Advertisement
E-Paper

প্রশংসা এবং বিতর্ক, দেড় মাস ধরে উভয়েরই সাক্ষী থেকে শেষ হল কুম্ভমেলা

গত বছর থেকে শুরু হয়েছিল প্রস্তুতি। ১৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া কুম্ভমেলা গত দেড় মাসে বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী থেকেছে। কিছু ক্ষেত্রে যেমন প্রশংসা হয়েছে, তেমন বিতর্কও ছড়িয়েছে কিছু ঘটনায়।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:৪৫
উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে কুম্ভমেলায় এসে স্নান করছেন পুণ্যার্থীরা।

উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে কুম্ভমেলায় এসে স্নান করছেন পুণ্যার্থীরা। —ফাইল চিত্র।

প্রায় দেড় মাস ধরে চলা কুম্ভমেলা বুধবার শেষ হল শিবরাত্রির ‘শাহি স্নান’ দিয়ে। শুরু হয়েছিল ১৩ জানুয়ারি। গত দেড় মাসে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের কুম্ভমেলা বার বার উঠে এসেছে আলোচনায়। কখনও প্রশংসায়, কখনও বিতর্কে। বিভিন্ন অদ্ভুত নামধারী সন্ন্যাসীদের দর্শন মিলেছে কুম্ভে। কুম্ভমেলার আয়োজনে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার প্রশংসা হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। আবার পুণ্যার্থীদের পদপিষ্ট হওয়া এবং বেশ কয়েক বারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে বিতর্কও তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে কুম্ভমেলায় সঙ্গমের জল কতটা স্নানযোগ্য, তা নিয়েও।

কুম্ভমেলা আয়োজনের জন্য গত বছর থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিল উত্তরপ্রদেশ সরকার। প্রতি ছয় বছর অন্তর হয় অর্ধকুম্ভ এবং ১২ বছর অন্তর হয় পূর্ণকুম্ভ। এ বছর প্রয়াগরাজে ছিল পূর্ণকুম্ভ। সরকারি হিসাবে ৬৩ কোটিরও বেশি পুণ্যার্থী ত্রিবেণি সঙ্গমে পুণ্যস্নান করেছেন। কুম্ভমেলাকে ঘিরে প্রচুর টাকার ব্যবসাও হয়েছে। কুম্ভ শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ আগেই বণিক সভা জানায়, আনুমানিক তিন লক্ষ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে প্রয়াগরাজে।

অদ্ভুত নামধারী সন্ন্যাসী

এ বারের কুম্ভমেলায় বিভিন্ন অদ্ভুত নামধারী সন্ন্যাসীর সঙ্গে পরিচিত হয়েছে দেশ। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে অভয় সিংহ ওরফে ‘আইআইটি বাবা’কে নিয়ে। তাঁর দাবি, আইআইটি থেকে তিনি এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। সমাজমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। শেষে কুম্ভমেলায় জুনা আখড়া তাঁবু ছাড়েন তিনি। কেউ দাবি করেন, তিনি নিজেই চলে গিয়েছেন তাঁবু ছেড়ে। আবার কেউ দাবি করেন, তাঁকে জুনা আখড়ার তাঁবু থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মোহন্ত রাজপুরীজি মহারাজ ওরফে ‘কবুতর ওয়ালে বাবা’, আত্মপ্রেম গিরি মহারাজ ওরফে ‘মাসকুলার বাবা’ থেকে শুরু করে ‘অ্যাম্বাসাডর বাবা’— এমন অনেক নামের সন্তের দেখা মিলেছে প্রয়াগরাজের কুম্ভমেলায়।

কুম্ভমেলার ব্যবস্থাপনা

কুম্ভমেলা নিয়ে গত বছর থেকেই প্রচার শুরু করেছিল উত্তরপ্রদেশ সরকার। প্রচার চালায় কেন্দ্রও। ফলে পুণ্যার্থীদের ভিড়ও হয় প্রচুর। কোটি কোটি পুণ্যার্থীর ভিড় সামাল দিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন সিসি ক্যামেরা থেকে শুরু করে ড্রোনে নজরদারির ব্যবস্থা করে উত্তরপ্রদেশ সরকার। বর্ষীয়ান নাগরিক এবং বিশেষ ভাবে সক্ষম পুণ্যার্থীদের জন্যও ছিল বিশেষ ব্যবস্থা। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বহুস্তরীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হয় প্রশাসনের তরফে। মেলায় ভিড়ের মধ্যে কেউ হারিয়ে গেলে তাঁদের খুঁজে বার করতেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাযুক্ত প্রযুক্তির সাহায্য নেয় প্রশাসন। কুম্ভে মেলাপ্রাঙ্গণের বিভিন্ন জায়গায় বসানো ডিজিটাল পদ্ধতিতে কাজ করা ‘হারানো ও প্রাপ্তি কেন্দ্র’গুলির সাহায্যে ২০ হাজারেরও বেশি পুণ্যার্থী নিজেদের পরিজনকে খুঁজে পান। কুম্ভগামী পুণ্যার্থীদের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিশেষ ট্রেনও চালায় রেল।

অভিনেতা, শিল্পপতি, রাজনীতিকদের আগমন

এ বারের কুম্ভমেলায় বিভিন্ন রাজনীতিক এবং অভিনেতারা স্নান করেছেন। দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিও এসেছেন পুণ্যস্নান করতে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্নান করছেন কুম্ভমেলার সঙ্গমে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও স্নান করেন সেখানে। এ ছাড়া যোগী আদিত্যনাথ, অমিত শাহ, জেপি নড্ডারাও কুম্ভস্নান করেছেন। হেমা মালিনী, অনুপম খের, রাজকুমার রাও, ক্যাটরিনা কইফের মতো বলিউড অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও স্নান করেছেন। ‘অ্যাপ্‌ল’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জোবসের স্ত্রী লরেন পাওয়েল, ‘কোল্ড প্লে’র সঙ্গীতশিল্পী ক্রিস মার্টিনেরাও কুম্ভস্নান করেছেন ত্রিবেণিতে। কুম্ভে স্নান করে মোদী জানান, তিনি ‘ধন্য’।

পদপিষ্টের মৃত্যু, মেলায় অগ্নিকাণ্ড এবং বিতর্ক

কুম্ভমেলার ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনের তরফে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া থাকলেও তা কতটা বাস্তবসম্মত ছিল, সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে মৌনী অমাবস্যার পুণ্যস্নানের সময়ে। পুণ্যার্থীদের ভিড় সামলাতে ব্যর্থ হয় প্রশাসন। পদপিষ্ট হয়ে অন্তত ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বেশ কয়েক বার বড় অগ্নিকাণ্ডও ঘটেছে। আগুনে কোনও প্রাণহানি না-হলেও পুড়ে গিয়েছে তাঁবু। পর পর এই ঘটনাগুলিতে প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের ‘বিশ্বমানের ভিড় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা’ নিয়ে। কুম্ভমেলায় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। যদিও কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি-সহ অন্য বিজেপি বিরোধী দলগুলিও ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তবে বিজেপি নেতাদের দাবি, পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনা রাখা হয়েছে কুম্ভমেলার জন্য। তৃণমূল সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কুম্ভস্নান সেরে জানিয়েছিলেন, এ “এক দারুণ অভিজ্ঞতা। ওখানকার ব্যবস্থাপনা তুলনাহীন।” দুর্ঘটনার পর উত্তরপ্রদেশ সরকার আরও বেশি তৎপর ও সতর্ক হয়েছে বলেও ওই সময়ে জানিয়েছিলেন সাংসদ।

ত্রিবেণির জল ঘিরে বিতর্ক

জাতীয় পরিবেশ আদালতে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের একটি রিপোর্ট জমা পড়ে। সেখানে জানানো হয়, কুম্ভমেলা শুরুর মুখে প্রয়াগরাজে নদীর বিভিন্ন জায়গায় জলের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, কিছু মাপকাঠির ভিত্তিতে কুম্ভমেলার জল স্নানযোগ্য নয়। মেলা শুরুর পরে পুণ্যার্থীদের ভিড় বৃদ্ধি পেলে জলের মান আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয় রিপোর্টে। তা নিয়েও সমাজবাদী পার্টি এবং কংগ্রেস সমালোচনা শুরু করে। যদিও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী বিধানসভায় সে রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের একটি রিপোর্ট দেখিয়ে দাবি করেন, কুম্ভের জল স্নানযোগ্যই।

ডিজিটাল স্নান

কুম্ভমেলায় এ বারে আলোচনায় উঠে এসেছে ‘ডিজিটাল স্নান’-এর প্রসঙ্গও। যাঁরা কুম্ভ যেতে পারছেন না তাঁদের থেকে হোয়াট্‌সঅ্যাপে ছবি সংগ্রহ করা হয়। পরে সেই ছবি প্রিন্ট করে তা ত্রিবেণির জলে ডোবানো হয়। এর জন্য কেউ পুণ্যার্থীপিছু পাঁচশো টাকা করে, কেউ হাজার টাকা করে সংগ্রহ করেছেন। অনেক ক্ষেত্রে আবার পরিবারের কোনও সদস্য কুম্ভে যেতে না-পারায়, তাঁর ছবি কুম্ভে নিয়ে গিয়ে পুণ্যস্নান করিয়েছেন পরিবারেরই অন্য কেউ।

Kumbh Mela 2025 Prayagraj Uttar Pradesh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy