নাগরিক পঞ্জি নবীকরণ নিয়ে তাঁদের দলের ‘অযথা রাজনীতি’র প্রতিবাদে অসম প্রদেশ তৃণমূল সভাপতি দীপেন পাঠক-সহ রাজ্য কমিটির সিংহভাগ সদস্যই পদত্যাগ করলেন। ই-মেল করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। দীপেনবাবুর বক্তব্য, ‘‘রাজ্যের পরিস্থিতি না বুঝেই এ ভাবে অন্যায় কর্মসূচি হাতে নিয়েছে তৃণমূল। আমাদের পক্ষে এই কাজকে সমর্থন করা সম্ভব নয় বলেই দল ছাড়লাম।’’
পদত্যাগীদের কথায়, ‘‘দিদি ‘বাঙালি খেদাও’ চলছে বলে মন্তব্য করায় এখানকার বাঙালিরাই সমস্যায় পড়েছেন। এমন কোনও ঘটনা এখনও ঘটেনি। তৃণমূল ভোটের সময় ছাড়া অন্য কোনও সময় অসমের কথা ভাবে না। আমরা অসমের বিভিন্ন সমস্যা সংসদে তোলার জন্য অতীতে বহুবার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছি। কিন্তু তাঁরা পাত্তা দেয়নি। এখন শুধুই ভোটের স্বার্থে অসম ও পশ্চিমবঙ্গে বাঙালির ভোট আদায় করতে এ সব করা হচ্ছে।’’
তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দীপেন আমাদের দলের সভাপতি ছিলেন না। স্থানীয় নেতারা কী বলল তাতে কিছু যায় আসে না। এক বার তিনি ভোটে লড়েছিলেন। আমরা আমাদের নতুন ইনিংস শুরু করেছি। এটা রাজনীতির সময় নয়। যে ভাবে বিজেপি দেশ চালাচ্ছে, তা আগে হয়নি।’’
এ দিকে, শিলচরের মতোই গুয়াহাটিতেও তৃণমূলের প্রতিনিধিদের শহরে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলেই ঠিক হয়েছে। আগামী কাল তৃণমূলের প্রতিনিধি দলটির শিলচর থেকে গুয়াহাটি আসার কথা। আজ গুয়াহাটির পুলিশ কমিশনার হীরেন নাথ জানান, শহরে ইতিমধ্যেই ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। পাঁচ জনের বেশি লোকের সমাবেশ ও বিনা অনুমতিতে সভা করতে দেওয়া হবে না।
এরই পাশাপাশি, আজ গুয়াহাটির পানবাজার ও মরিগাঁওরে জাগি রোড থানায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে আরও দু’টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এক সময় তৃণমূলের আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক থাকা কৈলাশ শর্মাও রাজ্যে ‘সাম্প্রদায়িকতা’ ছড়ানোর অভিযোগে আজ লতাশিল থানায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘আমার নামে অসমে গিয়ে এফআইআর করেছে, আমি তো বসে আছি বাংলায়। অসমে এফআইআর করলে কী করব। ও তো রোজই একটা করে এফআইআর করে। অরবিন্দ কেজরিবালের বাড়িতে গিয়েছিলাম, তখনও তো আমাদের চারজন মন্ত্রীর নামে এফআইআর করেছিল। এফআইআর কী একতরফা হয়? যেমন দেখাবে তেমন দেখবে, তারা অপেক্ষা করুক। লেট দেম ফেস দ্য মিউজ়িক। এতে আমাদের ঘাবড়ানোর কোনও কারণ নেই। মানুষের জন্য কথা বলতে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে লক্ষ এফআইআর করলেও আমার কিছু যায় আসে না।’’
চরাইদেও জেলার সাপেখাতি এলাকায় মমতার মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে রাস্তায় বিক্ষোভ দেখায় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কুশপুতুল পোড়ানো হয়। তেজপুরেও মমতার ছবি পোড়ানো হয়েছে। পরোয়া চারিয়ালিতে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে জাতীয়তাবাদী যুব সম্মেলন তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায়। রাজ্যে অশান্তি না ছড়ানোর জন্য তৃণমূলকে হুঁশিয়ারি দেয় তারা। বৃহত্তর অসমিয়া মহিলা মঞ্চ এনআরসি নিয়ে রাজনীতি না করার জন্য তৃণমূলের কাছে আর্জি জানিয়েছে। গুয়াহাটির আমবাড়িতে রাস্তায় মমতার কুশপুতুল পোড়ায় বৃহত্তর কামরূপ মহিলা মঞ্চ। তাদের দাবি, রাজনৈতিক স্বার্থে অসমের মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করছে তৃণমূল।