Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

উৎসব নয়, ধর্না ব্রডগেজের বর্ষপূর্তিতে

গত বছর এই দিনের প্রতীক্ষায় ছিলেন বরাকের প্রতিটি মানুষ। আনন্দস্রোতে ভেসেছিল ত্রিপুরা, মণিপুর, মিজোরামও। ঠিক এক বছর আগে ২১ নভেম্বর এই অঞ্চল ব্রডগেজে যুক্ত হয়।

ব্রডগেজ রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটির সদস্যদের ধর্না। সোমবার শিলচরে। স্বপন রায়ের তোলা ছবি।

ব্রডগেজ রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটির সদস্যদের ধর্না। সোমবার শিলচরে। স্বপন রায়ের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলচর শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:১১
Share: Save:

গত বছর এই দিনের প্রতীক্ষায় ছিলেন বরাকের প্রতিটি মানুষ। আনন্দস্রোতে ভেসেছিল ত্রিপুরা, মণিপুর, মিজোরামও।

ঠিক এক বছর আগে ২১ নভেম্বর এই অঞ্চল ব্রডগেজে যুক্ত হয়। শিলচর থেকে প্রথম ট্রেন রওনা দেয় গুয়াহাটিতে। আজ দিনটিকে উদ্‌যাপন করল শিলচর-লামডিং ব্রডগেজ রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটি। তবে উৎসবের মেজাজে নয়, দু’ঘণ্টার অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন তাঁরা। আওয়াজ উঠল— ‘করুণা চাই না, উন্নত যোগাযোগ এবং সুষ্ঠু পরিবেশ চাই।’ শাসক দল বিজেপি বা রেল বিভাগের তরফে অবশ্য বর্ষপূর্তিতে কোনও কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়নি। তবে উভয়েই এমন দিনে সংগ্রাম কমিটির অবস্থান ধর্মঘটের সমালোচনা করে।

ব্রডগেজ প্রাপ্তির এক বছরে গুয়াহাটি ছাড়াও দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা যাওয়ার ট্রেন মিলছে শিলচর থেকে। রাস্তাঘাটের চরম বেহাল অবস্থা থেকে যাত্রীদের রেহাই মিলেছে। ভেন্ডার-হকারের মতো অনেকে আয়ের সুযোগ ফিরে পেয়েছেন। কিন্তু যে সব দুর্বলতা সঙ্গী করে ব্রডগেজের যাত্রীট্রেন শুরু হয়েছিল, সেগুলির কোনও পরিবর্তন হয়নি। এমনকী, মিটারগেজের মতোই ধসে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। আগামী বর্ষায় এমন হবে না, কেউ তা সুনিশ্চিত করতে পারেননি। অন্যান্য স্টেশন আধুনিকীকরণ হলেও বাদ যায় শিলচর। এখনও পুরনো দালানবাড়ি, পুরনো পরিকাঠামোতেই কাজ চলছে। ব্যতিক্রম সিগন্যাল-প্যানেল। এমনকী ট্রেন পরিষ্কার, পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য তিনটি ওয়াশিং পিট নির্মাণের কথা থাকলেও কোনওক্রমে একটি তৈরি করে উদ্বোধন পর্ব সারা হয়। এক বছরেও দ্বিতীয়টির নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। এ ছা্ড়া, ব্রডগেজ স্টেশন করতে গিয়ে শিলচর স্টেশনে প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য বাড়ানো হলেও বর্ধিত অংশে কোনও শেড নেই। ফলে বৃষ্টির দিনে যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। সমস্যা রয়েছে ফুট-ব্রিজেও। একটি ফুটব্রিজ তৈরি হলেও প্রতিবন্ধীদের জন্য তাতে কোনও ব্যবস্থা নেই। হুইলচেয়ার ব্রিজের মুখে অকেজো হয়ে পড়ে।

শিলচর-লামডিং ব্রডগেজ রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটির কর্মকর্তা মলয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ব্রডগেজ পেলেও আমাদের এই অঞ্চলকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। সারা দেশের বাতিল কামরাগুলি এ দিকে পাঠানো হয়। ট্রেনের গতিবৃদ্ধির কোনও প্রয়াস নেই।’’

তাঁর বক্তব্য, এই অঞ্চলের মানুষ চিকিৎসা, পড়াশোনা-সহ নানা কারণে দক্ষিণ ভারতে যাতায়াত করেন। কিন্তু শিলচর থেকে সরাসরি সেখানে যাওয়ার কোনও ট্রেন নেই। লোকাল ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি, শিলচর স্টেশনে পুরো প্ল্যাটফর্মে শেড দেওয়া এবং আরেকটি ফুটব্রিজ তৈরিরও দাবি তাঁদের। শিলচর-গুয়াহাটি রুটে পাথরখোলা বাইপাস তৈরি হলেও সমস্ত ট্রেন লামডিং নিয়ে যাওয়ার বিরোধিতা করে সংগ্রাম কমিটি।

এ সব ব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই আজ বিকেল সাড়ে তিনটায় তাঁরা শিলচর স্টেশন প্রাঙ্গণে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন। নেতৃত্বে ছিলেন তাপসশঙ্কর দত্ত, অরুণাংশু ভট্টাচার্য, সুব্রত নাথ, প্রদীপ দেব, স্বপন দাস, প্রশান্ত ভট্টাচার্য।

গত বছর ২১ নভেম্বরকে ঐতিহাসিক দিন আখ্যা দিয়ে এ বার অবস্থান ধর্মঘট পালনকে মেনে নিতে পারেননি শিলচরের স্টেশন সুপার বিপ্লব দাস। তিনি বলেন, ‘‘দাবি পেশ, আন্দোলনের জন্য বছরে ৩৬৪ দিন রয়ে গিয়েছে। আজকের দিনটিকে উৎসবের মেজাজে পালন করা যেত।’’ তিনি জানান, এখন শিলচর স্টেশন থেকে মোট ৯টি ট্রেন চলছে। ওয়াশিং পিটের সমস্যা মিটে গেলে আরও ট্রেন বাড়ানো হতে পারে। এখন একটি পিট পুরোপুরি কাজ করছে। দ্বিতীয়টির শেষাংশে নির্মাণকাজ চলছে। ফলে সেটিতে ১২টির বেশি কামরা তোলা যায় না। লোকাল ট্রেন বৃদ্ধির দাবি প্রসঙ্গে স্টেশন সুপারের বক্তব্য, আগে সকাল ৬টায় একটি শিলচর-করিমগঞ্জ ট্রেন চালানো হচ্ছিল। যাত্রী হয়নি। তাই সেটিকে তুলে দিয়ে আগরতলাগামী ট্রেনকে ১১টার বদলে সকাল ৮টায় ছাড়া হচ্ছে।

তাঁর কথায়, ‘‘বর্তমান স্টেশন বিল্ডিং শীঘ্র ভাঙা হবে। গড়ে তোলা হবে আধুনিক সমস্ত সুবিধা যুক্ত নতুন দালানবাড়ি। তখন সৌন্দর্য বর্ধিত হবে, যাত্রীস্বাচ্ছন্দ্যও বাড়বে।’’

বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার, শিলচরের বিধায়ক দিলীপকুমার পালও ব্রডগেজ রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটির বিক্ষোভ প্রদর্শনের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘‘জরুরি কাজ না থাকলে আমি ট্রেনেই শিলচর-গুয়াহাটি যাতায়াত করি। গত কালও ট্রেনেই গুয়াহাটি থেকেই শিলচর এসেছি। মানুষ ব্রডগেজ পেয়ে অত্যন্ত খুশি। রাস্তার যন্ত্রণা থেকে রেহাই মিলেছে।’’

পাহাড়ে খুব ধীরে ট্রেন চলে, এ-কথা স্বীকার করেও ডেপুটি স্পিকার দুর্ঘটনা এড়াতে ধীরগতিতে চলাই যথার্থ বলে মন্তব্য করেন। তাঁর কথায়, ‘‘এখন আর স্টেশন বা ট্রেনের কামরার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না। মানুষের এখন শুধু একটাই দাবি, গুয়াহাটি যাতায়াতের জন্য একটা রাতের ট্রেন।’’ চা নিয়ে তিনি রেল প্রতিমন্ত্রী রাজেন গোঁহাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন দিলীপবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

broad gauge anniversary agitation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE