Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জেলেই নীরব, বদলির নাটক ইডি-তে

যদিও বিনীতের সই করা একটি চিঠি হাতে এসেছে সংবাদমাধ্যমের। তাতে সত্যব্রতের বদলির নির্দেশের পাশাপাশি যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে, কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও অফিসার ডেপুটেশনে পাঁচ বছরের বেশি কাজ করতে পারেন না।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
লন্ডন ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৯ ০৩:৪৮
Share: Save:

সবার নজর ছিল লন্ডনে। কারণ নীরব মোদীর জামিনের আর্জির শুনানি চলছে সেখানেই। কিন্তু সেই মামলার রায় বেরোনোর আগেই অন্য বিতর্কের ঝড় বইল নীরবের নিজের দেশে।

আজও জামিন পাননি নীরব। পিএনবি-র ১৪ হাজার কোটি টাকা প্রতারণা মামলার প্রধান অভিযুক্তকে ফের জেলেই পাঠিয়েছে লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টারের ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। কিন্তু সে সবকে ছাপিয়ে গিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর নাটক। নীরবের মামলার প্রধান তদন্তকারী অফিসার সত্যব্রত কুমারকে আজ বিকেলে আচমকা বদলি করে দেয় ইডি-র মুম্বই অফিস। জয়েন্ট ডিরেক্টর সত্যব্রত এখন নীরবের মামলার জন্যই লন্ডনে রয়েছেন। ইডি-র পশ্চিমাঞ্চলের শীর্ষ কর্তা, স্পেশ্যাল ডিরেক্টর বিনীত আগরওয়াল আজ মুম্বইয়ের ‘১ নম্বর ‌জ়োনাল ইউনিট’ থেকে তাঁর বদলির নির্দেশ জারি করতেই তীব্র বিতর্ক শুরু হয়। ইডি সূত্রের বক্তব্য, এই সময়ে দিল্লি থেকে তড়িঘড়ি বিনীতের নির্দেশ বাতিল করে সত্যব্রতকে পুরনো দায়িত্বে ফেরান ইডি-র ডিরেক্টর সঞ্জয়কুমার মিশ্র। টুইটারে ইডি দাবি করেছে, ‘‘সংবাদমাধ্যমে ওই যুগ্ম অধিকর্তার বদলির যে খবর প্রচারিত হচ্ছে, তা ভুল।’’

যদিও বিনীতের সই করা একটি চিঠি হাতে এসেছে সংবাদমাধ্যমের। তাতে সত্যব্রতের বদলির নির্দেশের পাশাপাশি যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে, কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও অফিসার ডেপুটেশনে পাঁচ বছরের বেশি কাজ করতে পারেন না। সেই কার্যকাল উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছিল সত্যব্রতের। তাঁকে বহাল রাখার ব্যাপারে ইডি-র সদর দফতরও আগে কোনও নির্দেশ জারি করেনি। সেই যুক্তিতেই সত্যব্রতর হাত থেকে নীরব মামলা-সহ সমস্ত তদন্ত সরিয়ে নিয়ে তা দেওয়া হয়েছিল ইডি-র পশ্চিমাঞ্চলের অতিরিক্ত ডিরেক্টরকে। তবে কয়লা ব্লক বণ্টন দুর্নীতির তদন্তে সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে নিয়োগ করায় ওই মামলা রাখা হয়েছিল সত্যব্রতের হাতে। সূত্রের বক্তব্য, বিতর্কের পরে এখন তাঁর মেয়াদ বাড়ানোর জন্য অর্থ এবং কর্মিবর্গ মন্ত্রকের কাছে আবেদন করতে হবে ইডি-কে। কিন্তু এই অফিসার বিদেশে থাকাকালীন বদলির নির্দেশ জারি এবং দিল্লি থেকে তা খারিজ হওয়া নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই চর্চা চলছে বিভিন্ন মহলে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

লন্ডনে আজ নীরবের জামিনের মামলার শুনানিতে হাজির ছিলেন সিবিআই এবং ইডি-র অফিসারেরা। ভারত সরকারের হয়ে মামলাটি লড়ছে ব্রিটেনের ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস (সিপিএস)। তাদের তরফে ব্যারিস্টার টোবি ক্যাডম্যান অভিযোগ করেন, অনীশ লাড নামে মামলার এক সাক্ষীকে ফোনে খুনের হুমকি দিয়েছিলেন নীরব। মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ২০ লক্ষ টাকা ঘুষের লোভও দেখিয়েছিলেন তাঁকে। একই ভাবে নীলেশ মিস্ত্রি নামে এক ব্যক্তি এবং আরও তিন সাক্ষীকে হুমকি দিয়েছিলেন তিনি।

ক্যাডম্যান বলেন, কয়েকটি মোবাইল ফোন এবং সার্ভার থেকে কথোপকথনের রেকর্ড নষ্ট করা হয়েছিল নীরবেরই নির্দেশে। সে সবই ছিল পিএনবি প্রতারণার প্রমাণ। জামিন দেওয়া হলে নীরব পালাতে পারেন, সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে এমনকি প্রমাণ নষ্টও করতে পারেন। নীরবের হয়ে মামলা লড়ছিলেন ক্লেয়ার মন্টগোমারি। বিজয় মাল্যের প্রত্যর্পণ মামলা-লড়া এই ব্যারিস্টার পাল্টা যুক্তি দেন, তাঁর মক্কেল নিজের নামে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে লন্ডনে রয়েছেন। গ্রেফতার হওয়ার সময়েও নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলছিলেন। কাজেই তাঁর পালানোর আশঙ্কা অমূলক। বরং ব্রিটেনেই সুবিচার আশা করেন তিনি।

মুখ্য ম্যাজিস্ট্রেট এমা আর্বাথনট এর আগে মাল্যের প্রত্যর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন। দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব শুনে তিনিই আজ জামিন নাকচ করেন নীরবের। বলেন, জামিন পেলে নীরব যে আত্মসমর্পণ করবেন না, তা মনে করার যুক্তিগ্রাহ্য কারণ রয়েছে। প্রতারণা মামলায় অভিযুক্ত কাউকে খুনের হুমকি দিচ্ছেন, এটাও খুব বিরল ঘটনা। পরবর্তী শুনানি ২৬ এপ্রিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nirav Modi ED PNB Scam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE