Advertisement
০৪ অক্টোবর ২০২৪
OFB

বিএসএনএলের পথেই অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি! ধর্মঘটী কর্মীদের নিয়ে বৈঠকে সরকার

দেশের ৪১টি সমরাস্ত্র উৎপাদন কারখানায় এক মাসব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে তিনটি কর্মী সংগঠন।

বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে আন্দোলন। —নিজস্ব চিত্র।

বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে আন্দোলন। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৯ ১৮:০৮
Share: Save:

বেসরকারিকরণের প্রতিবাদে, অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিতে চলা অচলাবস্থা কাটাতে শুক্রবার নয়াদিল্লির সাউথ ব্লকে কর্মীদের তিনটি সংগঠনের নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন প্রতিরক্ষা উৎপাদন সচিব অজয় কুমার। আগামী সপ্তাহে তিনি প্রতিরক্ষা সচিবের দায়িত্ব নেবেন। বৈঠকে রয়েছেন অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড (ওএফবি)-এর চেয়ারম্যান সৌরভ কুমার। বৈঠক শেষে কর্মী সংগঠনের অন্যতম নেতা শ্রীকুমার জানান, এ দিনের বৈঠকে কোনও সমাধান সূত্র মেলেনি। ধর্মঘট যেমন চলছিল, তেমনই চলবে।

গত ২০ অগস্ট থেকে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের সারা দেশের ৪১টি সমরাস্ত্র উৎপাদন কারখানায় এক মাসব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে তিনটি কর্মী সংগঠন। এর মধ্যে রয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি অনুমোদিত সংগঠন ভারতীয় প্রতিরক্ষা মজদুর সঙ্ঘ (ভিপিএমএস)।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক হিসাবে স্বীকৃত অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের ইতিহাস ২১৮ বছরের পুরনো। ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনস্থ এই সংস্থা ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর সমরাস্ত্রের চাহিদার ৫০ শতাংশের বেশি যোগান দিয়ে এসেছে। সংস্থার সমরাস্ত্র বিক্রি হয় বিদেশেও। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস অনুমোদিত ইন্ডিয়ান ডিফেন্স ওয়ার্কার্স ফেডারেশন (আইএনডিডব্লিউএফ), বামেদের অল ইন্ডিয়া ডিফেন্স এমপ্লয়িজ ফেডারেশন (এআইডিইএফ) এবং বিজেপির ভারতীয় প্রতিরক্ষা মজদুর সঙ্ঘের নেতৃত্বের অভিযোগ, লোকসভা নির্বাচনে জিতে এসেই বিজেপি সরকার অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডকে ধাপে ধাপে বেসরকারিকরণের চেষ্টা করছে।

আন্দোলনের জেরে অচলাবস্থা অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিতে।

আরও পড়ুন: এক মাসে দু’বার, ফের ফিক্সড ডিপোজিটে সুদ কমাল এসবিআই, চাপ বাড়ছে মধ্যবিত্তের​

এআইডিইএফ-এর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সি শ্রীকুমারের অভিযোগ, সরকার প্রথম ধাপে সংস্থাকে পাব্লিক সেক্টর আন্ডারটেকিংয়ে পরিণত করতে চায়। তিনি বিএসএনএল এর উদাহরণ টেনে বলেন, ‘‘কী ভাবে বেসরকারি সংস্থাকে সুবিধা করে দিতে বিএসএনএলকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে সরকার।’’ ঠিক একই ভাবে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনেও বেসরকারি সংস্থাকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই এই পরিকল্পনা বলে অভিযোগ তিনটি সংগঠনের যৌথ মঞ্চের নেতৃত্বের।

সারা দেশের ৪১টি কারখানায় কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৮২ হাজার। তার সঙ্গে রয়েছেন প্রায় ৪০ হাজার চুক্তিভিত্তিক কর্মী। আন্দোলনকারীদের দাবি, সরাসরি যুক্ত এই লক্ষাধিক কর্মী ছাড়াও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরির শিল্পের সঙ্গে যুক্ত আরও বেশ কয়েক হাজার মানুষের রুজি রুটি। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, বেসরকারিকরণ হলে কয়েক লাখ মানুষের রোজগারের সংস্থান অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

আন্দোলনকারীদের দাবি, ২০১৬ সাল থেকে বিজেপি সরকারের আমল থেকেই বেসরকারি সংস্থাকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরির লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। মহিন্দ্রা, লারসেন অ্যান্ড টুব্রো, ভারত ফোর্সের মতো বড় সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই সেই লাইসেন্স পেয়েছে। তারা সবাই বিদেশি লগ্নির ব্যবস্থাও করে ফেলেছে। কিন্তু এখনও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সরাসরি নিয়ন্ত্রণাধীন অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড ভারতের বাজার দখল করে থাকায় তারা উৎপাদন শুরু করতে পারেনি। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ওই বেসরকারি সংস্থাকে বরাত পাইয়ে দিতেই ধাপে ধাপে বেসরকারিকরণের পথে হাঁটছে সরকার।

সি শ্রীকুমার অন্য দুই সংগঠনের সঙ্গে যৌথ ঘোষণাপত্রে জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই সরকার উত্তরপ্রদেশের করোয়াতে ইন্ডো রাশিয়ান রাইফেলস প্রাইভেট লিমিটেড নামে সংস্থার হাতে একে-২০৩ অ্যাসল্ট রাইফেল তৈরির বরাত দিয়েছে। এটা বেসরকারিকরণের পথে একটি ধাপ মাত্র।

রোজগারের সংস্থান অনিশ্চিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা।

যদিও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছে রয়েছে পাল্টা যুক্তিও। মন্ত্রকের একাংশের অভিযোগ, সাম্প্রতিক সময়ে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের তৈরি সমরাস্ত্রের মান খারাপ। সে কারণে সেনাকর্মীদের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। ২০১৬ সালে অতিরিক্ত কম্প্রোটোলার জেনারেল (প্রতিরক্ষা অ্যাকাউন্ট) এ কে সাক্সেনা একটি রিপোর্ট পেশ করে দাবি করেন, যুদ্ধের জামাকাপড় থেকে শুরু করে ট্যাঙ্ক— সমস্ত ক্ষেত্রেই অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর কাছ থেকে বাজারের চেয়ে অনেক বেশি দাম নেয়। রাশিয়ায় তৈরি টি-৯০ ট্যাঙ্কের থেকে বেশি দাম ভারতে ওই প্রযুক্তিতে তৈরি ট্যাঙ্কের।

যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আন্দোলনকারী কর্মীরা। তাঁদের পাল্টা অভিযোগ, ধনুষ, ঘাতকের মতো প্রথম সারির সমরাস্ত্র তৈরি করা অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিকে দুর্বল করতে ইতিমধ্যেই ওএফবি-র ২৭৫টি পণ্যকে কোর থেকে নন কোর ঘোষণা করা হয়েছে। যার ফলে ওই পণ্য যে কোনও সংস্থা তৈরি করতে পারবে। সংস্থার কর্মী সংখ্যা ১ লাখ ৭২ হাজার থেকে ধাপে ধাপে কমিয়ে ৮২ হাজার করা হয়েছে সংস্থাকে দুর্বল করতে, অভিযোগ আন্দোলনকারীদের। অভিযোগ, সশস্ত্র বাহিনীর চাহিদার মাত্র ৩৫ শতাংশ এখন বরাত দেওয়া হচ্ছে ওএফবি-কে। বাকিটা আমদানি করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ৭০ বছরে ‘অভূতপূর্ব’ আর্থিক সঙ্কট! মোদী সরকারের অস্বস্তি বাড়ালেন নীতি আয়োগ কর্তা

তবে আন্দোলনকারীদের সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ওএফবি-র চেয়ারম্যান সৌরভ কুমার। তিনি জানিয়েছেন, ‘‘ওএফবি-কে আরও শক্তিশালী করতে, আরও লাভজনক এবং বিদেশে রফতানী করার মত উপযুক্ত করে তুলতেই এই সিদ্ধান্ত।”

আন্দোলনের নেতৃত্বের দাবি, এর আগে প্রণব মুখোপাধ্যায়, এ কে অ্যান্টনি, এমনকি মনোহর পর্রীকরও নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন যে, ওএফবি-র বেসরকারিকরণ করা হবে না। অভিযোগ, এই সরকার ক্ষমতায় আসার পরে বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত জোরদার হয়। সে কথা জানতে পেরে এর আগে সরকারের সঙ্গে দু’বার কর্মী সংগঠনগুলি বৈঠক করেছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত থেকে সরতে রাজি নয় সরকার।

ছবি: পিটিআই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ordnance Factory OFB Strike Russia Defence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE