প্রাক্-স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে দেশবাসীকে ভারতের ‘প্রাচীন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ’ মনে করালেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। মনে করালেন দেশের ‘মজবুত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান’গুলির কথাও। ভোটার তালিকার ‘বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’কে (এসআইআর) ঘিরে বিরোধী দলগুলি যখন গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তখন রাষ্ট্রপতি স্পষ্ট ভাষায় আস্থা প্রকাশ করলেন দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো এবং সংবিধানের উপর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধের আবহে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠল দেশের অর্থনীতির ‘বৃদ্ধি’ এবং ‘আত্মনির্ভরতা’ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতির মূল্যায়ন।
রাষ্ট্রপতি মুর্মু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ শুরু করেন। প্রথমেই তিনি ভারতের সুপ্রাচীন গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করান। রাষ্ট্রপতির কথায়, ‘‘বিশ্বের প্রাচীনতম প্রজাতন্ত্রের ভূমি হল ভারত।’’ দেশকে ‘গণতন্ত্রের জননী’ সম্বোধন করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘‘স্বাধীনতা পাওয়ার পরে আমরা এমন গণতন্ত্রের পথে এগিয়েছিলাম, যেখানে সকল প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে ভোটাধিকার দেওয়া হয়েছিল। অনেক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লিঙ্গ, ধর্ম এবং অন্য অনেক বিষয়ের ভিত্তিতে ভোটাধিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকত। আমরা তা করিনি।’’
দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলির প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি প্রথমেই বলেন যে, ‘‘সংবিধানের ভিত্তিপ্রস্তরের উপরে আমাদের গণতন্ত্রের ভবন নির্মিত হয়েছে।’’ তার পরে বলেন, ‘‘আমরা গণতন্ত্রের উপরে নির্ভরশীল এমন সব সাংবিধানিক সংস্থা তৈরি করেছি, যাতে আমাদের গণতান্ত্রিক কার্যশৈলী মজবুত হয়েছে।’’
রাষ্ট্রপতির ভাষণে দেশভাগের কথাও উঠে এসেছে বৃহস্পতিবার। ১৪ অগস্ট যে হেতু দেশ ভাগ হয়ে পাকিস্তান জন্ম নেওয়ার তারিখ, তাই রাষ্ট্রপতি মুর্মু বলেন, ‘‘এই দিনটিকে আমরা বিভাজন বিভীষিকা স্মৃতি দিবস হিসেবে পালন করি। দেশভাগের ফলে ‘ভয়াবহ হিংসা’ এবং ‘লক্ষ লক্ষ মানুষের উদ্বাস্তু হওয়া’র কথা রাষ্ট্রপতির ভাষণে উঠে এসেছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে দেশভাগকে তিনি ‘ইতিহাসের ভুল’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ইতিহাসের ভুলগুলির শিকার হওয়া মানুষদের আজ আমরা শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।’’
পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলা এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি মুর্মু বলেছেন, ‘‘যখন রাষ্ট্রের সুরক্ষার প্রশ্ন আসে, তখন আমাদের সশস্ত্র বল যে কোনও পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার ক্ষমতা যে রাখে, তা অপারেশন সিঁদুর প্রমাণ করে দিয়েছে।’’ রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত যে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মানবতার লড়াইয়ের দৃষ্টান্ত হিসেবে অপারেশন সিঁদুর ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।’’
ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি মুর্মু আর্থিক বৃদ্ধির হার উল্লেখ করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের অর্থনীতিকে সম্প্রতি ‘মৃত অর্থনীতি’ আখ্যা দেন। লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীও ট্রাম্পের মন্তব্যকে সমর্থন করে ভারতের অর্থনীতিকে ‘মৃত’ বলে দাবি করেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি মুর্মু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ৬.৫ শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধির হারের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘‘বিশ্বের প্রধান অর্থনীতিগুলির মধ্যে ভারতীয় অর্থনীতি সবচেয়ে দ্রুত হারে বাড়ছে।’’ ভারত ‘আত্মনির্ভর রাষ্ট্র’ হওয়ার পথে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে বলে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি দেশের আর্থিক নীতির প্রশংসা করেছেন।
তাঁর ভাষণে উঠে এসেছে দেশের পরিকাঠামো উন্নয়নের কথা। রেল, মেট্রোরেল, সড়ক পরিবহণ, শহরগুলির পরিকাঠামো উন্নয়ন-সহ নানা ক্ষেত্রে কী কী কাজ হচ্ছে, তার কথা রাষ্ট্রপতির মুখে শোনা গিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার যে সব সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালাচ্ছে, সে সবের কথাও রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেছেন।