কারা জিততে পারে, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে। তার চেয়েও বেশি আলোচনা ভোটদানে নতুন নজির গড়ার সম্ভাবনা নিয়ে। গত বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় বিহারের ১৮টি জেলার ১২১টি বিধানসভা কেন্দ্রে প্রথম দফায় ভোট পড়েছিল ৬৫.০৮ শতাংশ। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফায় ১২২টি আসনেও সেই প্রবণতা বজায় থাকলে নতুন ইতিহাস গড়বে বিহার।
মঙ্গলবার দ্বিতীয় তথা শেষ দফায় ভোটগ্রহণ হবে উত্তর এবং পূর্ব বিহারের ২০টি জেলায়— পশ্চিম চম্পারণ, পূর্ব চম্পারণ, শিওহর, সীতামঢ়ী, মধুবনী, সুপৌল, অরারিয়া, কিষাণগঞ্জ, পূর্ণিয়া, কাটিহার, ভাগলপুর, বাঁকা, জামুই, নওয়াদা, গয়া, জেহানাবাদ, অরওয়াল, ঔরঙ্গাবাদ, রোহতাস এবং কৈমুরে। সীমাঞ্চল, মগধ, কোশী এবং তিরহূত-মিথিলাঞ্চলের এই ভোটে ১৩৬-জন মহিলা-সহ মোট প্রার্থীর সংখ্যা ১৩০২। ৪৫৩৯৯টি ভোটকেন্দ্রে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করবেন প্রায় ৩ কোটি ৭০ লক্ষ ভোটদাতা। এঁদের মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৯৫ লক্ষ পুরুষ। ১ কোটি ৭৪ লক্ষ মহিলা।
আরও পড়ুন:
পূর্ব বিহারের সীমাঞ্চলের চার জেলা (কাটিহার, কিষাণগঞ্জ, পূর্ণিয়া এবং অরারিয়া) ছাড়া অন্য এলাকাগুলিতে এনডিএ জোট বেশি শক্তিশালী বলে সাম্প্রতিক সময়ের ভোটের ফলাফল জানাচ্ছে। ২০২০ সালের বিধানসভা ভোটে এই আসনগুলির মধ্যে এনডিএ ৬৬ এবং বিরোধী জোট মহাগঠবন্ধন ৪৯টিতে জিতেছিল। সাতটি আসনে জিতেছিলেন নির্দল এবং অন্য দলগুলির প্রার্থীরা। এর মধ্যে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত সীমাঞ্চলে ২০২০ সালের বিধানসভা ভোটে হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসির দল মজলিস-ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (মিম) পাঁচটি দখল করেছিল। সামগ্রিক হিসাবে ‘মিম’ প্রার্থীরা প্রায় পৌনে ২ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন।
দ্বিতীয় দফার ভোটে উল্লেখযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন, প্রাক্তন স্পিকার উদয়নারায়ণ চৌধরি (আরজেডি), প্রয়াত প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দিগ্বিজয় সিংহের কন্যা তথা এশিয়ান গেমসে পদকজয়ী শ্যুটার শ্রেয়সী সিংহ (বিজেপি), প্রয়াত বলিউড তারকা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের তুতো ভাই নীরজ কুমার সিংহ (বিজেপি), প্রভাবশালী বিজেপি মন্ত্রী প্রেম কুমার, ‘বাহুবলী’ বুটন সিংহের স্ত্রী তথা নীতীশ কুমার মন্ত্রিসভার সদস্যা লেসি সিংহ (জেডিইউ), সমাজমাধ্যম প্রভাবী তিরুপতিকুমার তিওয়ারি ওরফে মণীশ কাশ্যপ (জনসুরাজ পার্টি), এ বারের ভোটের ধনীতম প্রার্থী (প্রায় ৩৭০ কোটি টাকার মালিক) রণকৌশল প্রতাপ সিংহ (বিকাশশীল ইনসান পার্টি), প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগন্নাথ মিশ্রের পুত্র তথা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী নীতীশ মিশ্র (বিজেপি), কৃষক আন্দোলনের নেতা রামনারায়ণ যাদব (সিপিআই), প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রাজেশ কুমার এবং বিহার বিধানসভায় কংগ্রেসের দলনেতা তথা জেএনইউ ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সভাপতি শাকিল আহমেদ খান (কড়ওয়া)।
ভোটপর্ব শেষের পরে নির্বাচন কমিশনের বিধি মেনে বিভিন্ন বুথফেরত সমীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে। প্রধান যুযুধান দুই প্রতিপক্ষ, এনডিএ এবং মহাগঠবন্ধনের ‘সম্ভাবনা’র আঁচ মিলতে পারে তাতে। এ ছাড়া, প্রাক্তন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের নতুন দল জনসুরাজ পার্টি কেমন ফল করতে পারে, তারও ইঙ্গিত দিতে পারে বুথফেরত সমীক্ষা। যদিও ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাস বলছে, এমন সমীক্ষার পূর্বাভাস অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত ফলের সঙ্গে মেলে না। সাম্প্রতিক হরিয়ানা বিধানসভার ভোট তার প্রমাণ। তবে বুথফেরত বা জনমত সমীক্ষার পূর্বাভাস মিলে যাওয়ার নজিরও রয়েছে। প্রকৃত ফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী শুক্রবারের (১৪ নভেম্বর) গণনাপর্ব পর্যন্ত। ঘটনাচক্রে, শেষ দফার ভোটের আগে সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে বিরোধী জোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তেজস্বী যাদব, নতুন করে কারচুপির আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।