২৭ বছরের পুরনো, অভিজাত এবং গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অক্ষ জি ২০ এ বার নিষ্প্রভ হয়ে পড়েছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। কারণ, বৈঠকে অনুপস্থিত আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিনের প্রেসিডেন্ট। আমেরিকার তরফে অন্য কোনও প্রতিনিধিকেও এখনও পর্যন্ত পাঠানো হয়নি। প্রশ্ন উঠছে, এই অনুপস্থিতি আফ্রিকার মাটিতে প্রথম বার হওয়া এই সম্মেলনকে কিছুটা লঘু করে দিল কি না। যদিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফাঁকা মাঠে তাঁর এবং তাঁর সরকারের ভাবমূর্তিকে কিছুটা ভারমুক্ত ভাবেই তুলে ধরতে পারলেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
আজ শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে মোদী বলেন, যে সব অঞ্চল দীর্ঘ দিন ধরে সম্পদের বঞ্চনার শিকার এবং পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতার সম্মুখীন, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নের বিষয়ে তাদের নতুন করে ভাবতে হবে। তাঁর কথায়, “অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সুস্থায়ী আর্থিক বৃদ্ধি হলে কেউ পিছনে পড়ে থাকে না।’’ তাঁর দাবি, ভারতের অখণ্ড মানবতার নীতি সুষম বৃদ্ধির এক মডেল। বিশ্বব্যাপী ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান ভাণ্ডার তৈরি, আফ্রিকার যুবাদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি, পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং মাদক-সন্ত্রাসের মোকাবিলার চারটি বিশেষ প্রস্তাব দেন তিনি।
আমেরিকার অনুপস্থিতি সত্ত্বেও আজ রাতে যৌথ ঘোষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে জোহানেসবার্গে। বিদেশ মন্ত্রকের দাবি, সেখানে ভারতের অন্তত ১০টি অগ্রাধিকারকে গুরুত্বের সঙ্গে রাখা সম্ভব হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘‘দু’বছর আগে ভারতে আয়োজিত জি২০-তে যে যে দিশা রাখা হয়েছিল, আজ তার হুবহু প্রতিধ্বনি করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে সব রকম সন্ত্রাসবাদের নিন্দা, ডিজিটাল পরিকাঠামো, কৃত্রিম মেধার উদ্ভাবন ও প্রয়োগ, নারী ক্ষমতায়ন, খাদ্য নিরাপত্তা, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের মতো বিষয়।’’
সম্মেলনের ফাঁকেই নতুন অক্ষ তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছেন মোদী। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানিজ় এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। এই বৈঠকের পরে, এক্স-হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, ‘অস্ট্রেলিয়া-কানাডা-ভারত প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন (এসিআইটিআই) অংশীদারির ঘোষণা করতে পেরে আনন্দিত। আগামী প্রজন্মকে উন্নত ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দিতে একসঙ্গে কাজ করার জন্য আমরা উন্মুখ!’ তিন দেশের বিবৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। বিরল খনিজে চিনের আধিপত্যের প্রেক্ষিতে এই উল্লেখ তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী ‘জি-২০-আফ্রিকা স্কিলস মাল্টিপ্লায়ার’ উদ্যোগের প্রস্তাব দিয়েছেন। এই উদ্যোগে ‘ট্রেন-দ্য-ট্রেনারস’ মডেল গ্রহণ করা হবে, যা জি-২০ দেশগুলির সহযোগিতায় আফ্রিকায় ১০ লক্ষ প্রশিক্ষক তৈরি করবে। মোদী স্মরণ করিয়ে দেন, ভারতের সভাপতিত্বে আফ্রিকান ইউনিয়নকে স্থায়ী সদস্যপদ দেওয়া শুধু কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, আন্তর্জাতিক উন্নয়নে আফ্রিকার ন্যায্য স্থান নিশ্চিত করাও। প্রধানমন্ত্রী জরুরি পরিস্থিতি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে জি-২০ তে একসঙ্গে কাজ করার জন্য ‘গ্লোবাল হেলথকেয়ার রেসপন্স টিম’ গঠনেরও প্রস্তাব দিয়েছেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)