Advertisement
E-Paper

হামলার বছর দুয়েক আগেই পাকিস্তান থেকে ভারতে আসে জঙ্গিরা! কী ভাবে পহেলগাঁও হামলাকারীদের পরিচয় মিলল?

সূত্রের খবর, ‘অপারেশন মহাদেব’-এ নিহত জঙ্গি সুলেমান এবং হামজ়ার দেহ থেকে দু’টি ল্যামিনেট করা ভোটার আইডি স্লিপ মিলেছে। সেগুলি ইস্যু করেছিল পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২৫ ১৩:০৯
পহেলগাঁও হামলায় জড়িত থাকা জঙ্গিদের নিকেশ করার পরে দাচিগামের ঘটনাস্থল থেকে মিলেছে বেশ কিছু সূত্রপ্রমাণ।

পহেলগাঁও হামলায় জড়িত থাকা জঙ্গিদের নিকেশ করার পরে দাচিগামের ঘটনাস্থল থেকে মিলেছে বেশ কিছু সূত্রপ্রমাণ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

গত ২৮ জুলাই জম্মু ও কাশ্মীরের দাচিগামে ‘অপারেশন মহাদেব’-এর সময়ে নিহত হয়েছিল তিন জঙ্গি। তারা পহেলগাঁও হামলায় জড়িত ছিল বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। অভিযানের পরে ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ এবং সেনা যে তথ্য পেয়েছে, তা থেকে প্রমাণিত যে ওই তিন জন পাকিস্তানের নাগরিক। তারা লশকর-এ-ত্যায়বার সদস্য ছিল বলেও প্রমাণ মিলেছে। ওই তিন জনের কাছ থেকে পাকিস্তানের ভোটার পরিচয়পত্র, করাচিতে তৈরি চকোলেট এবং একটি মেমারি কার্ড মিলেছে, যাতে তাদের আঙুলের বায়োমেট্রিক ছাপ রয়েছে বলে সূত্রের খবর।

‘অপারেশন মহাদেব’-এ নিহত হয় তিন জঙ্গি। তারা হল সুলেমান শাহ ওরফে ফয়জ়ল জাট, আবু হামজ়া ওরফে আফগান এবং ইয়াসির ওরফে জিবরান। সুলেমান লশকরের এক জন এ প্লাস প্লাস কমান্ডার ছিল। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, সুলেমানই পহেলগাঁও হামলার মূলচক্রী। হামলার অন্যতম প্রধান বন্দুকবাজও ছিল। হামজ়া এবং ইয়াসির এ-গ্রেড লশকর কমান্ডার ছিল। পহেলগাঁওয়ের হামলায় হামজ়া দ্বিতীয় এবং ইয়াসির তৃতীয় বন্দুকবাজ ছিল।

কাশ্মীরের দাচিগামে তিন জঙ্গিকে এনকাউন্টারের পরে ঘটনাস্থল থেকে প্রমাণ হিসেবে কী কী মিলেছে, তা সম্প্রতি প্রকাশ করেছে যৌথ অভিযানকারী সেনা, জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ এবং সিআরপিএফ। সূত্রের খবর, সুলেমান এবং হামজ়ার দেহ থেকে দু’টি ল্যামিনেট করা ভোটার আইডি স্লিপ মিলেছে। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন সেগুলি ইস্যু করেছে। পরিচয়পত্রে যে সিরিয়াল নম্বর রয়েছে, তার একটি (এনএ-১২৫) লাহোরের। অন্যটি (এনএ-৭৯) পাকিস্তানেরই গুজরানওয়ালার। অর্থাৎ এক জন লাহোরের ভোটার, দ্বিতীয় জন গুজরানওয়ালার। জঙ্গিদের স্যাটেলাইট ফোন থেকে একটি মেমরি কার্ড মিলেছে। ফোনটি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ওই মেমরি কার্ডে রয়েছে এনএডিআরএ-র (ন্যাশনাল ডেটাবেস অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অথরিটি) তথ্য। তা থেকে তিন জঙ্গির বায়োমেট্রিক তথ্যও মিলেছে। কী রয়েছে সেখানে? জঙ্গিদের আঙুলের ছাপ, মুখের অবয়ব, পরিবারের বিষয়ে তথ্য, যা থেকে স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে যে, তিন জনেই পাকিস্তানের বাসিন্দা। দু’টি ঠিকানাও মিলেছে সেই মেমারি কার্ড থেকে। একটি ঠিকানা কাসুর জেলার চাঙ্গা মাঙ্গার, দ্বিতীয়টি পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রাওয়ালকোটের কোইয়ান গ্রামের।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, জঙ্গিদের ব্যাগে ছিল ‘ক্যান্ডিল্যান্ড’ এবং ‘চকোম্যাক্স’, দু’টি চকোলেটের মোড়ক। এই দু’টি চকোলেটই করাচিতে তৈরি হয়। মোড়কের গায়ে যে লট নম্বর ছিল, তা থেকে জানা গিয়েছে, ২০২৪ সালের মে মাসে ওই চকোলেটগুলি পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মুজফ্‌ফরাবাদে পাঠানো হয়েছে। জঙ্গিদের এনকাউন্টারের স্থল থেকে যে প্রমাণ মিলেছে, তা থেকে জানা গিয়েছে, ২০২২ সালের মে মাসে তারা গুরেজ় সেক্টরের কাছ দিয়ে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে এ দেশে অনুপ্রবেশ করেছিল। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, সেই সময়ই প্রথম তারা পাকিস্তানে বসে রেডিয়ো বার্তা পাঠানোর চেষ্টা করে। তার পরেই এ দেশে অনুপ্রবেশ করে। ২০২৫ সালের ২১ এপ্রিল তারা পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকার দু’কিলোমিটার দূরে একটি ‘ধোক’-এ (অস্থায়ী কুটির) আশ্রয় নেয়। পারভেজ এবং বশির আহমেদ জোঠার নামে দুই কাশ্মীরিকে আটক করেছিল পুলিশ। তাঁরা জেরায় জানিয়েছেন, জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়েছিলেন তাঁরা। রান্না করে খেতেও দিয়েছিলেন। ২২ এপ্রিল হেঁটে হেঁটে বৈসরন উপত্যকায় যায় জঙ্গিরা। সেখানে গুলি চালিয়ে ২৬ জনকে হত্যা করে তারা। তার পরেই উত্তর-পূর্বে দাচিগামে পালিয়ে যায়। সুলেমানের থেকে মেলা ঘড়ির জিপিএস দেখে এই বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।

জঙ্গিদের নিকেশ করার পরে ঘটনাস্থল থেকে যে অস্ত্র মিলেছে, তা থেকে গুলি চালানো হয়েছিল পহেলগাঁওয়ে, সেই প্রমাণও মিলেছে। লোকসভায় সে কথা জানিয়েছেন খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

এর পরেও পহেলগাঁও হামলার পরে তিন জঙ্গির যে স্কেচ পুলিশ প্রকাশ করেছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। গত ২৪ এপ্রিল হাশিম মুসা, আলি ভাই ওরফে তালহা এবং আদিল হুসেন ঠোকরের স্কেচ প্রকাশ করে পুলিশ। ‘অপারেশন মহাদেব’-এর পরে এনআইএ (জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা) জানায়, ২০২৪ সালে একটি এনকাউন্টারে নিহত এক জনের ফোন থেকে ওই তিন জনের ছবি মিলেছিল। তাদের সঙ্গে পহেলগাঁও জঙ্গিদের মিল নেই।

Pahalgam Terror Attack operation mahadev Operation Sindoor Pakistan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy