সাড়ে তিন বছর আগের কথা। সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাটদের সঙ্গে বৈঠকের পরে টি জে চন্দ্রচূড়ন, অবনী রায়েরা তাঁদের জানিয়ে দিয়ে এসেছিলেন, সিপিএমের যুক্তির সঙ্গে তাঁরা একমত নন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইউপিএ-র মনোনীত প্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন তাঁরা করতে পারবেন না। তাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আরএসপি ভোটদানে বিরত থাকবে। একই অবস্থান নিয়ে সে দিন আরএসপি-র পাশে দাঁড়িয়েছিল এ বি বর্ধনের সিপিআই। পক্ষান্তরে প্রণববাবুর পক্ষে ভোট দিয়েছিল সিপিএম এবং ফরওয়ার্ড ব্লক।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ বার সেই আরএসপি নেতৃত্বই কংগ্রেস সম্পর্কে বামেদের মনোভাব পরিবর্তনের দাবি তুললেন! বিজেপি এবং কংগ্রেস, দু’দলই একই রকম নীতিতে চলে। এই যুক্তি দেখিয়ে দু’দলের থেকে সমদূরত্ব রাখাই দীর্ঘ দিনের বাম নীতি। দলের মধ্যে কংগ্রেস-প্রশ্নে প্রবল বিতর্ক থাকলেও এই সমদূরত্বের নীতি থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে সরে আসেনি সিপিএম। আরএসপি নেতৃত্ব কিন্তু এক ধাপ এগিয়ে তাঁদের সর্বভারতীয় সম্মেলনের দলিলে সমদূরত্বের স্লোগান বদলের দাবি তুলে দিলেন। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের আগে কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের সমঝোতার পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি নিয়ে যখন রাজনীতি তোলপাড়, সেই সময়েই এই বাম শরিক দলের বক্তব্য যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ!
দিল্লিতে বুধবার থেকে শুরু হয়েছে আরএসপি-র ২০তম সর্বভারতীয় সম্মেলন। চলবে আজ, শুক্রবার পর্যন্ত। সেই সম্মেলনে পেশ হওয়া খসড়া রাজনৈতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জওহরলাল নেহরু বা ইন্দিরা গাঁধী জমানার কংগ্রেস আধিপত্যবাদের দিন এখন শেষ। রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেস ক্রমশ দুর্বল হয়ে পিছু হঠছে। তাদের জায়গা দ্রুত দখল নিচ্ছে বিজেপি। হীনবল হয়ে কংগ্রেস এখন নানা রাজ্যেই বন্ধু খুঁজছে। এই প্রেক্ষিতে বিজেপি-র মতো সাম্প্রদায়িক, আধিপত্যবাদী দলের সঙ্গে কংগ্রেসের ফারাক বোঝা দরকার। দুই দলকে একই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা
এখন আর ঠিক নয়। প্রতিবেদনের ভাষায়, ‘আমাদের দিক থেকে দু’দলের মধ্যে পার্থক্য বুঝে নেওয়ার সময় এসেছে। দু’দলকে আমরা এখন আর একাসনে বসাতে পারি না। বিজেপি এবং কংগ্রেসের থেকে সমদূরত্বের স্লোগান এখন আর তত প্রাসঙ্গিক নয় এবং এর পর্যালোচনাও হওয়া উচিত’।
বস্তুত, কংগ্রেস-প্রশ্নে আরএসপি নিজেই যথেষ্ট কণ্টকিত! গত বছর লোকসভা ভোটের সময় কেরলে আসন বণ্টন ঘিরে সিপিএমের সঙ্গে বিবাদের জেরে সে রাজ্যে আরএসপি বাম জোট ছেড়ে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফে চলে গিয়েছে! কেরল আরএসপি-র অবস্থান কত দূর গ্রহণযোগ্য, তা নিয়েই বিতর্ক চলছে চলতি সম্মেলনে। তার মধ্যেই দলের রাজনৈতিক প্রতিবেদনে কংগ্রেস সম্পর্কে অবস্থান বদলের দাবি সার্বিক ভাবে আরএসপি নেতৃত্বের মনোভাবের ইঙ্গিত দিচ্ছে। যে ইঙ্গিতকে স্বাগত জানাচ্ছেন সিপিএম নেতৃত্বের একাংশও। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘রাজনীতিতে চিরস্থায়ী কিছু হয় না। পরিস্থিতির ধারাবাহিক বিশ্লেষণ করে যে কোনও বাম দলের চলা উচিত!’’
আরএসপি-র প্রতিবেদনে অবশ্য কড়া সমালোচনা আছে সিপিএমেরও। জাতীয় স্তরে বাকি বাম দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে চলার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার জন্য কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে সিপিএম নেতৃত্বকে। তার পাশাপাশিই এ রাজ্যের একটি সাম্প্রতিক ঘটনা ক্ষোভ বাড়িয়েছে আরএসপি-র। রাজ্য জুড়ে ঘটে চলা নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে কাল, শনিবার কাকদ্বীপ থেকে কামদুনি সাইকেল-জাঠায় বেরোচ্ছে বাম ছাত্র, যুব ও
মহিলাদের ১২টি সংগঠন। সম্মেলনের জন্য আরএসপি-র জেলা স্তরের নেতারাও দিল্লিতে থাকবেন বলে সাইকেল-জাঠা একটু পিছিয়ে দিতে সিপিএমের যুব নেতৃত্বকে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু জাঠার দিন অপরিবর্তিত থাকায় আরএসপি অংশ নিচ্ছে না। দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের প্রশ্ন, ‘‘দাদাগিরির মনোভাব চলবে এখনও?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy