E-Paper

মহুয়া-বিনোদ তরজা অব্যাহত

রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, কোনও রুদ্ধদ্বার সংসদীয় কমিটির বৈঠক নিয়ে বাইরে সংবাদমাধ্যমের কাছে পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়ে মুখ খোলা, চর্চা এবং রাজনৈতিক চাপানউতোর সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:১৫
(বাঁ দিকে) মহুয়া মৈত্র। বিনোদ সোনকর (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

(বাঁ দিকে) মহুয়া মৈত্র। বিনোদ সোনকর (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে ওঠা ‘ঘুষের বদলে প্রশ্ন’ অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ডাকা সংসদের এথিক্স কমিটির বৈঠকে বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক দক্ষযজ্ঞ ঘটেছে। চব্বিশ ঘণ্টা পরেও যার রেশ অব্যাহত। কৃষ্ণনগরের সাংসদের বক্তব্য, কমিটির চেয়ারম্যান একের পর এক ‘সস্তা’, ‘নারীবিদ্বেষী’ প্রশ্ন করেছেন তাঁকে। ইচ্ছে করে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কাটাছেঁড়া করার চেষ্টা হয়েছে। অন্য দিকে এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যান বিনোদ সোনকর রীতিমতো সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছেন, শুধুমাত্র সেই প্রশ্নগুলিই মহুয়াকে করা হয়েছিল, যা তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। উত্তর এড়াতেই মহুয়া অশান্তি তৈরি করেছেন। আবার এই বৈঠক ডাকা হবে কি না, কবে ডাকা হবে, কবেই বা তিনি স্পিকারকে রিপোর্ট জমা দেবেন তা স্পষ্ট করতে চাননি সোনকর।

রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, কোনও রুদ্ধদ্বার সংসদীয় কমিটির বৈঠক নিয়ে বাইরে সংবাদমাধ্যমের কাছে পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়ে মুখ খোলা, চর্চা এবং রাজনৈতিক চাপানউতোর সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়নি। বৈঠক নিয়ে এত জলঘোলাও বিশেষ হয়নি। মহুয়ার দল তৃণমূল রাজনৈতিক ভাবে বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেনি। কিন্তু ঘরোয়া ভাবে জানানো হচ্ছে যে, এর ফলে মহুয়া যে বিজেপি-র শুধু রাজনৈতিকই নয়, পুরুষতান্ত্রিক আক্রমণেরও শিকার হচ্ছেন, সেই বার্তা যাচ্ছে। যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের জন্য ভালই। গত কালই তৃণমূলের মন্ত্রী শশী পাঁজা মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে বক্তব্য পেশ করেছিলেন। আজ তৃণমূলের অন্য এক মহিলা নেতা তথা সাংসদ শতাব্দী রায়ও সেই পথেই হেঁটেছেন। শুক্রবার বীরভূমের তারাপীঠে বীরভূমের তৃণমূল সাংসদের মন্তব্য, ‘‘মহুয়ার জনপ্রিয়তা বেশি। তাই তাঁকে নিশানা করছে বিজেপি।’’ সতীর্থের দৃঢ় মানসিকতারও প্রশংসা করেন শতাব্দী। তাঁর কথায়, ‘‘মহুয়া খুব দৃঢ় চরিত্রের মহিলা এবং কড়া সাংসদ। এথিক্স কমিটি যে প্রশ্ন করেছে তা নিয়ে আপত্তি তো বিরোধীরা সবাই করেছেন, একা মহুয়া তো নয়!’’

মহুয়ার বক্তব্য, “আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খুব সস্তা ও খেলো প্রশ্ন করে গিয়েছেন কমিটির চেয়ারম্যান। বিজেপি-র অন্য সাংসদেরা কেউ কোনও কথা বলেননি। কিন্তু চেয়ারম্যান জানতে চাইছিলেন গত পাঁচ বছরে আপনি আপনার প্রাক্তন বন্ধুর সঙ্গে কোথায় কোথায় গিয়েছেন? আপনি এক জনকে বন্ধু বলছেন, কিন্তু এই বন্ধুত্বের কথা তাঁর স্ত্রী জানেন কি না? আপনি হোটেলে তাঁর সঙ্গে থেকেছেন কি না? আপনি রাতে কত বার কথা বলতেন? এ সব কী ধরনের প্রশ্ন?” এর পরেই তিনি বলেন, “আমি বারবার করে চেয়ারম্যানকে বলছিলাম, আমি এক জন নাগরিক, আমার গোপনীয়তার অধিকার রয়েছে। আমি এক জন সাংসদও বটে। আপনি আমায় পোর্টালের লগ ইন, পাসওয়ার্ড নিয়ে প্রশ্ন করুন, কী উপহার পেয়েছি তা জানতে চান। এই সব প্রশ্নেরই উত্তর আমি দিয়েছি। কিন্তু এই সস্তা নারীবিদ্বেষী প্রশ্ন কেন? আসলে চেয়ারম্যানই বা কী করবেন, তাঁর উপরে নির্দেশ ছিল এই ধরনের সব প্রশ্ন করার।”

অন্য দিকে চেয়ারম্যান সোনকরের কথায়, “মহুয়া মৈত্রের সম্পূর্ণ অধিকার ছিল তিনি যেগুলির উত্তর দিতে চাইবেন শুধুমাত্র সেগুলিরই জবাব দেওয়ার। যেগুলির জবাব দিতে চাইবেন না, সেগুলির জবাব দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। সেটা না করে তিনি তদন্তে বাধা তৈরি করতে চাইলেন। হট্টগোল, অশান্তি তৈরি করলেন। যে সব শব্দ তিনি কমিটি এবং তার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছেন তা এক জন সাংসদ এবং এক জন নারীর পক্ষে অশোভন। তিনি উত্তর এড়াতে চেয়ে তদন্তে বাধা সৃষ্টি করতে চেয়েছেন। অথচ শুধুমাত্র সেই সব প্রশ্নই তাঁকে করা হয়েছে যে বিষয়গুলি নিয়ে অভিযোগ রয়েছে।”

গত কাল যাঁরা মহুয়ার সঙ্গে আপত্তি জানাতে জানাতে এথিক্স কমিটি থেকে বেরিয়ে আসেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন সিপিএম সাংসদ পি আর নটরাজনও। আজ সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীকেও দেখা গিয়েছে এথিক্স কমিটির সমালোচনায় মুখর হতে। তিনি তাঁর এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, “সংসদের এথিক্স কমিটি মহুয়া মৈত্রকে ডেকে অনৈতিক প্রশ্ন করতে উৎসাহী। তারাই চূড়ান্ত অসংসদীয় এবং নোংরা বক্তব্যের অভিযোগে বিজেপি সাংসদ বিদুরীকে ডাকতে সাহস পায় না।” এর পরে অবশ্য বিজেপি-র পাশাপাশি তৃণমূলকেও আক্রমণ করে সিপিএম নেতার বক্তব্য, “রাজ্যের তৃণমূল-বিজেপির সাংসদেরা প্রকাশ্য ভিডিয়োতে হাতে হাতে টাকা নিয়ে ধরা পড়েছেন। কোথায় এথিক্স কমিটি? সবচেয়ে আন এথিকাল তো এথিক্স কমিটি নিজেই।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

TMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy