পাকিস্তানের চরবৃত্তির অভিযোগে ধৃত ভ্লগার জ্যোতি মালহোত্রের কেরল সফরের সূত্রে এ বার বিতর্কে জড়িয়ে পড়ল পিনারাই বিজয়নের সরকার।
রাজ্যে পর্যটনের প্রচারের জন্য জ্যোতিকে চুক্তিতে নিয়োগ করেছিল কেরলের এলডিএফ সরকার, এই তথ্য সামনে আসার পরেই সরব হয়েছে বিজেপি। ওই চুক্তির অঙ্গ হিসেবে কেরলে গিয়ে একাধিক শহরে ঘুরেছিলেন জ্যোতি। বিজেপির দাবি, কেরলে বসেই সমাজ মাধ্যমের পরিচিত মুখ জ্যোতি একাধিক ‘চরে’র সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। ‘দেশদ্রোহিতা’র এই কর্মকাণ্ডের দায় কেরলের বাম সরকারকেও নিতে হবে, এমনই দাবি বিজেপির। রাজ্য সরকারের অবশ্য বক্তব্য, পর্যটনের প্রচারের জন্য নিযুক্ত ব্যক্তি চরবৃত্তির কাজ করবেন, এটা কোনও ভাবেই আগে জানা ছিল না।
তথ্যের অধিকার আইন (আরটিআই) মারফত প্রকাশ্যে এসেছে, কেরলে পর্যটনের প্রচার চালানোর জন্য সমাজ মাধ্যমে প্রভাবশালী ৭ জনের সঙ্গে চুক্তি করেছিল কেরল সরকার। সেই তালিকায় ছিলেন হরিয়ানার জ্যোতিও। তাঁরা ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে এই বছরের মে মাস পর্যন্ত ওই প্রচারের কাজের দায়িত্বে ছিলেন। ঘটনাচক্রে, মে মাসেই চরবৃত্তির দায়ে গ্রেফতার করা হয় জ্যোতিকে। তথ্য অনুযায়ী, পর্যটন সংক্রান্ত কাজের সূত্রে কেরলে কান্নুর, কোঝিকোঢ়, কোচি, আলপ্পুঝা ও মুন্নারে গিয়েছিলেন জ্যোতি। এই সফরের যাবতীয় খরচই ছিল রাজ্য সরকারের। একটি সূত্রের খবর, কেরল থেকেই এক বার পাকিস্তানে সফরে গিয়েছিলেন ওই ইউটিউবার, এমন তথ্যও তাঁর গ্রেফতারির পরে তদন্তে জানা গিয়েছে। এই গোটা বিযয় নিয়েই বাম সরকারকে নিশানা করতে ছাড়ছে না কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি।
দক্ষিণী এই রাজ্যে বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি কে সুরেন্দ্রন আরটিআই-এর তথ্যকে হাতিয়ার করে প্রশ্ন তুলছেন, ‘‘পাকিস্তানের সঙ্গে যার যোগসাজশ আছে, এমন এক জন চরকে কেন আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে এসেছিল কেরল সরকার? কেরলে জ্যোতির সফর ছিল সম্পূর্ণ সরকারি খরচে। সরকারি যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা তিনি ব্যবহার করেছেন। তাঁর কাজকর্মের দায়িত্ব সরকার নেবে না?’’ কেরলে মন্ত্রী হিসেবে পর্যটন দফতরের দায়িত্বে রয়েছেন পি এ মহম্মদ রিয়াজ়, যিনি পারিবারিক সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নের জামাই। সেই সূত্র ধরে সুরেন্দ্রনের তোপ, ‘‘কেরলের নিরাপত্তাকে আপনাদের পারিবারিক বিষয় ভেবে ফেলবেন না!’’
মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন এখন বিদেশে। পর্যটন মন্ত্রী রিয়াজ় মেনে নিয়েছেন, তাঁদের দফতরের আমন্ত্রণে জ্যোতি কেরলে এসেছিলেন। তবে তাঁর বক্তব্য, ‘‘দেশদ্রোহিতার দায়ে যিনি অভিযুক্ত, তাঁকে সরকার আমন্ত্রণ করে এনে যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দেবে— এমন কখনও হতে পারে? সরকার যখন এই দায়িত্ব দিয়েছিল, জ্যোতির এই ধরনের কাজকর্ম সম্পর্কে আমরা অবহিত ছিলাম না। পর্যটনের প্রচারের জন্য, ভাল উদ্দেশ্যেই তাঁকে নিয়োগ করা হয়েছিল।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘জ্যোতির চরবৃত্তির কথা জানা গিয়েছে পরে। এখন সেটা নিয়ে যে প্রচার চালানোর চেষ্টা হচ্ছে, সেটা একেবারেই অর্থহীন।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)