E-Paper

পাশে আছি, তিন ঘণ্টায় মণিপুরকে বার্তা মোদীর

বিস্তর প্রত্যাশা ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফর ঘিরে। কিন্তু পাহাড় ও সমতলে ৮ হাজার কোটির প্রকল্প উদ্বোধন ও শিলান্যাস বাদে রাষ্ট্রপতি শাসনের অবসান বা কেন্দ্রশাসিত কুকি এলাকার কোনও আশ্বাসই মেলেনি তাঁর কাছে।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৬:০১
গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে শিবিরে আশ্রয় নেওয়া এক পরিবারের সদস্যের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার মণিপুরের চূড়াচাঁদপুরে।

গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে শিবিরে আশ্রয় নেওয়া এক পরিবারের সদস্যের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার মণিপুরের চূড়াচাঁদপুরে। ছবি: পিটিআই।

২৮ মাস অপেক্ষার পরে অবশেষে গোষ্ঠী সংঘর্ষে বিধ্বস্ত মণিপুরে পা রাখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্তদের শিবিরে গেলেন। আলোচনার মাধ্যমে হিংসা কমানোর কথা বললেন। তুলে ধরলেন মণিপুরিদের বীরগাথা। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রচার চালানো প্রধানমন্ত্রী মণিপুরের জন্য কেন বরাদ্দ করলেন তিন ঘণ্টারও কম সময়?

এ দিন প্রথমে কুকি এলাকা চূড়াচাঁদপুর ও পরে মেইতেই এলাকা তথা রাজধানী ইম্ফলে সভা করেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “মণিপুরে যে কোনও ধরনের হিংসা দুর্ভাগ্যজনক। তা আমাদের পূর্বপুরুষ ও উত্তরপুরুষের প্রতি অন্যায়। তাই সকলকে অনুরোধ করছি, তাঁরা যেন শান্তির পথে এসে নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করেন, সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করেন। কথা দিচ্ছি, আমি আপনাদের সঙ্গে আছি, ভারত সরকার মণিপুরবাসীর সঙ্গে আছে।” মন্দ আবহাওয়ায় কপ্টার ওড়েনি। তাই সড়কপথেই ইম্ফল থেকে চূড়াচাঁদপুরে যান মোদী। দুই জায়গাতেই সভার আগে গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে শিবিরবাসী মহিলা ও শিশুদের সঙ্গে কথা বলে দুঃখ-দুর্দশার কথা জেনে নেন প্রধানমন্ত্রী। উল্লেখ্য, চার দশক পরে কোনও প্রধানমন্ত্রী কুকি এলাকায় গেলেন। চূড়াচাঁদপুরে তিনি বলেন, “কপ্টার না উড়ে ভালই হয়েছে। সারা রাস্তায়, বৃষ্টির মধ্যেও তেরঙা হাতে আবালবৃদ্ধবণিতা যে ভালবাসা দেখিয়েছেন— সেই অভিজ্ঞতা জীবনেও ভুলব না।”

বিস্তর প্রত্যাশা ছিল তাঁর সফর ঘিরে। কিন্তু পাহাড় ও সমতলে ৮ হাজার কোটির প্রকল্প উদ্বোধন ও শিলান্যাস বাদে রাষ্ট্রপতি শাসনের অবসান বা কেন্দ্রশাসিত কুকি এলাকার কোনও আশ্বাসই মেলেনি তাঁর কাছে।

ঘিরে। কিন্তু পাহাড় ও সমতলে ৮ হাজার কোটির প্রকল্প উদ্বোধন ও শিলান্যাস বাদে রাষ্ট্রপতি শাসনের অবসান বা কেন্দ্রশাসিত কুকি এলাকার কোনও আশ্বাসই মেলেনি তাঁর কাছে।

মণিপুরের হিংসা থামানোর বার্তা দিতে মোদী স্বাধীনতা যুদ্ধে মণিপুরের ভূমিকা, প্রথম তেরঙা উত্তোলন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর উদ্ধৃতি যেমন তুলে ধরেন, তেমনই অপারেশন সিঁদুরে মণিপুরিদের বীরত্বের প্রসঙ্গও টানেন। স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান মালিক এবং মণিপুরের কনস্টেবল (প্রয়াত) দীপক চিঙ্গাখামকে স্বাধীনতা দিবসে বীর চক্রে সম্মানিত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অপারেশন সিঁদুরে ভারতের বীরত্ব দেখেছে দেশ। আমাদের সেনার আক্রমণে পাকিস্তান সেনার ত্রাহিরব উঠেছিল। মণিপুরের সেনারাও সেই লড়াইয়ের সগর্ব শরিক ছিলেন। অনেক বীরের জন্ম হয়েছে এই ভূমিতে। সৈন্য হোক বা ক্রীড়াবিদ- এখানকার তরুণেরা তেরঙার মর্যাদা উন্নত করতে জান লড়ানো নবীন। তাঁদের সেই পরিচয় যেন হিংসার কালো ছায়ায় ঢেকে না যায়। মণিপুরে শান্তি ও স্থিরতা আসুক।” মোদীর আশ্বাস, “শিবিরবাসীদের জীবন স্বাভাবিক করতে সরকার নিরন্তর কাজ করছে। হিংসার আগুনে ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন সেটাই আমাদের অগ্রাধিকার।” তাঁর দাবি, “আমি আনন্দিত যে সাম্প্রতিক কালে মণিপুরের পাহাড় ও সমতলে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে শান্তির জন্য আলোচনা শুরু হয়েছে। ভারত সরকার আলোচনা, সম্মান ও পারস্পরিক সমঝোতাকে সামনে রেখে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট।’’

এ দিকে মোদীর ভাষণে পৃথক প্রশাসনের কোনও আশ্বাস না মেলায় কুকি-জ়ো কাউন্সিল ও কুকি মন্ত্রী-বিধায়কেরা তাঁকে স্মারকপত্র দিয়ে জানান, যে ধর্ষণ ও নৃশংসতার মাধ্যমে কুকিদের সমতল থেকে উৎখাত করা হয়েছে তা নজিরবিহীন।

আবার মণিপুরি জঙ্গিদের যৌথ মঞ্চ কোর কম প্রধানমন্ত্রীর সফর বয়কট করে গত রাত থেকেই বন্ধ ডেকেছিল। তাদের দাবি, ভারত সরকার মণিপুরের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে হিংসা উস্কেদিতে চাইছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

PM Narendra Modi Manipur Manipur Protest Manipur Violence

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy