ভোটার তালিকায় ঘিরে দাবি ও পাল্টা দাবি আছে। নির্বাচন কমিশনের ডাকা বৈঠকে গিয়ে নিজেদের দাবি জানিয়ে আসছেন শাসক ও বিরোধী পক্ষের নেতারা। কিন্তু কোথাও ‘রণং দেহি’ মেজাজে হুঙ্কার নেই! কমিশনের নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় কী ফল মিলছে, সে সব দেখার আগেই রাস্তায় নেমে হইচইও বাধাচ্ছে না কেউ। বাংলার পাশাপাশি একই সঙ্গে শুরু হওয়া ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়া ঘিরে অন্যান্য রাজ্যের ছবি এখনও পর্যন্ত এই রকমই।
বিহারের পরে ভোট-মুখী রাজ্য হিসেবে তামিলনাড়ু, কেরল, অসম, পুদুচেরিতে এসআইআর শুরু হওয়ার ইঙ্গিত ছিলই। অসমে অবশ্য শেষ পর্যন্ত এসআইআর এখন হচ্ছে না। তবে বাংলা, কেরল, তামিলনাড়ু-সহ মোট ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে একই সঙ্গে এসআইআর করছে কমিশন। এর মধ্যে বাম-শাসিত কেরল এবং ডিএমকে-র নেতৃত্বাধীন জোট-শাসিত তামিলনাড়ুর সরকার ঘোষিত ভাবেই এসআইআর-এর পদ্ধতির বিরোধী। তবে রাস্তায় নেমে নানা রকম নিদান না-দিয়ে যত বেশি সম্ভব দলকে সঙ্গে নিয়ে এসআইআর-এর মোকাবিলা করতে চাইছে তারা। আর বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে বিরোধীরা কমিশনের উপরে নজর রেখে চলার কৌশল নিয়েছে।
কেরল বিধানসভায় এসআইআর-এর পদ্ধতি এবং শুধু ২০০২ সালের ভোটার তালিকাকে ভিত্তি হিসেবে মান্য করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সর্বসম্মত প্রস্তাব পাশ হয়েছিল। তার পরে কেরলের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) রতন ইউ কেলকরের ডাকা সর্বদল বৈঠকে বিজেপি বাদে সব দলই একমত হয়েছে এই বিষয়ে। তামিলনাড়ুর সিইও অর্চনা পট্টনাইকের ডাকা বৈঠকে শাসক ডিএমকে-র জোট এসআইআর-এর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, তেমনই বিরোধী এডিএমকে-বিজেপি ওই প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়ে মৃত ও ভুয়ো ভোটার বাদ দেওয়ার দাবি তুলেছে। আরও এক ধাপ এগিয়ে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এবং ডিএমকে নেতা এম কে স্ট্যালিন এসআইআর নিয়ে সরকারের তরফে সর্বদল বৈঠক ডেকেছেন আগামী ২ নভেম্বর। স্ট্যালিনের মতে, ‘‘গত কয়েক বছরে কেন্দ্রের কোনও সাহায্য ছাড়াই তামিলনাড়ু বেশ কয়েকটা প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা করেছে এবং পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া চালিয়েছে। রাজ্যের সব দলের কাছে আমাদের আহ্বান, সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকলেও ২ তারিখের বৈঠকে আসুন এবং সরকারের পাশে দাঁড়ান। এসআইআর-এর নামে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যে ‘ম্যান-মেড’ দুর্যোগ চাপিয়ে দিয়েছে, একসঙ্গেই তার মোকাবিলা করা দরকার!’’
ডিএমকে-র জোটসঙ্গী, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক পি শন্মুগমের বক্তব্য, তাঁরা সরকারের ওই সর্বদল বৈঠকে কী হয়, তার অপেক্ষা করছেন। তার পরে মানুষকে সচেতন করতে নামার পাশাপাশি সহায়তার কাজও করবেন। একই সঙ্গে তিনি জানাচ্ছেন, মৃত ও স্থানান্তরিত ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া সেখানে ধারাবাহিক ভাবেই চলে। তার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে তেমন চাঞ্চল্য নেই। বিজেপি অবশ্য দাবি করছে, রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা থেকে ডিএমকে নজর ঘোরাতে চাইছে। এডিএমকে-র সাংগঠনিক সম্পাদক ডি জয়কুমারের দাবি, কেন্দ্র ধরে মৃত ও ভুয়ো ভোটারের নাম তাঁরা জমা দিয়েছেন। তার কিছু বাদ হয়েছে, বাকিটার দিকে তাঁরা নজর রাখবেন। তবে গোটাটা এমনই নিস্তরঙ্গ যে, বাংলা থেকে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য চেন্নাইয়ে দলীয় কর্মসূচিতে গিয়ে এসআইআর-এর কোনও আঁচই টের পাননি! অথচ নিজের রাজ্যে তাঁদের রোজ এসআইআর নিয়ে নানা বিবৃতি দিতে হয়।
বিজেপি-শাসিত উত্তরপ্রদেশে সিইও নবদীপ রিনওয়া সর্বদল বৈঠক করেছেন এর মধ্যে। কংগ্রেস বা সমাজবাদী পার্টি কমিশনের এসআইআর প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারই সঙ্গে সঙ্গে কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছে, বৈধ ভোটারের নাম বাদ যাওয়া চলবে না। মানুষের কাছে তাদের আর্জি, শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোটার তালিকায় নাম যাচাইয়ের কাজ সেরে নিতে, যে কোনও প্রয়োজনে তারা সহযোগিতা করবে। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের রাজ্য গুজরাতে সিইও পি ভারতী একই ভাবে বৈঠক সেরে নিয়েছেন। বুথ লেভল অফিসারদের (বিএলও) প্রশিক্ষণ চলছে। প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অশোক চাভডা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, কোনও প্রকৃত ভোটারের নাম বাদ গেলে তাঁরা ছেড়ে কথা বলবেন না। তবে তেমন কিছু না হওয়া পর্যন্ত আপাতত শান্তি-কল্যাণ!
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)