পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানার প্রত্যাঘাত স্বরূপ ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ পাকিস্তানের কোনও সাধারণ নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বলে দাবি করেছে ভারত। তবে ইসলামাবাদের অভিযোগ, পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের রাজধানী মুজফ্ফরবাদ এবং পঞ্জাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং মসজিদে আঘাত হানা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সাধারণ বাসিন্দারা। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জঙ্গিঘাঁটিতে ভারতীয় সেনার হামলার সময়ে সাধারণ বাসিন্দাদের বড় অংশ পালিয়ে গিয়েছিলেন পাশের একটি পাহাড়ে।
মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ন’টি জায়গায় হানা দেয় ভারতীয় সেনা। ‘এয়ারস্ট্রাইক’-এর সময় স্থানীয় মসজিদগুলো থেকে সাবধান করা হয়েছিল স্থানীয়দের। লাউডস্পিকারে সেই ঘোষণা শুনে তড়িঘড়ি অনেকে নিরাপদ স্থানে সরে যান। রয়টার্সকে মুজফ্ফরবাদের কয়েক জন বাসিন্দা জানান, মুহুর্মুহু বিস্ফোরণের শব্দ পাচ্ছিলেন তাঁরা। ৪৬ বছরের মোহাম্মদ শাহির মীর বলেন, ‘‘তখন অনেক রাত। বিকট আওয়াজ হল। পুরো বাড়িটাই নড়ে উঠল। সকলে ভীষণ ভয় পেয়ে যাই। বাচ্চাদের নিয়ে দ্রুত বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসি আমরা। পাহাড়ের একটি দিকে চলে গিয়েছিলাম আমরা।’’ রয়টার্স জানাচ্ছে, মীরের মতো পাক অধিকৃত কাশ্মীরের এমন অনেক বাসিন্দা বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ জায়গার খোঁজে পাহাড়ের দিকে চলে গিয়েছিলেন। সেখানেই রাত কাটিয়েছেন তাঁরা।
বুধবার ভোরের ঈআলো ফোটে। তখন ‘এয়ার স্ট্রাইক’-এর কথা ছড়িয়ে পড়েছে মুখে মুখে। মুজফ্ফরাবাদের ওই অঞ্চলের মানুষজন একটি মসজিদের কাছে জড়ো হয়েছিলেন। রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, মসজিদটির ছাদ পুরো ভেঙে গিয়েছে। স্থানীয়েরা দাবি করেন, মসজিদের দেওয়াল ধসে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্য দিকে, পাক সেনার তরফে দাবি, ভারতীয় সেনাবাহিনীর হানায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্তত ৪৬ জন জখম হয়েছেন। মীর জানাচ্ছেন, তাঁর পরিবারের সকলে প্রায় চার ঘণ্টা খোলা আকাশের নীচে ছিলেন। ভয় এবং আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন তাঁদের মতো আরও অনেকে। কয়েক জন আহত হয়েছেন। বুধবার সকালে আঘাত নিয়ে স্থানীয় হাসপাতালে যান চিকিৎসার জন্য।
ভারতের হামলার পরেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। তিনি জানান, এই হামলার পর চুপ থাকবে না পাকিস্তান। যোগ্য জবাব দেওয়া হবে। তবে ভারত জানিয়েছে, যে যে জায়গায় বসে ভারতে সন্ত্রাসবাদী হানার পরিকল্পনা হয়েছিল এবং নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সেখানেই ভারত আঘাত হেনেছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কোনও পরিকাঠামোয় আঘাত হানা হয়নি। কোনও সাধারণ নাগরিকেরও ক্ষতি হয়নি।