঠ মহলে সে কথা জানিয়েছিলেন। প্রভাব খাটিয়ে লালুপ্রসাদকেও মমতার সভায় প্রতিনিধি পাঠাতে বাধা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। তাতে কাজ হয়নি। রাতেই লালুপ্রসাদের বাড়িতে গিয়ে মমতা আরজেডি প্রতিনিধিকে সভায় থাকতে রাজি করান। পরে পটনার সভায় তিনি ‘বিশ্বাসঘাতক’ (গদ্দার) বলতে নীতীশকেই বুঝিয়েছিলেন বলে মনে করেন জেডিইউ নেতারা। আজও তার জবাবে দিদিকে ‘দাদাগিরি’ করতে নিষেধ করেছেন জেডিইউ নেতা কে সি ত্যাগী। দলীয় সূত্রে খবর, এখনই প্রকাশ্যে তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতার বার্তা দিতে রাজি নন নীতীশ।

জেডিইউ সূত্রে খবর, তৃণমূলের এক প্রথম সারির সাংসদকে দিল্লিতে নীতীশ বলেন, ‘‘আমি মমতাকে ফোন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিমানবন্দরে নামার পরে টিভিতে ওঁর কথা শুনে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করি।’’ নীতীশের যুক্তি, একটি বিষয়ে (পড়ুন নোট বাতিল) মতের অমিল হতেই পারে। তাতে সম্পর্ক নষ্ট হয় না। ঘনিষ্ঠদের তিনি জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ থেকেও মদে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সভা করার দাবিতে কয়েক জন তাঁর কাছে এসেছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি সম্মান জানিয়েই তিনি পশ্চিমবঙ্গে যাননি। ঘনিষ্ঠ শিবিরে নীতীশের দাবি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পটনায় আসতেই পারেন। কিন্তু বিহারের রাজনীতিতে তাঁর ও লালুর মতবিরোধের সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করা ঠিক নয়। তবে সব ভুলে ফের হাত বাড়িয়েছেন তিনি।

তৃণমূল সূত্রের মতে, রাষ্ট্রপতি ভবন অভিযানে জেডিইউ সঙ্গী হতেই পারত। নীতীশের দলের নেতাদের মতে, নোট বাতিল নিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করেছেন রাষ্ট্রপতি। তার সমর্থনে বিবৃতিও দিয়েছেন। তাই তাঁর কাছে গিয়ে লাভ নেই।

Nitish Kumar Mamata Banerjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy