E-Paper

সুপ্রিম কোর্টকে নিশানা, ধনখড় বিরোধী-রোষে

সুপ্রিম কোর্টকে ‘সুপার পার্লামেন্ট’ তকমা দিয়ে উপরাষ্ট্রপতি বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, সংবিধানের ১৪২তম অনুচ্ছেদে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ ক্ষমতা ‘পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র’-র সমান হয়ে উঠেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:৩৩
জগদীপ ধনখড়।

জগদীপ ধনখড়। —ফাইল চিত্র।

সুপ্রিম কোর্টকে তোপ দেগে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় বিরোধী শিবির ও প্রবীণ আইনজীবীদের রোষের মুখে পড়লেন। বিরোধী শিবির ও আইনজীবীদের অভিযোগ, এর আগে অন্য কোনও উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে এমন রাজনৈতিক মন্তব্য করতে দেখা যায়নি।

সুপ্রিম কোর্টকে ‘সুপার পার্লামেন্ট’ তকমা দিয়ে উপরাষ্ট্রপতি বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, সংবিধানের ১৪২তম অনুচ্ছেদে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ ক্ষমতা ‘পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র’-র সমান হয়ে উঠেছে। উপরাষ্ট্রপতির ক্ষোভের কারণ ছিল, সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাজ্যের বিধানসভায় পাশ হওয়া বিলে অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে রায় দিয়েছে। তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আর এন রবি দশটি বিল আটকে বসে থাকার জন্য তাঁকে তোপ দেগে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, রাজ্যপাল কোনও বিল রাষ্ট্রপতিকে পাঠালে তাঁকেও তিন মাসের মধ্যে বিল নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। উপরাষ্ট্রপতি প্রশ্ন তুলেছিলেন, রাষ্ট্রপতিকে নির্দেশ দেওয়ার এক্তিয়ার কি সুপ্রিম
কোর্টের রয়েছে?

আজ বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, উপরাষ্ট্রপতির মতো আলঙ্কারিক পদে বসে থাকা ব্যক্তি, যাঁর রাজ্যসভা পরিচালনা ছাড়া আর কোনও কাজ নেই, তাঁর সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রশ্ন তোলার কী এক্তিয়ার রয়েছে? জগদীপ ধনখড় ব্যক্তিগত ভাবে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সমালোচনা করতেই পারেন। কিন্তু সরকারের দিক থেকে সমালোচনা করতে হলে কোনও মন্ত্রী বা সরকারি আইনজীবীর তা করা উচিত। সরকারের নীতি, রাজনীতি ও আদালতের রায়ের ক্ষেত্রে উপরাষ্ট্রপতির কোনও ভূমিকাই নেই।

প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, ‘‘সরকারি প্রশাসন তার কাজ ঠিক মতো না করলে বিচারবিভাগকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। সেটা তার অধিকার। বিচারবি‌ভাগের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের জন্য জরুরি। রাষ্ট্রপতি একটা আলঙ্কারিক পদ। তিনি মন্ত্রিসভার পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেন। তাঁর ব্যক্তিগত কোনও ক্ষমতা নেই। আর রাজ্যসভার কোনও চেয়ারম্যানকেও এমন রাজনৈতিক মন্তব্য করতে দেখিনি। আমি অবাক, দুঃখিতও।’’ উপরাষ্ট্রপতি বলেছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট কী ভাবে রাষ্ট্রপতিকে নির্দেশ দিতে পারে? প্রবীণ আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়ের মন্তব্য, ‘‘কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন।’’ আইনজীবী করুণা নন্দীর মতে, ‘‘জগদীপ ধনখড় লাগাতার তাঁর পদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করছেন।’’

কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, ডিএমকে, সিপিএম থেকে শুরু করে সমস্ত বিরোধী দলের নেতারা আজ উপরাষ্ট্রপতির মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী সলমন খুরশিদ বলেছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায় চূড়ান্ত। তাতে কোনও আপত্তি থাকলে পর্যালোচনার জন্য আবেদন করা যায়। কিন্তু সেই রায় পক্ষে না গেলেও তা মানতে হবে।’’

তৃণমূল সাংসদ, আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘উপরাষ্ট্রপতির মন্তব্য খুবই আপত্তিজনক। প্রায় আদালত অবমাননার কাছাকাছি। সাংবিধানিক পদে আসীন ব্যক্তি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে সম্মান করবেন, এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু উপরাষ্ট্রপতি লাগাতার সুপ্রিম কোর্টকে অসম্মান করছেন। এটা খুবই উদ্বেগজনক প্রবণতা।’’

বিরোধীরা ইতিমধ্যেই উপরাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন। নিয়মের ত্রুটি দেখিয়ে তা খারিজ করে দেওয়া হয়। ফের প্রস্তাব আনা হবে বলে সিদ্ধান্ত হলেও সংসদে বাজেট অধিবেশনের সময় জগদীপ ধনখড়ের অসুস্থতার জন্য অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়নি। সিপিএম নেতা টমাস আইজ়্যাকের বক্তব্য, জগদীপ ধনখড়ের মতো ব্যক্তিদের থেকেই গণতন্ত্রের বিপদ রয়েছে, যাঁরা সংবিধানের মূল কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jagdeep Dhankhar Supreme Court of India

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy