Advertisement
E-Paper

ইউনিয়ন চালুর দাবি, সংঘর্ষে পুলিশ-ছাত্ররা

দাবিটা অনেক দিনের। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএইচইউ) ছাত্র ইউনিয়ন ফিরিয়ে আনার জন্য ইতিউতি ঘেরাও-বিক্ষোভ চলছিল। বৃহস্পতিবার সেই দাবিতেই উত্তাল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। ছাত্রছাত্রীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ। গাড়িতে আগুন ধরিয়ে, পাথর-ইট ছুড়ে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে জখম হন ছাত্রদের কেউ কেউ। সংঘর্ষে আঘাত পায় পুলিশও। অশান্তির জেরে আপাতত বন্ধ ক্লাস।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:১১

দাবিটা অনেক দিনের। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএইচইউ) ছাত্র ইউনিয়ন ফিরিয়ে আনার জন্য ইতিউতি ঘেরাও-বিক্ষোভ চলছিল। বৃহস্পতিবার সেই দাবিতেই উত্তাল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। ছাত্রছাত্রীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ। গাড়িতে আগুন ধরিয়ে, পাথর-ইট ছুড়ে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে জখম হন ছাত্রদের কেউ কেউ। সংঘর্ষে আঘাত পায় পুলিশও। অশান্তির জেরে আপাতত বন্ধ ক্লাস।

ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার দুপুরে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়নের বদলে এখন যে কাউন্সিল রয়েছে, সেখানে নির্বাচনের জন্য প্রথম দফার মনোনয়নের কাজ চলছিল। ইউনিয়ন ফিরিয়ে আনার দাবিতে তখনই এক দল ছাত্র প্রতিবাদ শুরু করে বলে অভিযোগ। ক্রমশ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই সময় বাইরে থেকেও বেশ কয়েক জন ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়েন বলে ছাত্রছাত্রীদের একাংশের দাবি। তখনও বেশ কিছু বিভাগের ক্লাস চলছিল।

কিন্তু গোলমালের আশঙ্কায় ক্লাস বন্ধ করে ছাত্রছাত্রীদের ক্যাম্পাস ছাড়ার নির্দেশ দেন কর্তৃপক্ষ। তত ক্ষণে বিএইচইউ-এর প্রধান ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ প্রতিবাদীরা সেখানেই ভিড় করেছিলেন। ক্যাম্পাস থেকে বেরতে গিয়ে ছাত্রছাত্রীরা দেখেন, গেটের চারপাশ ঘিরে ফেলেছে প্রচুর পুলিশ। হাজির পিএসি জওয়ানের দল।

এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে আন্দোলনকারীরা। যাঁদের মধ্যে অনেকে এবিভিপি (বিজেপির ছাত্র সংগঠন), এবং এনএসইউআই (কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন)-এর সঙ্গে যুক্ত। এঁরা প্রথমে ক্লাস বয়কটের দাবি জানান। বিভিন্ন বিভাগে ঢুকে ছোট আকারে মিছিল করা হয়।

তাঁদের আন্দোলনকে সমর্থনের জন্য অনুরোধ জানানো হয় ছাত্রছাত্রীদের কাছে। তবে অনেকেরই দাবি, গণ্ডগোলের মধ্যে বাইরে থেকে ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে অনেকে। তাদের মুখে কাপড় বাঁধা ছিল। এদের প্ররোচনাতেই পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ।

বৃহস্পতিবার পুলিশ প্রথমে বিক্ষোভ থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পাথর-ইটের টুকরো হাতে তুলে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে আন্দোলনকারীরা। জখম হন বেশ কিছু পুলিশ। ক্যাম্পাসে রাখা দু’টি পিক-আপ ভ্যান জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। শিবন ত্রিপাঠী নামে এক

ছাত্র গুলি-চালানোর অভিযোগ এনেছেন। জেলা-প্রশাসন এবং পুলিশের দাবি, ত্রিপাঠীর গায়ে পাথরের কুচির আঘাত লেগেছে। ক্যাম্পাসের কোথাও গুলি চলেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় জমে থাকা ভিড় ছত্রভঙ্গ করতে লাঠি চালিয়েছে পুলিশ।

রাজু রাজ (উত্তরপ্রদেশেরই এক মন্ত্রীর আত্মীয়) নামে এক ছাত্রনেতা এবং রিপুদমন সিংহ নামে আর এক ছাত্রকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। তবে সংঘর্ষে ওঁরা জখম হয়েছেন বলেও অভিযোগ। তা ছাড়া ক্যাম্পাসের ভিতরে হোস্টেলের আশপাশেও উত্তেজনা ছড়ায়। রাজারাম হোস্টেলের কাছে গুলি চলেছে বলে অভিযোগ করেন কয়েক জন ছাত্র। জেলাশাসক প্রাঞ্জল যাদবের দাবি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। অথচ ছাত্রদের হোস্টেলের অনেকেই আজ জানিয়েছেন, হোস্টেলে ঢুকে আজ জওয়ানরা ছাত্রদের মারধর করেছে। এর মধ্যে এক জন প্রতিবন্ধী ছাত্রও রয়েছেন।

তা ছাড়া তিন জন ছাত্রকে হোস্টেল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে জওয়ানদের বিরুদ্ধে।

এই ছাত্ররা আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন না বলে দাবি তাঁদের সতীর্থদের। এই অবস্থায় কতৃর্পক্ষ হোস্টেল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন ছাত্রদের। নিজেদের জিনিস ফেলে রেখেই স্থানীয় হোটেলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে।

নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ অথবা ডিসেম্বরের গোড়াতেই বিএইচইউ-এ পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। এর মধ্যে হঠাৎ পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠায় উদ্বিগ্ন অনেকেই। গোটা বিষয়টি নিয়ে চিঠি লিখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা। অবস্থা স্বাভাবিক হতে কত দিন লাগবে, জানেন না কেউই। ১৯৯৭ সালে হিংসার জেরে বিএইচইউ-এর ইউনিয়ন উঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার পর টানা দশ বছর সেখানে কোনও ছাত্র ইউনিয়ন ছিল না। ২০০৭-০৮ সালে ইউনিয়নের জায়গায় তৈরি করা হয় ছাত্র কাউন্সিল। এখন যত আপত্তি এই কাউন্সিল নিয়েই।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অংশের মতে, এই অশান্তির জেরে বিএইচইউ-এর অভ্যন্তরীণ রাজনীতি প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে। যাঁরা এখন প্রশাসনিক পদে রয়েছেন বা যাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে দ্বন্দ্ব রয়েছে তাঁদের ঘিরেও। যার জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রোক্টর এ কে জোশী ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, “এখানে বেশ কয়েক জন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি আমার নির্দেশের পরোয়া না করে অন্য লোকজনের কথা শুনে চলছেন। তাই আমি বুধবারই ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছি। সেটা এখনও গ্রহণ করা হয়নি ঠিকই, কিন্তু আমি এই পদে থাকতে চাই না।”

BHU union demand of union start clash police student college national news online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy