Advertisement
E-Paper

কুলভূষণে স্বস্তি সাময়িক, চিন্তা বাড়ল ভারতের

ভারতের আবেদনে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানে কুলভূষণ যাদবের মৃত্যুদণ্ডের উপরে স্থগিতাদেশ জারি করেছে ‘ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস’। গত কাল এ নিয়ে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে চিঠিও দিয়েছে তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৭ ০৪:৩৪

ভারতের আবেদনে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানে কুলভূষণ যাদবের মৃত্যুদণ্ডের উপরে স্থগিতাদেশ জারি করেছে ‘ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস’। গত কাল এ নিয়ে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে চিঠিও দিয়েছে তারা। রাষ্ট্রপুঞ্জের অঙ্গ এই আন্তর্জাতিক আদালতের স্থগিতাদেশ নওয়াজ তাঁর দেশে কার্যকর করাতে পারলে সেটা ভারতের পক্ষে অবশ্যই স্বস্তির। কারণ সে ক্ষেত্রে হঠাৎ করে ভারতের এই প্রাক্তন নৌসেনা অফিসারের প্রাণদণ্ড কার্যকর হওয়ার আশঙ্কা কমবে। আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কিছুটা চাপও তৈরি করা হবে। কিন্তু বাস্তবের জমিতে ভারতের এতে কতটা লাভ হল সেই প্রশ্নও ভাবাচ্ছে দিল্লিকে।

ভাবনা এক: বিষয়টি এমন নয় যে, আন্তর্জাতিক আদালতের রায় পাকিস্তান বা কোনও রাষ্ট্র মানতে বাধ্য। তাদের কোনও স্থগিতাদেশ বা রায়ে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি হতে পারে। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদও বিষয়টিকে বিবেচনার মধ্যে নেবে। কিন্তু কোনও সার্বভৌম দেশের সর্বোচ্চ আদালত তা মানতে আইনত বাধ্য নয়। গত কাল রাতে ওই স্থগিতাদেশ জারির পরে পাক সেনাপ্রধান কমর বাজওয়ার সঙ্গে আজ দেড় ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে কুলভূষণের বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। কিন্তু ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের পক্ষ থেকে যে স্বর ভেসে আসছে, তাতে ওই স্থগিতাদেশ মানার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন: বিয়েবাড়ি থেকে তুলে নিয়ে তরুণ সেনাকে খুন করল জঙ্গিরা

ভাবনা দুই: নরেন্দ্র মোদী সরকারের অন্দরেই আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার মতো চরম পদক্ষেপ করা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে তৃতীয় পক্ষের কোনও রকম হস্তক্ষেপ বা মধ্যস্থতার সদা বিরোধিতা করে এসেছে নয়াদিল্লি। সম্প্রতি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ভারত-পাক সমস্যা মেটাতে বহুস্তরীয় আলোচনার প্রস্তাব দেওয়াতে রে রে করে উঠেছিল মোদী সরকার। এক বার এই প্যান্ডোরার বাক্সে হাত দিলে তার পরিণাম কী হতে পারে তা সাউথ ব্লকের পোড় খাওয়া আমলাদের অজানা নয়। কাশ্মীরে ‘গণহত্যা’ বা ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’-এর মতো অভিযোগ নিয়ে পাল্টা ইসলামাবাদও একই ভাবে আন্তর্জাতিক আদালতে পৌঁছে যাবে। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হতে চাওয়া ভারতের অস্বস্তি তাতে বাড়বে বৈ কমবে না।

অতীত ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, এর আগে মাত্র এক বারই, ১৯৭১ সালে আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল ভারত। সেটিও ছিল পাকিস্তানেরই বিরুদ্ধে, ভারতের মাটিতে তাদের উড়ানের অধিকার নিয়ে। সেই মামলায় পরাস্ত হতে হয়েছিল নয়াদিল্লিকে। কিন্তু কুলভূষণের ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক দৌত্যে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েই আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছে ভারতকে— এমনটাই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। ভারত যে কিছুটা মরিয়া হয়েই এই কাজ করেছে তা আজ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গোপাল ওয়াগলের কথাতেও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। গোপাল জানিয়েছেন, ‘‘আমরা ষোলো বার কূলভূষণ যাদবের সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ পাকিস্তান সরকারকে জানিয়েছিলাম। তাঁর মায়ের পাকিস্তান যাওয়ার ভিসা চেয়েছিলাম। কিছুই দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়েই আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতের কাছে আবেদন করা হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডে স্থগিতাদেশের কথা জানতে পেরে গত কাল গভীর রাতে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ টুইট করেন, ‘‘স্থগিতাদেশের নির্দেশের খবর শোনার পরই কুলভূষণের মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি এখন অনেকটাই নিশ্চিন্ত।’’ আজ গোপাল বলেন, ‘‘পাকিস্তান যদি তার সিদ্ধান্ত না বদলায় তাহলে এই মৃত্যুদণ্ডকে বেআইনি হিসেবে ঘোষণা করবে আন্তর্জাতিক আদালত। ১৫ মে তারিখে এই নিয়ে বিচার
হবে আন্তর্জাতিক আদালতে।
সেখানে পাকিস্তান জানাক, কী পদক্ষেপ করছে তারা।’’

Kulbhushan Jadhav Execution India Pakistan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy