শীর্ষ আদালত গঠিত অভ্যন্তরীণ কমিটির রিপোর্টকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেছিলেন নগদকাণ্ডে নাম জড়ানো বিচারপতি যশবন্ত বর্মা। কিন্তু বিচারপতির ওই আর্জি খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং বিচারপতি এজি মসীহর বেঞ্চ জানায়, নিয়ম মেনেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল এবং তার পর যে ভাবে তদন্তপ্রক্রিয়া চলেছিল, তার মধ্যে অবৈধ কিছু হয়নি।
চলতি বছর দোলের দিন দিল্লি হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি বর্মার বাসভবনের গুদামে আগুন লেগে যায়। দমকলকর্মীরা আগুন নেবাতে যাওয়ার পরে প্রথম নোটের কথা জানা যায়। দাবি করা হয়, সেখানে আধপোড়া নোটের বান্ডিল দেখা গিয়েছে। সেই থেকে বিতর্কের সূত্রপাত। বিতর্কের আবহেই দিল্লি হাই কোর্ট থেকে ওই বিচারপতিকে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে বদলি করা হয়। পরবর্তী সময়ে মামলার জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। শীর্ষ আদালত ওই ঘটনার অনুসন্ধানের জন্য হাই কোর্টের তিন বিচারপতিকে নিয়ে একটি অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে। গত ৩ মে ওই অনুসন্ধান কমিটি একটি মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট জমা দেয় সুপ্রিম কোর্টে।
ওই সময় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন সঞ্জীব খন্না। অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্ট খতিয়ে দেখে তিনিই অবসরগ্রহণের কয়েক দিন আগে বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট-এর (অপসারণ) সুপারিশ করে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছিলেন। যদিও রিপোর্টে কী উল্লেখ রয়েছে, তা প্রকাশ্যে আসেনি। তার পর অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্ট খারিজের আবেদন জানিয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিচারপতি বর্মা।
বিচারপতি বর্মার হয়ে আদালতে সওয়াল করেছিলেন আইনজীবী কপিল সিব্বল। গত শুনানিতে অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশকে অসাংবিধানিক বলে দাবি করেন সিব্বল। তাঁর বক্তব্য ছিল, এই ভাবে অপসারণপ্রক্রিয়ার সুপারিশ করা একটি বিপজ্জনক নজির সৃষ্টি করবে। তবে গত ৩০ জুলাই রায়দান স্থগিত রেখেছিল দুই বিচারপতির বেঞ্চ।
শুনানিতে বিচারপতি বর্মাকে একাধিক প্রশ্ন করেছিল শীর্ষ আদালত। বিচারপতি আগে কেন অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্টের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হননি, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। গত ২৮ জুলাইয়ের শুনানিতে দুই বিচারপতির বেঞ্চ প্রশ্ন করে, কেন তদন্ত রিপোর্টটি মামলার নথিতে নেই? জবাবে বিচারপতি বর্মার আইনজীবী সিব্বল জানান, ওই নথি চাইলে যে কেউ দেখতে পারেন। পাল্টা বিচারপতি দত্ত বলেন, ‘‘তবুও মামলার নথির সঙ্গে সেটি থাকা জরুরি ছিল।’’ এ ভাবে মামলা দায়ের করাই উচিত হয়নি বলে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্ট।
নগদকাণ্ডে অভিযুক্ত ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মার ইমপিচমেন্ট (বরখাস্ত) নিয়ে রাজ্যসভায় বিরোধী সাংসদদের আনা প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছিলেন পদত্যাগী উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়। সংসদের উচ্চ কক্ষ রাজ্যসভায় বিরোধী সাংসদদের আনা প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ধনখড় ইস্তফা দেওয়ার পরে সেই প্রক্রিয়া বাতিল হতে চলেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক রাজ্যসভা সাংসদের সই বা রাজ্যসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়ের অনুমোদন মিললেও পরবর্তী সাংবধানিক প্রক্রিয়া শুরুর জন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে সেটি সংসদের উচ্চকক্ষে পেশ করা হয়নি। ফলে গোটা প্রক্রিয়াটি বাতিল করা হচ্ছে। রাজ্যসভার নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব না-নেওয়া পর্যন্ত ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে লোকসভায় এই প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। অন্তত ১০০ জন সাংসদ ইমপিচমেন্ট প্রস্তাবে সই করে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে তা জমা দেওয়ার পরে স্পিকার তা গ্রহণযোগ্য মনে করলে বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করবেন।
সেপ্টেম্বরে নতুন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত বা মনোনীত হওয়ার পরে রাজ্যসভাতেও এই প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। তবে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি বর্মার আর্জি খারিজের পর এই ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।