পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ (জেইএম) তাদের নবগঠিত শাখা খুলছে মহিলাদের জন্য। নাম ‘জামাত-উল-মুমিনাত।’ গোয়েন্দা সূত্রে খবর, নিয়োগপ্রক্রিয়া এবং তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা শুরু হয়ে গিয়েছে। মহিলা জঙ্গি তৈরির এই অনলাইন কোর্সে শিক্ষিকার ভূমিকায় থাকবেন জেইএম প্রধান মাসুদ আজ়হারের দুই বোন এবং পুলওয়ামায় সেনাদের উপর হামলায় জড়িত জঙ্গিদের স্ত্রীরা!
জানা যাচ্ছে, জেইএমের ওই অনলাইন কোর্সটির লক্ষ্য হল মৌলবাদী এবং জিহাদি শিক্ষাদানের মাধ্যমে মহিলা ব্রিগেডে আরও বেশি সংখ্যক জঙ্গি নিয়োগ করা। এতে সংগঠন আরও মজবুত হবে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে মহিলাদের প্ররোচিত করে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। আগামী ৮ নভেম্বর থেকে দৈনিক ৪০ মিনিটের ‘সেশন’ হবে। জিহাদি শিক্ষার ভার দেওয়া হয়েছে জেইএম প্রধান মাসুদের দুই বোন, সাদিয়া আজ়হার এবং সামাইরা আজ়হারকে। তাঁরা অনলাইনে ‘শিক্ষাদান’ করবেন। এ ছাড়াও ‘শিক্ষিকা’র ভূমিকায় থাকবেন ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে পুলওয়ামায় সিআরপিএফের কনভয়ে ৪০ জন জওয়ানের মৃত্যুতে জড়িত জঙ্গিদের স্ত্রীরা। উল্লেখ্য, মাসুদের ছোট বোন সাদিয়ার স্বামী জেইএম কমান্ডার ইউসুফ আজহার ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় নিহত হয়েছেন।
মহিলা ‘শিক্ষার্থীদের’ কাছ থেকে অনুদান হিসাবে ৫০০ টাকা করে নেওয়া হবে বলে খবর।নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দাকর্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘এই উদ্যোগে অংশ নিচ্ছেন মাসুদ আজ়হার এবং জইশের কমান্ডারদের মহিলা আত্মীয়েরা। তাঁরা অনলাইন কোর্সে অংশগ্রহণকারীদের জিহাদ এবং ইসলামের দৃষ্টিকোণ দিয়ে তাঁদের কর্তব্য সম্পর্কে শিক্ষা দেবেন।’’
বস্তুত, রাষ্ট্রপুঞ্জ ঘোষিত জঙ্গি আজ়হার গত ৮ অক্টোবর বাহাওয়ালপুরের মারকাজ উসমান-ও-আলিতে তাঁদের মহিলা শাখা ‘জামাত-উল-মুমিনাত’ গঠনের ঘোষণার কয়েক সপ্তাহ পরেই এই খবর জানা গিয়েছে। এ-ও জানা গিয়েছে যে, গত ১৯ অক্টোবর সংগঠনটি পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের রওলকোটে নতুন ইউনিটের জন্য মহিলাদের একত্রিত করতে ‘দুখতারান-ই-ইসলাম’ নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল।
আরও পড়ুন:
কিন্তু ‘ঝুঁকি’ সত্ত্বেও কেন অনলাইনে জিহাদি শিক্ষাদান করতে চাইছে জইশ? সূত্রের খবর, পাকিস্তানের রক্ষণশীল সামাজিক রীতিনীতি মেনে চলতে হয় মহিলাদের। চাইলেই তাঁরা নিজের ইচ্ছায় বাইরে বেরোতে পারেন না। এই বিষয়টি মাথায় রেখে মাসুদের সংগঠন অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে বেছে নিয়েছে। তাদের লক্ষ্য, আইএসআই, হামাস, এলটিটিই-র আদলে একটি মহিলা বাহিনী তৈরি করা, যারা ফিদায়েঁ হামলায় অংশ নিতে পারে।
অন্য দিকে, এই ৫০০ টাকা করে ‘কোর্স ফি’ নেওয়ার মাধ্যমে কী ভাবে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠনগুলি নতুন নতুন ফন্দি খাটিয়ে তহবিল সংগ্রহ করছে, সেটাও প্রণিধানযোগ্য। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, জঙ্গি সংগঠন জেইএম এত দিন সশস্ত্র জিহাদে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করে রেখেছিল। তবে সম্প্রতি মাসুদ এবং তার ভাই তালহা আল-সইফ সংগঠনের কার্যক্ষমতা বাড়াতে মহিলাদের অন্তর্ভুক্তিতে অনুমোদন দিয়েছে।