রাজস্থানের ‘ঘুমর’-এর পাশে অনায়াসে জায়গা করে নিতে পারত পুরুলিয়ার ছৌ-নাচ। কিংবা অসমের চা ছেড়ে কোনও বিদেশি অতিথি চুমুক দিতে পারতেন দার্জিলিং চায়ে। অথবা কাঞ্জিভরমের পাশের কোনও স্টলে থাকতেই পারত বাংলার তাঁতের শাড়ি।
স্বাধীনতার রং তো অনেক রকম। শুধু তো ইতিহাস নয়। কেবলই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অবদান নয়। সে সব স্মরণ করা তো আছেই। কিন্তু স্বাধীনতার অনুভব একটি উৎসবও। ভারতের নানান প্রান্তের আত্মাকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসতেই রাজধানীর রাজপথ জনসাধারণের জন্য খুলে দিয়েছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। স্বাধীনতার ৭০ বছরের উৎসবে যাতে মাততে পারে গোটা দেশ। যার পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভারত পরব’। আজ থেকে টানা সাত দিন দিল্লির রাজপথে একটি ‘মিনি-ভারত’কে দেখবে গোটা বিশ্ব। অধিকাংশ রাজ্য তাদের সম্ভার নিয়ে এলেও দেখা মিলল না পশ্চিমবঙ্গের।
‘ভারত পরব’-এ কেন নেই পশ্চিমবঙ্গ? এর কোন জুৎসই উত্তর নেই কেন্দ্রের কাছে। গোটা আয়োজনের মূল হোতা কেন্দ্রের পর্যটন ও সংস্কৃতি মন্ত্রী মহেশ শর্মা। তিনি আজ এই আয়োজনের উদ্বোধন করে বলেন, ‘‘আমরা সব রাজ্যকেই আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। কিন্তু তার মধ্যে ১৭টি রাজ্যই এখানে সামিল হয়েছে।’’ পর্যটন সচিব বিনোদ জুৎসির কথায়, ‘‘প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম, দেশের পাঁচ প্রান্ত থেকে পাঁচটি রাজ্যকে বাছাই করে রাজপথে সামিল করা হবে। কিন্তু তার পর একে একে অনেক রাজ্যই উৎসাহ দেখিয়ে উল্টে কেন্দ্রের উপরেই চাপ বাড়াতে শুরু করে। দাবি করে, তাদেরও সামিল করতে হবে। ফলে যারা যারা উৎসাহ দেখিয়েছে, তাদের সকলকেই আমরা জায়গা দিয়েছি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ আসেনি।’’
রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এমন কোনও আমন্ত্রণ এসেছে বলে আমাদের জানা নেই।’’ তাঁর দফতরের একটি সূত্রেও এ দিন দাবি করা হয়, পর্যটন সচিব অজিতরঞ্জন বর্ধনের কাছে এমন কোনও আমন্ত্রণ আসেনি।
এর আগেও কেন্দ্রীয় সরকার এই ধরনের কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে পশ্চিমবঙ্গ তাতে সামিল হয়েছে। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজপথে ট্যাবলো নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সংঘাত বাধে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পটি তুলে ধরে ট্যাবলো করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বাছাই কমিটি তাতে বাদ সেধেছিল। তাদের যুক্তি ছিল, এই ধরনের অনুষ্ঠানে রাজ্য সরকারের বিশেষ কোনও প্রকল্প নয়, দেশের শিল্প ও সংস্কৃতির স্বকীয়তাই ট্যাবলোয় তুলে ধরাটা রীতি। কিন্তু সেই প্রাথমিক বিবাদের পরেও পশ্চিমবঙ্গ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সামিল হয়েছে। এ বারের প্রজাতন্ত্র দিবসেও সামিল হয়েছে রাজ্য।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, ‘ভারত পরব’-এ যোগ দেওয়া নিয়েও প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। কিন্তু মাঝপথে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। দিল্লিতে রেসিডেন্ট কমিশনার দফতরে নিযুক্ত ওএসডি আর ডি মীণাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি ব্যস্ত আছি।’’
রাজধানীর অনেকে মনে করছেন, এই অনুষ্ঠানে সামিল হলে পশ্চিমবঙ্গ নিজেকে দুনিয়ার দরবারে আরও বেশি করে মেলে ধরতে পারত। যেমন কংগ্রেস শাসিত রাজ্য হয়েও কর্নাটকের স্টলে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া নিজের বড় একটি কাট আউট লাগিয়ে লগ্নি টানার আহ্বান জানিয়েছেন। উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, জয়ললিতার তামিলনাড়ু, নবীন পট্টনায়কের ওড়িশা মায় মানিক সরকারের ত্রিপুরাও এই ‘ভারত পরব’-এ সামিল হয়েছে। কেন্দ্রের মতে, এটিকে সামনে রেখে বিদেশি পর্যটকদেরও আরও টানার চেষ্টা চলছে। তার জন্য প্রচারও হচ্ছে বিশ্ব জুড়ে। দেশ জুড়ে ১৫ দিন ধরে হবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। মোদী সরকারের দুই মন্ত্রী যাচ্ছেন বাংলায়। জগৎ প্রকাশ নড্ডা যাবেন নোয়াপাড়ায় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মভিটেতে। আর কলরাজ মিশ্র কেশপুরে, ক্ষুদিরাম বসুর জন্মস্থলে। কিন্তু বাংলা থেকে কেউ আসছেন না দিল্লিতে।