E-Paper

‘বিশ্বাস করুন, আমরা ভারতীয়’

উরি শহরে ঢোকার মুখে বেঁকে গিয়েছে সিলকোট যাওয়ার রাস্তা। গোটা রাস্তার বাঁকে বাঁকে সেনা পাহারা। পাহাড়ি সরু, ভাঙাচোরা রাস্তার শেষে হঠাৎই পথ আটকে সেনার গেট। ঘন জঙ্গল ও পাহাড়ের মধ্যে দূর থেকে যা হঠাৎ বোঝা মুশকিল।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:২০
কাশ্মীরের উরিতে স্কুলের মাঠে ছাত্রীদের ভলিবল ম্যাচ।

কাশ্মীরের উরিতে স্কুলের মাঠে ছাত্রীদের ভলিবল ম্যাচ। ছবি: অনমিত্র সেনগুপ্ত।

হাউ ইজ় দ্য জোশ!

দাঁড়িয়ে আছি উরির সিলকোট গ্রামের প্রবেশের মুখে বন্ধ দরজার সামনে। পাকিস্তান স্নাইপারদের নিশানায়। সিলকোট গ্রাম শেষ হচ্ছে উরি-চারুন্ধা নালায়। নালা পেরোলেই পাকিস্তান। ছয় বছর আগে ওই চারুন্ধা নালা পেরিয়ে উরিতে ঢুকে সেনাশিবিরে হামলা চালিয়েছিল পাকিস্তানি জঙ্গিরা। বাকিটা ইতিহাস।

গ্রামে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই অচেনা মুখ দেখে বেরিয়ে এসেছিলেন সেনা জওয়ান, আদতে অযোধ্যার বাসিন্দা বিশাল সিংহ। উরি ছবির পরে জনপ্রিয় ‘জোশ’ সংলাপের উল্লেখ করতেই মুচকি হেসে বললেন, ‘‘আমাদের আলাদা করে জোশের দরকার হয় না। আমরা সবসময় প্রস্তুত।’’ জানালেন, গত সোমবার, পহেলগাম হামলার আগের দিনেও অনুপ্রবেশের চেষ্টা হয়েছিল পাকিস্তানের দিকে টিক্কা টপ থেকে। সে রাতে ভারতীয় সেনার হাতে মারা যায় দুই জঙ্গি। জানা গেল, উরির উল্টো দিকে, পাকিস্তানের পাহাড়ে সব মিলিয়ে চারটি বড় মাপের ও দু’টি ছোট মাপের বাঙ্কার রয়েছে পাক সেনার। রয়েছে অন্তত চারটি লঞ্চ প্যাড। পহেলগাম হামলার পর থেকেই যা খালি করে দেওয়া হয়েছে।

উরি শহরে ঢোকার মুখে বেঁকে গিয়েছে সিলকোট যাওয়ার রাস্তা। গোটা রাস্তার বাঁকে বাঁকে সেনা পাহারা। পাহাড়ি সরু, ভাঙাচোরা রাস্তার শেষে হঠাৎই পথ আটকে সেনার গেট। ঘন জঙ্গল ও পাহাড়ের মধ্যে দূর থেকে যা হঠাৎ বোঝা মুশকিল। খালি চোখে দূরের পাহাড়ে চোখে পড়ে পাথরের বাঙ্কার। উড়ছে পাকিস্তানের পতাকা। উপস্থিত সেনারা বললেন, ‘‘বেশিক্ষণ দাঁড়াবেন না, সকলেই স্নাইপারের নিশানায়রয়েছি। হাজার মিটার দূর থেকেও নিশানা হয়ে যেতে পারেন।’’ গত কয়েক বছর ধরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে শান্তিচুক্তি খাতায়-কলমে রয়েছে ঠিকই, কিন্তু ওই সেনা ছাউনির সদস্যদের থেকে জানা গেল, মাঝে মধ্যেই গুলি চালিয়ে নিশানা অনুশীলন হয় বটে।

উরির ওই অংশে তিন দিক থেকে পাহাড়ি ঝোরা এসে মেশে। লোহার বেড়া প্রতি বর্ষায় জলের তোড়ে উপড়ে যায়। ফলে পাক জঙ্গিদের প্রবেশের অন্যতম প্রশস্ত পথ এটি। পহেলগাম কাণ্ডের পরে সীমান্তে জঙ্গি তৎপরতা সাময়িক ভাবে কমে গেলেও, পাক সেনার তৎপরতা বেড়ে গিয়েছে। ভারতের হামলার আশঙ্কায় প্রতিটি চৌকিতে দিন-রাত এক করে পাহারা দিচ্ছেন পাক সেনারা। সতর্ক ভারতীয় সেনাও। জানা গেল, ভারতের দিকের অংশে চৌকিগুলিতে পহেলগাম কাণ্ডের পরে নতুন করে সেনা ও রসদ পাঠানো হয়েছে। বসানো হয়েছে আর্টিলারি গানও। সেনার এক অফিসারের কথায়, ‘‘আমাদের তরফে প্রস্তুতি শেষ। সেনা-অস্ত্র সব তৈরি। এখন কেবল নির্দেশ পেলেই ট্রিগার টেপার অপেক্ষায়।’’

উরি শহর কিন্তু শান্ত। শহরের তিন দিক পাকিস্তান দিয়ে ঘেরা। দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাধলেই মর্টার ছুটে আসে পাহাড়ের ওপার থেকে। গত দুই রাতে গুলির শব্দে মাঝে মধ্যেই ঘুম ভেঙেছে উরিবাসীর। তা সত্ত্বেও উরির থানার উল্টো দিকে সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের মাঠে ভলিবল খেলছিলেন নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্রীরা। খেলার শেষে দশম শ্রেণির উসমার গলাতেই পহেলগাম কাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ ঝরে পড়ে। সমর্থন করে উসমার বন্ধুরা। উসমা নিজে আইপিএস হতে চায়। বলে, ‘‘সাধারণ মানুষের উপরে হামলা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ হলে সব থেকে আগে আমাদের জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। আমরা চাই, পাকিস্তান এ ধরনের হামলা করা বন্ধ করুক।’’ সহকারি প্রশিক্ষক নাভেদ বলেন, ‘‘আমরা সকলেই অস্বস্তির মধ্যে রয়েছি। উত্তেজনা বাড়ুক, তা কোনও ভাবেই কাম্য নয়।’’

উরির খেলার মাঠ থেকে যখন ফিরে আসছিলাম, তখন কিছুটা পিছন থেকেই দৌড়ে আসে উসমা। বলে আবার আসবেন। বলে, ‘‘পহেলগাম কাণ্ড কাশ্মীরিয়ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। বিশ্বাস করুন, আমরা ভারতীয়। জঙ্গিদের সমর্থন করি না। দয়া করে সবাইকে কথাটা জানাবেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Pahalgam Pahalgam Terror Attack Uri

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy