নীল হওয়া লুখা নদী। মেঘালয়ের পূর্ব জয়ন্তীয়া পাহাড়ে। নিজস্ব চিত্র। ।
প্রতি বছরের মতোই এ’বছরও মেঘালয়ের পূর্ব জয়ন্তীয়া পাহাড়ে লুভা তথা লুখা নদীর জল পুরো নীল হয়ে গেল। আরও আট কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে সোনাপুরের কাছে লুভা নদী বাংলাদেশে ঢুকে লুবাছড়া নাম নিয়ে সিলেট জেলার সুরমা নদীতে পড়ে। লুভার বিষাক্ত জল মিশে সুরমা নদীতে বিপন্ন প্রজাতির গোয়ালপাড়া লোচ মাছ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ।
মেঘালয় সরকার জলের রং বদল ঠেকাতে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি। কেন এই ভাবে নদীর জলের রং বদলে যায়- তার কারণও নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেনি। নারপু এলাকার খাসি ছাত্র সংগঠন জানায়, ২০০৪ সাল ও ২০০৬ সালে সেখানে দু’টি সুবৃহৎ সিমেন্ট সংস্থার কারখানা তৈরি হয়। এর পরেই ২০০৭ সাল থেকে লুভার নীল হয়ে ওঠা শুরু। পাশাপাশি কানাইঘাটে চলছে বড় বড় পাথর খাদান। তাদের দাবি, থাংস্কাই ও লামস্নং এলাকায় থাকা চুনাপাথর খনি, সিমেন্ট কারখানা ও কয়লা খনিগুলিই রং বদলের জন্য দায়ী। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, জলে অম্লতা বেশি। ক্যালসিয়াম ও সালফেটের মাত্রও বেশি। এমন চলতে থাকলে গোয়ালপাড়া লোচের মতো আরও অনেক জলজ প্রাণীই লুভা-সুরমা থেকে হারিয়ে যাবে। খাসি ছাত্র সংগঠন লুভার রং নীল হওয়ার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে সরকারকে তিন সপ্তাহের চরমসীমা বেঁধে দিয়েছে।
আইইউসিএন-এর লাল তালিকায় থাকা গোয়ালপাড়া লোচ মাছটি আগে লুভছড়া ও সুরমা নদীতে প্রচুর পরিমাণে দেখতে পাওয়া যেত। কিন্তু আইইউসিএন জানায়, জলের চরিত্র বদল, বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হওয়ার জেরে সেই মাছও লুপ্ত হয়েছে। লুভার জলের রং বদলের সঙ্গে জলের চরিত্রও বদলে যায়। জল হয়ে ওঠে বিষাক্ত। সেখানে থাকা অন্য জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদও অক্সিজেন পায় না। সেই জল লুভাছড়া নাম নিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে সুরমায় মিশতে থাকে। তার ফলে ধীরে ধীরে লুপ্ত হয়েছে গোয়ালপাড়া লোচ।
আইইউসিএন-এর মতে, ২০০৯ সালের মার্চে নেত্রকোণা জেলার সোমেশ্বরী নদীতে শেষ বার গোয়ালপাড়া লোচ দেখা গিয়েছিল। সাড়ে তিন সেন্টিমিটার লম্বা মাছটির বিলুপ্তি বাংলাদেশের বাস্তুতন্ত্রের পক্ষেও বড় ক্ষতি।
শুধু লুভাই নয়, মেঘালয়ের মিন্ত্রা নদীও জোয়াইয়ের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে লামু ও উমসিয়ারিং নামে পাহাড়ি দু’টি নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে জৈন্তাপুর লালাখাল দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে সারি নদী নামে প্রবাহিত হয়েছে। সেটিও পরে সুরমা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মিন্ত্রার জলবাহিত দূষণ ও রাসায়নিকও সুরমায় মিশছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy