Advertisement
E-Paper

পাকিস্তান এবং কংগ্রেসকে একই বন্ধনীতে রেখে আক্রমণ মোদীর! ১০৫ মিনিটের ভাষণে ট্রাম্প-প্রসঙ্গ অবশ‍্য এড়িয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী

নিজের বক্তৃতার প্রথমাংশে সেনার ভূমিকা, অপারেশন সিঁদুরের আগে সেই সংক্রান্ত প্রস্তুতি এবং পাকিস্তানের ভূখণ্ডে প্রত্যাঘাতের প্রসঙ্গ রাখেন মোদী। তার পর ক্রমশ কংগ্রেস জমানার সঙ্গে নিজের শাসনের তুলনার ভাষ্য তুলে ধরেন। সেই সূত্রেই কংগ্রেসের উদ্দেশে একের পর এক তোপ দাগেন তিনি।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৫ ২১:৫৩
(বাঁ দিকে) রাহুল গান্ধী। নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) রাহুল গান্ধী। নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।

সিঁদুর অভিযান নিয়ে লোকসভায় আলোচনার জন্য বরাদ্দ হয়েছিল ১৬ ঘণ্টা। শাসক-বিরোধী সব দলের সাংসদদের বক্তৃতার শেষে মঙ্গলবার ১০৫ মিনিটের ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই বক্তৃতার বড় অংশ জুড়ে পাকিস্তান এবং কংগ্রেসকে এক বন্ধনীতে রেখে আক্রমণ শানালেন প্রধানমন্ত্রী। তবে ভারত-পাক সংঘর্ষবিরতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকা নিয়ে নানাবিধ প্রশ্ন উঠলেও, সেই প্রসঙ্গ এড়িয়েই গেলেন মোদী। লোকসভায় মোদীর বক্তৃতা শেষ হওয়া ইস্তক সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বক্তৃতা করতে উঠে কংগ্রেস সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম প্রশ্ন তুললেন, কেন প্রধানমন্ত্রী ট্রাম্প-প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেন।

লোকসভায় মোদী মঙ্গলবার দাবি করেছেন, ২২ এপ্রিল পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা যে ভাবে পহেলগাঁওয়ে নিরীহ পর্যটকদের হত্যা করেছিল তার জবাব ৬ এবং ৭ মে মাঝের রাতে ২২ মিনিটেই দিয়েছিল ভারতীয় সেনা। নিজের বক্তৃতার প্রথমাংশে সেনার ভূমিকা, অপারেশন সিঁদুরের আগে সেই সংক্রান্ত প্রস্তুতি এবং পাকিস্তানের ভূখণ্ডে প্রত্যাঘাতের প্রসঙ্গ রাখেন মোদী। তার পর ক্রমশ কংগ্রেস জমানার সঙ্গে নিজের শাসনের তুলনার ভাষ্য তুলে ধরেন। সেই সূত্রেই কংগ্রেসের উদ্দেশে একের পর এক তোপ দাগেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর কংগ্রেস ভেবেছিল মোদী খুব ফাঁসা ফেঁসেছে! তিন-চার দিন পর থেকেই বলা শুরু করেছিল, কোথায় গেল ৫৬ ইঞ্চি, কোথায় গেলেন মোদী? কিন্তু অপারেশন সিঁদুর হতেই কংগ্রেসের মুখ চুন হয়ে যায়।’’ এর পরেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘অপারেশন সিঁদুরের পরে পাকিস্তানের ভাষ্য আর কংগ্রেসের ভাষ্যের মধ্যে কোনও ফারাক নেই। ওরা যা বলেছে, এখানে দাঁড়ি-কমা সমেত কংগ্রেসও তাই বলেছে। ভারত যখন আত্মনির্ভরতা দেখাচ্ছে তখন কংগ্রেস শুধুই পাকিস্তান নির্ভরতা দেখিয়ে যাচ্ছে।’’

মোদীর বক্তৃতার মাঝে একাধিক বার বিরোধী বেঞ্চ থেকে হট্টগোল হয়। কিন্তু যত বার এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তত বারই মোদীকে দেখা গিয়েছে সামনে রাখে পানীয় জলের গ্লাসে গলা ভিজিয়ে নিয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সুরকে আরও চড়া দাগে তুলছেন। মোদীর কথায়, ‘‘কংগ্রেসের জমানাতেও সন্ত্রাসবাদী হামলা হত। কিন্তু তখন হামলা করার পর সন্ত্রাসবাদীরা পরবর্তী হামলার ছক কষতে শুরু করত। আর এখন তারা জানে, ভারত তাদের রাতের ঘুম উড়িয়ে দেবে।’’

অপারেশন সিঁদুর প্রসঙ্গে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা যে প্রশ্ন তুলেছিল, তারও জবাব দেন মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘আমি অন্য দলগুলোর কথা ধরছি না। কিন্তু কংগ্রেস তো বহুকাল দেশ চালিয়েছে। দেখলাম তারাও বিদেশমন্ত্রক, বিদেশমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায় মান্যতা দিচ্ছে না। যা থেকে বোঝা যায়, কংগ্রেস দেশের ব্যবস্থাকেই স্বীকার করে না।’’ তুষ্টিকরণের জন্য কংগ্রেস অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করেছে বলেও অভিযোগ করেন মোদী। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের সময়ে কংগ্রেসের কিছু নেতা বলেছিলেন, তাঁদের আমলেও নাকি ওই রকম প্রত্যাঘাত হয়েছিল। বালাকোট বিমান হানার সময়ে বলেছিল, ছবি কই? পাকিস্তানেরও ভাষ্য এক ছিল। আর এখন বলছে অপারেশন সিঁদুর বন্ধ হল কেন?’’ এর পরেই কংগ্রেসের উদ্দেশে বিদ্রুপের হাসি হেসে মোদী বলেন, ‘‘আপনাদের বিরোধিতা করার বাহানা দেখে গোটা দেশ হাসছে।’’ পাশাপাশি মোদী জানিয়ে দেন, অপারেশন সিঁদুর জারি রয়েছে।

তৃণমূলের মতো একাধিক বিরোধী দল সংসদে প্রশ্ন তুলেছে, মোক্ষম সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর দখল করা গেল না? এই প্রসঙ্গে মোদী বলেন, ‘‘যাঁরা বলছেন, আমরা কেন পাক অধিকৃত কাশ্মীর ফেরত নিতে পারিনি, তাঁদের জিজ্ঞেস করতে চাই, কাদের সরকার ওটা পাকিস্তানকে অধিকার করতে দিয়েছিল? জবাব স্পষ্ট।’’ মোদী কথা শেষ করা মাত্র বিজেপি সাংসদেরা সমস্বরে বলে ওঠেন, কংগ্রেস, কংগ্রেস, কংগ্রেস। ফের এক বার স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর প্রসঙ্গ টানেন মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘নেহরুর কথা বললে, কংগ্রেস আলোড়িত হয়। স্বাধীনতার পর থেকে ওরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার ফল আজও ভুগছে দেশ। ভুল দিশার জন্য দেশের জমি হারাতে হয়েছে। সিন্ধুর জলের ৮০ শতাংশ পাকিস্তানকে দিয়ে রেখেছিল। কর্তারপুর সাহিবও নেয়নি। শ্রীলঙ্কাকে কাচ্চাথিভু দ্বীপ দিয়ে উপহার দেওয়া হয়। যার জন্য এখন তামিলনাড়ুর মৎস্যজীবীরা ভুগছেন। জমি দিয়ে দেওয়ার অধিকার কি রয়েছে ওদের? আজ সিয়াচেনও আমাদের কাছে থাকত না।’’

কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জমানার প্রতিরক্ষানীতির তীব্র সমালোচনা করেন মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘কংগ্রেসের সময়ে প্রতিরক্ষা উৎপাদন ব্যবস্থা নষ্ট করা হয়েছে। ওই নীতিতে চললে সিঁদুর অভিযানের কথা চিন্তাও করতে পারতাম না। গত এক দশকে ভারতীয় সেনার সশক্তিকরণের প্রমাণ এই অভিযান। কংগ্রেসের সময়ে সেনাকে আত্মনির্ভর করার ভাবনাচিন্তা ছিল না। আর গত এক দশকে প্রতিরক্ষা খাতে ২৫০ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে বরাদ্দ। প্রতিরক্ষা সামগ্রী রফতানি হয় ১০০টি দেশে। সিঁদুর অভিযানের পরে প্রতিরক্ষার বাজারে ভারতে তৈরি অস্ত্রের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।’’

তবে ট্রাম্পের প্রসঙ্গ আনেননি মোদী। বিরোধীদের অভিযোগ, কেন ভারত-পাক সংঘর্ষবিরতির কথা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করলেন? কেন তা নিয়ে নীরব রইল ভারত? উল্লেখ্য, ট্রাম্প নিজেই দাবি করেছিলেন, ভারত, পাকিস্তান দুই দেশকেই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল সংঘর্ষ না-থামালে বাণিজ্য বন্ধ হবে। তার পর তার সংঘর্ষ বিরতিতে একমত হয়। মঙ্গলবার সে সবের তার সরাসরি জবাব দেননি মোদী। শুধু বলেছেন, গত ৯ মে রাতে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স তাঁকে ফোনে জানিয়েছিলেন, পাকিস্তান বড় হামলার পরিকল্পনা করছে। মোদীর দাবি, তিনি ভান্সকে জানিয়েছিলেন, তেমন হামলা হলে পাকিস্তানকে আরও বড় মূল্য চোকাতে হবে। ট্রাম্পের প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেও মোদী দাবি করেছেন, তৃতীয় কোনও দেশ সংঘর্ষ বিরতিতে হস্তক্ষেপ করেনি।

PM Narendra Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy