E-Paper

রাজ্যসভায় শ্রিংলা, বার্তা কি উত্তরকে

হর্ষবর্ধন শ্রিংলা গত লোকসভা ভোটের আগে থেকেই উত্তরবঙ্গে সামাজিক কর্মসূচি শুরু করে দেন। ভোটে প্রার্থী না হলেও তিনি সেই কাজ চালিয়ে যান। আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট। তার আগে উত্তরবঙ্গের তৃণমূল-বিজেপির লড়াই শুরু হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৫ ০৭:৪৭
হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।

হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। —ফাইল চিত্র।

গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব উত্তরবঙ্গের ভূমিপুত্র, প্রাক্তন বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলাকে দার্জিলিং থেকে প্রার্থী করার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজু বিস্তাকেই ফের প্রার্থী করা হয়। এ বার নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ তাঁদের পছন্দের কূটনীতিক হর্ষবর্ধনকে রাষ্ট্রপতি মনোনীত সাংসদ হিসেবে রাজ্যসভায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন।

প্রাক্তন বিদেশসচিব শ্রিংলার সঙ্গে মুম্বইয়ের ২৬/১১ সন্ত্রাসবাদী হামলার মামলায় বিখ্যাত সরকারি আইনজীবী উজ্জ্বল নিকম, সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ ইতিহাসবিদ মীনাক্ষী জৈন এবং সিপিএমের হিংসায় নিজের দু’পা হারানো কেরলের বিজেপি নেতা সি সদানন্দন মাস্টারকেও রাষ্ট্রপতি মনোনীত সাংসদ হিসেবে রাজ্যসভায় পাঠানো হচ্ছে।

হর্ষবর্ধন শ্রিংলা গত লোকসভা ভোটের আগে থেকেই উত্তরবঙ্গে সামাজিক কর্মসূচি শুরু করে দেন। ভোটে প্রার্থী না হলেও তিনি সেই কাজ চালিয়ে যান। আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট। তার আগে উত্তরবঙ্গের তৃণমূল-বিজেপির লড়াই শুরু হয়েছে। সে সময়ে শ্রিংলাকে রাজ্যসভায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত উত্তরবঙ্গের মানুষকে বিজেপির সদর্থক বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২০২০ থেকে ২০২২-এর সময়কালে বিদেশসচিব ছিলেন শ্রিংলা। কোভিডের সময় বিভিন্ন দেশকে করোনার টিকা দিয়ে সাহায্য, ইউক্রেন থেকে ভারতীয় পড়ুয়াদের ফিরিয়ে আনা, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার ক্ষেত্রে তিনি নেতৃত্ব দেন। সম্প্রতি অপারেশন সিঁদুর-এর পরে বিভিন্ন দেশে যে সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়েছিল, তার একটিতে শ্রিংলা ছিলেন।

রাজনৈতিক শিবিরের জল্পনা, বিদেশসচিব পদে শ্রিংলার পূর্বসূরি এস জয়শঙ্করের মতোই কি তাঁকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় নিয়ে এসে কূটনৈতিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো হবে? সরকারি সূত্রের বক্তব্য, রাষ্ট্রপতি মনোনীত রাজ্যসভার সাংসদকে সাধারণত মন্ত্রী করা হয় না। যদিও নিয়মে বাধা নেই। মনোনীত সদস্য হিসেবে শ্রিংলাদের সামনে ছ’মাসে কোনও রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার সুযোগ থাকবে। তবে শ্রিংলার কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা সংসদীয় কমিটিতে বা সংসদের ভিতরে-বাইরে মোদী সরকারের বিদেশনীতির পক্ষে সওয়াল করতে ও নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হবে। বিশেষত বাংলাদেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে শ্রিংলার যোগাযোগ বর্তমান পরিস্থিতিতে কার্যকরী হয়েউঠতে পারে।

আজ খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজের ‘এক্স’ হ্যান্ডলে লিখেছেন, ভারতের বিদেশনীতি ও জি-২০-তে ভারতের সভাপতিত্বের সময় শ্রিংলা গুরুত্ত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তাঁর ভাবনার অভিনবত্ব সংসদকে সমৃদ্ধ করবে। শ্রিংলা নিজেই জানিয়েছেন, ‘‘আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশকে মজবুত করতে প্রয়োজনীয় চেষ্টাচালিয়ে যাব।’’

পহলগামের হামলা, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রেক্ষিতে উজ্জ্বল নিকমকে রাজ্যসভায় পাঠানোও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। আজমল কসাবের ফাঁসির জন্য সওয়াল করে প্রচারের আলোয় আসা নিকম গত লোকসভা নির্বাচনে মহারাষ্ট্রের ভোটে লড়লেও হেরে যান। মহারাষ্ট্রে বর্তমানে মরাঠি বনাম হিন্দি ভাষার বিবাদের প্রেক্ষিতে নিকম জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁকে নতুন দায়িত্বের কথা জানাতে ফোন করে বলেছিলেন, হিন্দিতে বলব না মরাঠিতে! তার পরে মরাঠিতেই কথা বলেন মোদী। কংগ্রেসের অভিযোগ, ২৬/১১-র মামলার সময় কসাবকে জেলে বিরিয়ানি খাওয়ানো হচ্ছে বলে মিথ্যে প্রচার করেছিলেন নিকম। পরে নিজেই মেনে নেন, তিনি গল্প বানিয়েছিলেন। সেই ভুয়ো খবর ছড়ানোরই পুরস্কার পেলেন তিনি।

আগামী বছর কেরলের ভোটের আগে রাজ্যের বিজেপি নেতা সদানন্দন মাস্টারকে রাজ্যসভায় মনোনীত সাংসদ হিসেবে পাঠানোও বিজেপির ভোট বার্তা হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক শিবির। অতীতে মোদী নিজে কেরলে প্রচারে গিয়ে সদানন্দনকে মঞ্চে হাজির করে বলেছিলেন, কমিউনিস্টদের হামলায় তাঁর দু’পা চলে যাওয়ায় তিনি নকল পা নিয়ে হাঁটেন। কেরলে সঙ্ঘ পরিবারের ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’-এ সদানন্দন দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন।

মন্দির-মসজিদ রাজনীতির প্রেক্ষিতে ইতিহাসবিদ মীনাক্ষী জৈনকে রাজ্যসভায় পাঠিয়ে গেরুয়া শিবির নিজের মতাদর্শ তুলে ধরতে চাইছে বলে বিরোধী শিবির মনে করছে। কারণ, দিল্লির গার্গী কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক মীনাক্ষী মোদী জমানায় নতুন করে ইতিহাস লেখা এবং দেশের বিভিন্ন মসজিদ আসলে মন্দির ভেঙে তৈরি হয়েছে বলে প্রচারে বরাবর তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন।

রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতি মনোনীত সাংসদদের জন্য ১২টি আসন থাকে। এই চার জনকে রাজ্যসভায় পাঠানোয় সেই ১২টি আসনই পূরণ হয়ে গেল। শুধুমাত্র জম্মু-কাশ্মীরের চারটি ও হরিয়ানার একটি আসন এখন রাজ্যসভায় খালি রয়েছে। বাদল অধিবেশনের আগে রাজ্যসভার ২৪০ জনের মধ্যে বিজেপির এনডিএ-র কাছে ১২ জন মনোনীত সাংসদ-সহ এখন ১৩৫ জনের সমর্থন রয়েছে। মনোনীত সাংসদরা সাধারণত সরকারকেই সমর্থন করে থাকেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Rajya Sabha Harsh Vardhan Shringla Droupadi Murmu PM Narendra Modi Amit Shah

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy