চিন ভারতীয় ভূখণ্ডের কিছু এলাকা দখল করেছে বলে অভিযোগ করে সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনার মুখে পড়লেন রাহুল গান্ধী। রবিবার একটি মানহানির মামলার শুনানিতে রাহুলের উদ্দেশে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের প্রশ্ন, “আপনি কী করে জানলেন যে চিন ভারতের ২০০০ স্কোয়্যার কিলোমিটার জায়গা দখল করে নিয়েছে? আপনি কি সেখানে ছিলেন? আপনার কাছে কি কোনও বিশ্বাসযোগ্য তথ্যপ্রমাণ রয়েছে?” একই সঙ্গে বিচারপতির সংযোজন, “আপনি যদি প্রকৃত ভারতীয় হতেন, তা হলে এই মন্তব্য করতেন না।”
২০২৩ সালে কংগ্রেসের ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র সময় রাহুল দাবি করেছিলেন যে, সেনার এক প্রাক্তন আধিকারিক তাঁকে জানিয়েছেন, চিন ভারতীয় ভূখণ্ডের ২০০০ স্কোয়্যার কিলোমিটার দখল করে নিয়েছে। এই মন্তব্যের জন্য লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুলের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের হয়। মামলাকারী অভিযোগ করেন, দেশের সেনাবাহিনীকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন কংগ্রেস নেতা। এই মামলার বিরুদ্ধে ইলাহাবাদ হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রাহুল। কিন্তু হাই কোর্ট তাঁর আর্জি খারিজ করে দেয়। তার পর মানহানির মামলা খারিজ করতে চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রাহুল। সোমবার এই মামলাটির শুনানি হয় শীর্ষ আদালতের বিচারপতি দত্ত এবং বিচারপতি অগস্টিন জর্জ মসিহ-র বেঞ্চে।
দুই বিচারপতির বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, লোকসভার বিরোধী দলনেতা হিসাবে রাহুল এই বিষয়গুলি সংসদে বলতে পারতেন। কিন্তু তা না-করে তিনি সমাজমাধ্যমে এই বিষয়ে মন্তব্য করেন। এই মামলায় স্থগিতাদেশ দিয়ে মামলাকারী এবং উত্তরপ্রদেশ সরকারকে নোটিস দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
কী বলছিলেন রাহুল
২০২৩ সালে কংগ্রেসের ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র সময় রাহুল বলেছিলেন, “এটা খুবই স্পষ্ট যে চিন আমাদের জমিতে বসে রয়েছে। এটা আমাদের সহ্য করা উচিত নয়। প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদী) দেশের একমাত্র ব্যক্তি, যিনি মনে করেন চিন ভারতের কোনও জমি দখল করেনি। আমি সম্প্রতি কয়েক জন প্রাক্তন সেনা আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করি। তাঁরা এবং লাদাখের একটি প্রতিনিধিদল স্পষ্ট জানায়, ভারতের ২০০০ স্কোয়্যার কিলোমিটার জায়গা চিন দখল করে নিয়েছে।” রাহুলের এই মন্তব্যের পরেই তাঁর নিন্দা করেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি রাহুলের বিরুদ্ধে ‘ভুল তথ্য’ দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। এ-ও জানান, ১৯৬২ সালের ভারত-চিন যুদ্ধের সময় ভারত চিনের কাছে যে জায়গা খুইয়েছিল, তাঁকে সাম্প্রতিক ক্ষয়ক্ষতি হিসাবে দেখাতে চাইছেন রাহুল। প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বা এলএসি পেরিয়ে পূর্ব লাদাখের বিভিন্ন এলাকায় অনুপ্রবেশের অভিযোগ উঠেছিল চিনা ফৌজের বিরুদ্ধে। উত্তেজনার আবহে ওই বছরের ১৫ জুন গলওয়ানে চিনা হামলায় নিহত হয়েছিলেন ২০ জন ভারতীয় সেনা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতীয় জওয়ানদের পাল্টা হামলায় বেশ কয়েক জন চিনা সেনাও নিহত হয়েছিলেন।