Advertisement
E-Paper

বছরে আয় ১০ লাখ? গ্যাসে ভর্তুকি পাবেন না তাহলে

এত দিন ছিল অনুরোধ। নতুন বছর থেকে চালু হচ্ছে আয়ের গণ্ডি। বছরে আয় ১০ লক্ষ টাকা বা তার বেশি হলে আর রান্নার গ্যাসে কোনও ভর্তুকি মিলবে না। নতুন বছরের ১ জানুয়ারি থেকেই চালু হচ্ছে এই ব্যবস্থা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৪৪

এত দিন ছিল অনুরোধ। নতুন বছর থেকে চালু হচ্ছে আয়ের গণ্ডি। বছরে আয় ১০ লক্ষ টাকা বা তার বেশি হলে আর রান্নার গ্যাসে কোনও ভর্তুকি মিলবে না। নতুন বছরের ১ জানুয়ারি থেকেই চালু হচ্ছে এই ব্যবস্থা।

আজ পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান ঘোষণা করেছেন, নরেন্দ্র মোদী সরকারের নীতি হল, ভর্তুকি শুধু সেই গরিব মানুষদেরই দেওয়া হবে, যাঁদের সত্যিই ভর্তুকি দরকার। সেই নীতি মেনেই এই সিদ্ধান্ত।

এত দিন বছরে ১২টি করে সিলিন্ডার ভর্তুকিতে পাওয়া যেত। কলকাতায় ভর্তুকিতে ১৪.২ কেজি সিলিন্ডারের দাম পড়ত ৪২১ টাকা। তার পরেও সিলিন্ডারের প্রয়োজন হলে তার দাম পড়ে ৬৩৭ টাকা ৫০ পয়সা। এখন থেকে বাৎসরিক করযোগ্য আয় ১০ লক্ষ টাকার বেশি হলে সব সিলিন্ডারই বাজার দরে ৬৩৭ টাকা ৫০ পয়সা দিয়ে কিনতে হবে। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের ঘোষণা অনুযায়ী, যাঁর নামে গ্যাসের সংযোগ নেওয়া হয়েছে তাঁর, অথবা তাঁর স্বামী বা স্ত্রীর বছরে আয় যদি ১০ লক্ষ টাকার বেশি হয়, তা হলে ভর্তুকি মিলবে না। তবে পারিবারিক আয় বা স্বামী-স্ত্রী-র মিলিত করযোগ্য আয় ১০ লক্ষ টাকার বেশি হলে সমস্যা নেই। সে ক্ষেত্রে আলাদা ভাবে দু’জনের আয় ১০ লক্ষ না পেরোলেও চলবে।

রান্নার গ্যাসের ডিলার বা সরকার কী ভাবে জানবে কার আয় কত?

পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রাথমিক ভাবে দেশের নাগরিকদের উপরে বিশ্বাস রাখার নীতি নিয়েছেন। গ্রাহকরাই নিজে থেকে জানাবেন তাঁর বা তাঁর স্বামী বা স্ত্রীর আয় পৃথক ভাবে ১০ লক্ষ টাকার বেশি বা কম কি না। তার পরেও অবশ্য এই তথ্যটি যাচাই করা কঠিন নয়।

যাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ভর্তুকির সিলিন্ডারের টাকা যাচ্ছে, তাঁদের প্যান নম্বর থেকেই জানা সম্ভব কার কত আয়। সর্বশেষ আর্থিক বছরের আয়ের ভিত্তিতে এই হিসেব হবে।

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মোদী নিজে থেকে রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে প্রচার শুরু করেছিলেন। মোদীর যুক্তি ছিল, যাঁদের সঙ্গতি রয়েছে, তাঁরা ভর্তুকি ছেড়ে দিলে সেই টাকায় একেবারে গরিব মানুষের ঘরে ভর্তুকি পৌঁছে দেওয়া হবে। অর্থাৎ যাঁরা এখনও কেরোসিন, কয়লা, কাঠ বা ঘুঁটে জ্বালিয়ে রান্না করেন, তাঁরা গ্যাসের সিলিন্ডার পাবেন। সাধারণ মানুষের কাছে দৃষ্টান্ত তৈরি করতে সাংসদ, বিধায়ক, মন্ত্রী, আইএএস, আইপিএস-দেরও এ বিষয়ে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই ‘গিভ-ইট-আপ’ প্রচারে যথেষ্ট সাড়াও মিলেছিল। কিন্তু সার্বিকের তুলনায় এই হার নেহাতই নগণ্য।

সরকারি হিসেব অনুযায়ী, গোটা দেশে এখন রান্নার গ্যাস বা এলপিজি-র মোট গ্রাহক রয়েছেন ১৬ কোটি ৩৫ লক্ষ। এঁদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৫৭ লক্ষ ৫০ হাজার গ্রাহক নিজে থেকে এগিয়ে এসে ভর্তুকি ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু এই সংখ্যাটা মোট গ্রাহকের মাত্র সাড়ে তিন শতাংশ। এখনও ১৫ কোটি ৭৮ লক্ষ মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ভর্তুকি পাঠানো হচ্ছে। যদিও ভর্তুকি এখনও পাননি, এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়।

আজকের এই সিদ্ধান্তের পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে বিতর্ক। কেউ কেউ উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, ধরা যাক কোনও ব্যক্তির বার্ষিক আয় ১২ লক্ষ টাকা। পরিবারে তিনিই একমাত্র রোজগেরে। কিন্তু তিনি ভর্তুকির সিলিন্ডার পাবেন না। অথচ কোনও পরিবারে হয়তো স্বামী ও স্ত্রী প্রত্যেকে ৯ লক্ষ টাকা করে আয় করেন। ফলে, পরিবারের বার্ষিক আয় দাঁড়াল ১৮ লক্ষ। তাঁরা কিন্তু ভর্তুকির সিলিন্ডার পাবেন।

অনেকের আবার অভিযোগ, যাঁরা আয়কর দেন, তাঁদের উপরেই সরকারের কোপ পড়ছে। অনেকেই আছেন যাঁরা আয়কর দেন না। কিন্তু তাঁরা দিব্যি ভর্তুকিতে রান্নার গ্যাস পাবেন। অর্থ মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, গোটা দেশের মাত্র ৩ শতাংশ মানুষ আয়কর দেন। আয়করের আওতায় থাকা ৩ কোটি ২৪ লক্ষ মানুষের মধ্যে ৯০ শতাংশরই বার্ষিক আয় ৫ লক্ষ টাকার নীচে। ১০ লক্ষ টাকা থেকে ২০ লক্ষ টাকার মধ্যে আয়, এমন মানুষের সংখ্যা ১৩ লক্ষ ৭৮ হাজার। ২০ লক্ষ টাকা বা তার বেশি আয়সম্পন্ন করদাতার সংখ্যা ৪ লক্ষ ৬ হাজার। ফলে নতুন নিয়ম চালু করলেও মেরেকেটে ১৭-১৮ লক্ষ (মোট আয়করদাতার ৫ শতাংশের একটু বেশি) মানুষ ভর্তুকির বাইরে যাবেন। তাঁদের মধ্যেও আবার কত জন আগে থেকেই ভর্তুকি ছেড়ে বসে রয়েছেন, তা-ও দেখতে হবে।

পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের অবশ্য আশা, নতুন ব্যবস্থায় বছরে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার ভর্তুকি সাশ্রয় হবে। নিজে থেকে গ্যাসের ভর্তুকি ছেড়ে দেওয়ার প্রচারের ফলে গত আর্থিক বছরে (২০১৪-’১৫) প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি বাবদ সরকারকে ৪০ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা মেটাতে হয়েছিল।

এ বছর ভর্তুকি বাবদ ব্যয় তার অর্ধেকে এসে পৌঁছবে বলে অনুমান। কারণ বিশ্ব বাজারে তেলের দাম এতটাই কমে গিয়েছে, যা গত ছয় বছরে সর্বনিম্ন। চলতি অর্থ বছরের প্রথম ছ’মাসে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি বাবদ ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা।

এই সংক্রান্ত আরও খবর...

রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি সরাসরি ব্যাঙ্কে জমার প্রক্রিয়া শুরু রাজ্যে

রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি ছাড়েননি মোদীর মন্ত্রীরাই

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy