বিশেষ আমূল সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়া সেরে বিহারে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেই তালিকা রাজনৈতিক দলগুলির হাতে তুলে দেওয়ার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। আর সেই সঙ্গেই শুরু হয়েছে বিধানসভা ভোটের আগে এসআইআর প্রক্রিয়ার জেরে লাভ-ক্ষতির হিসেব কষা!
বিহারে ‘মহাগঠবন্ধনে’র শরিক, বিরোধী দলগুলির নেতাদের প্রায় সকলেরই বক্তব্য, বুথ লেভল এজেন্টদের (বিএলএ) অধিকাংশই এখন নবরাত্রি ও দুর্গা পুজোয় ব্যস্ত। দশেরা মিটে যাওয়ার আগে বুথ স্তর থেকে তাই ভোটার তালিকা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য পাওয়া কঠিন। আপাতত বৃহত্তর চিত্র ধরে যোগ-বিয়োগের অঙ্ক চলছে। এবং তাতে উঠে আসছে, বিহারের মোট ৩৮টি জেলার মধ্যে লালুপ্রসাদের নিজের ভূমি গোপালগঞ্জে সর্বাধিক ১২.১৩% ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে! গোপালগঞ্জের ৬টি বিধানসভা আসনের মধ্যে গত বার অবশ্য মাত্র দু’টি জিতেছিল লালুর দলের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। তাই তাঁদের শক্ত ঘাঁটি বলেই সেখানে ভোটারের নাম বেশি কাটা হয়েছে, এমন অভিযোগ জোর গলায় তুলতে পারছেন না আরজেডি নেতৃত্ব।
চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরে বেশি চর্চা চলছে মগধ অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে। মোট ৮টি জেলা (পটনা-সহ) নিয়ে যে মগধ অঞ্চল ধরা হয়, সেখানে ৩.৪% ভোটার যোগ হয়েছে। সংখ্যার নিরিখে দেখলে এক লক্ষ ৬৩ হাজার নতুন ভোটার এসেছেন তালিকায়। গোটা রাজ্যের মধ্যে এখানেই ভোটার সংযুক্তির হার সব চেয়ে বেশি। বিভিন্ন রাজ্যেই ভোটের পাটিগণিতের অন্যতম পরিচিত সূত্র হল ভোটার তালিকায় নাম ‘ঢুকিয়ে’ রেখে ভোট-বাক্সে কাজ হাসিল করা। মহারাষ্ট্রে বিধানসভা ভোটের পরে সেই অভিযোগই তুলেছিল কংগ্রেস। বিহারে মগধ যে হেতু বিজেপি তথা এনডিএ-র কাঁটার জায়গা, তাই এই ভোটার সংযুক্তিকে সন্দেহের চোখেই দেখছে বিরোধীরা। পাঁচ বছর আগে বিধানসভা ভোটে মগধ অঞ্চলের ৪৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩০টিতে জিতেছিল মহাজোট। গত বছর লোকসভা নির্বাচনেও সেখানে এনডিএ বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি। এ বার বিধানসভা ভোটের আগে মগধ অঞ্চলেই বিপুল অঙ্কের প্রকল্পের ঘোষণা করেছে নরেন্দ্র মোদীর কেন্দ্রীয় এবং নীতীশ কুমারের রাজ্য সরকার।
এর উল্টো দিকে কিসানগঞ্জ, পূর্ণিয়া, কাটিহার ও অররিয়া জেলা নিয়ে গঠিত সীমাঞ্চলের গড় হিসেব ধরলে, চূড়ান্ত তালিকায় বাদ গিয়েছে ৭.৭% ভোটারের নাম। সীমান্ত ঘেঁষা এই অঞ্চলে সংখ্যালঘু ভোটার প্রায় ৪৮%। এই এলাকায় বাইরে থেকে আসা লোকজন বিপুল সংখ্যায় জাল আধার কার্ড তৈরি করে বাস করছেন, এমন অভিযোগে গোড়া থেকে সরব ছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। তবে ভোটের অঙ্কের নিরিখে ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন এনডিএ-র দখলেই গিয়েছিল। আরজেডি-কংগ্রেস জোট ৭টি আসন জিতেছিল। আসাদউদ্দিন ওয়াইসসির এমআইএম সে বার ৫টি আসন পেয়েছিল এই এলাকা থেকে। তবে জয়ী ৫ জনের মধ্যে চার জনই পরে আরজেডি-তে যোগ দিয়েছেন।
জনবিন্যাস অনুযায়ী, বিহারে দলিত, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) এবং আর্থিক ভাবে অনগ্রসর (ইবিসি) অংশের ভোটার আছেন বড় সংখ্যায়। এসআইআর-এর পরে এই অংশের কত ভোটার বাদ গেলেন, সেই প্রশ্নেও শুরু হয়েছে বিতর্ক। আরজেডি-র সাংসদ সুধাকর সিংহের দাবি, ‘‘এখনও নিচু তলা থেকে হিসেব আসেনি। তবে দলিত, ওবিসি-দের অনেকে বাদ পড়েছেন, বোঝা যাচ্ছে।’’ পাশাপাশিই চাপানউতোর চলছে মহিলা ভোটার নিয়ে। বিরোধী দলগুলির দাবি, বহু ক্ষেত্রেই একই পরিবারের মহিলাদের অন্য বুথে ভোটার করে দেওয়া হয়েছে! সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন নেতৃত্ব বলছেন, কমিশন এখনও মেশিনে পাঠযোগ্য তালিকা দেয়নি, বুথভিত্তিক চিত্রও মেলেনি স্পষ্ট করে। মহিলা ভোটার বাদ যাওয়া এবং নতুন ভোটারের অন্তর্ভুক্তিতে গোলমালের সম্ভাবনা তাঁরা বিশদে পরীক্ষা করে দেখছেন। বিজেপির তরফে অমিত মালব্য, জয়বীর শেরগিলেরা অবশ্য পাল্টা প্রশ্ন তুলছেন, খসড়া তালিকার উপরে আবেদন প্রক্রিয়ার সময়ে বিরোধীরা এত কম অভিযোগ জমা দিয়েছেন কেন!
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)