আরবিআই কর্তা বলে ভুয়ো পরিচয় দিয়ে ক্যাশ ভ্যান থেকে সাত কোটি টাকা লুটের ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করল বেঙ্গালুরু পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন এক জন পুলিশ কনস্টেবলও! এ ছাড়াও, ওই ক্যাশ ভ্যানের ইনচার্জ এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রাক্তন এক কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শনিবার এই গ্রেফতারির কথা জানিয়েছেন বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার সীমান্তকুমার সিংহ। সংবাদসংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, ধৃতদের থেকে লুট হওয়া সাড়ে পাঁচ কোটির বেশি নগদ উদ্ধার হয়েছে। বাকি টাকার খোঁজ চলছে।
বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ ওই ক্যাশ ভ্যানটিকে দক্ষিণ বেঙ্গালুরুর এক উড়ালপুলের উপর আটকানো হয়। দুষ্কৃতীরা নিজেদের ‘আরবিআই কর্তা’ বলে পরিচয় দিয়ে কর্মীদের জানায়, আরবিআইয়ের নির্দেশিকা লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে তাঁদের সংস্থার বিরুদ্ধে। সেই কারণে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন, তাই কর্মীদের যেতে হবে থানায়। মাঝপথে ওই ক্যাশ ভ্যান থেকে ৭.১১ কোটি টাকা লুট করে নিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা।
দুষ্কৃতীদের কথা বিশ্বাস করে নেন ওই ক্যাশ ভ্যানে থাকা তিন কর্মী। তাঁদের নিয়ে একটি গাড়িতে ওঠে দুই দুষ্কৃতী। বাকিদের মধ্যে দু’জন উঠে পড়ে ক্যাশ ভ্যানে। বাকিরা ছিল মারুতিতে। তার পরেই তিনটি গাড়ি রওনা দেয় থানার উদ্দেশে। অভিযোগ, কিছু পথ যাওয়ার পর গাড়ি থেকে তিন কর্মীকে নেমে যেতে বলা হয়। জানানো হয়, তাঁরা যেন থানায় পৌঁছে যান। অন্য দিকে, ক্যাশ ভ্যানটির চালককে বলা হয়, ‘‘থানায় নিয়ে যাওয়ার আগে টাকা ভর্তি বাক্সগুলি আরবিআই অফিসে নিয়ে যেতে হবে।’’ রাস্তার মধ্যে নামিয়ে দেওয়া হয় ক্যাশ ভ্যানের চালককে। তার পরে বন্দুক দেখিয়ে চালককে নির্দেশ দেওয়া হয় ভ্যানে থাকা ক্যাশবাক্সগুলি মারুতি এবং অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়ার জন্য। তার পরে চালককে রাস্তার মাঝে ফেলে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা।
ক্যাশ ভ্যানটি ছিল সিএমএস ইনফো সিস্টেম লিমিটেড নামে এক সংস্থার। যেই সময় লুটের ঘটনাটি ঘটে, তখন ওই ভ্যানে তিনটি ব্যাঙ্কের টাকা ছিল। সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কগুলির এটিএমে টাকা পৌঁছে দেওয়ার পথেই বিপত্তি ঘটে। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে এই লুটের ঘটনার নেপথ্যে রয়েছেন সিএমএস সংস্থার এক প্রাক্তন কর্মী। দিন কয়েক আগেই তিনি ওই সংস্থার চাকরি ছাড়েন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল গোবিন্দরাজ নগর থানার এক কনস্টেবলেরও। তদন্তকারীদের অনুমান, তাঁরা দু’জনে মিলে এই ডাকাতির ছক কষেন।
আরও পড়ুন:
বেঙ্গালুরুর যে এলাকায় লুটের ঘটনা ঘটে, সেখানকার বিভিন্ন মোবাইলের টাওয়ার বিশ্লেষণ করেই মেলে দুই অভিযুক্তের খোঁজ। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনাস্থলের আশপাশের বিভিন্ন মোবাইল টাওয়ারের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায় ডাকাতির সময় ওই কনস্টেবল এবং প্রাক্তন সিএমএস কর্মীর মধ্যে মোবাইলে বেশ কয়েক বার কথা হয়। তাঁদের কল রেকর্ড ঘেঁটে জানা গিয়েছে, ডাকাতির আগেও ধারাবাহিক ভাবে দু’জনে যোগাযোগ রেখেছিলেন। ডাকাতির জন্য দু’টি গাড়ি ব্যবহার করেছিলেন তাঁরা। একটি গাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা। অন্য গাড়িটির খোঁজ চলছে। এ ছাড়াও, এই ডাকাতির সঙ্গে আর কারা জড়িত, তাঁদেরও খুঁজছে পুলিশ। ধৃতদের জেরা করে নতুন তথ্য পাওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার।