ছবি পিটিআই।
বিহারের ভরা ভোট মরসুমে পরিযায়ী শ্রমিকদের মনে জমাট বেঁধে থাকা ক্ষোভ তাঁর মাথাব্যথা। করোনা ঠেকাতে তাঁর সরকারের হঠাৎ ডাকা লকডাউন দরিদ্র, খেটে খাওয়া মানুষের কোমর ভেঙে দিয়েছে বলে প্রতিদিন আক্রমণ শানাচ্ছেন বিরোধীরা। অভিযোগের সেই বল বিরোধীদের কোর্টে ফেরত পাঠাতে এ বার তাঁদের বিরুদ্ধেই গরিবের আত্মসম্মানে আঘাতের অভিযোগ তুললেন নরেন্দ্র মোদী। বোঝানোর চেষ্টা করলেন, ‘স্বনিধি প্রকল্পে’র সহজ ও সস্তার ঋণে ভর করে কী ভাবে পায়ের তলায় নতুন করে মাটি খুঁজে পাচ্ছেন ‘দিন আনা-দিন খাওয়া’ অনেক মানুষ। যার পাল্টা কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার কটাক্ষ, এই কঠিন পরিস্থিতিতে ধার নয়, বরং আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন ছিল অতিমারিতে অশেষ দুর্গতির মুখে পড়া মানুষগুলোর।
আত্মনির্ভর প্যাকেজের অঙ্গ হিসেবে হকার, ঠেলাওয়ালা, ফুটপাত-বিক্রেতাদের জন্য ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বন্ধক ও গ্যারান্টরহীন ঋণের সুবিধার কথা ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। মঙ্গলবার তেমন ঋণ নেওয়া উত্তরপ্রদেশের প্রায় পৌনে তিন লক্ষ ব্যবসায়ীর উদ্দেশে ভিডিয়ো-বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গরিবের নামে যাঁরা রাজনীতি করেন, তাঁরা এমন আবহ তৈরি করেছিলেন যেন, দরিদ্রদের ঋণ দেওয়া মানে সেই টাকা আর ফেরত পাওয়া যাবে না।’’
বিরোধীদের পাল্টা প্রশ্ন, দরিদ্রদের দেওয়া ঋণের টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না, এ কথা তাঁরা বললেন কখন? তাঁরা তো বরং প্রশ্ন তুলেছেন নীরব মোদী, মেহুল চোক্সীর মতো রাঘব-বোয়ালদের ব্যাঙ্কে ধারের টাকা শোধ না-দেওয়ার বিষয়ে! প্রিয়ঙ্কার কথায়, “লকডাউনে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে হকার, ঠেলাওয়ালা, ফুটপাত-বিক্রেতা, ছোট ব্যবসায়ীদের। গিয়েছে রুজি-রুটি।…সস্তার ঋণের বদলে এঁদের প্রয়োজন ছিল আর্থিক সহায়তা।” নিজের ভিডিয়ো-বার্তায় দরিদ্রদের চরম দুর্দশার প্রসঙ্গ তুলেছেন কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গাঁধীও। আর এ দিনই পেট্রল-ডিজেলের উপরে চড়া করের প্রসঙ্গে মোদীকে কটাক্ষ করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর টুইট, “প্রধানমন্ত্রীজি, আমনজনতার উপরে লুটপাট বন্ধ করুন। বন্ধুদের (ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিদের) পয়সা দেওয়া ছাড়ুন। আত্মনির্ভর হোন।”
এ দিন ছিল খোদ প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান। তাই তাঁর সঙ্গে ভিডিয়ো-বার্তালাপে প্রত্যাশিত ভাবেই তাঁর সরকারের ঋণ প্রকল্পের ঢালাও প্রশংসা করেছেন আগরার প্রীতি, বারাণসীর অরবিন্দ মৌর্য, লখনউয়ের বিজয় বাহাদুররা। কিন্তু তার মধ্যেও মোদীকে শুনতে হয়েছে, লকডাউনের সময়ে কী প্রবল কষ্টের মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁদের। এই ক্ষোভ যে বিহারের ভোটে ছাপ ফেলতে পারে, সেই আশঙ্কা এনডিএ জোটের আছে। বিশেষত লকডাউনের সময়ে যে ভাবে ওই রাজ্যে প্রবল কষ্টের মধ্যে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়েছেন বহু পরিযায়ী শ্রমিক। সম্ভবত সে কথা মাথায় রেখেই প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ব্যাঙ্ক থেকে কম সুদে ও সহজে এই ধার নিয়ে ব্যবসা করতে পারলে, ভিন্ রাজ্যে গিয়ে কাজ খোঁজার বাধ্যবাধকতা কমবে। আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবেন বহু দরিদ্র। মোদীর দাবি, ১.৭ লক্ষ কোটি টাকার গরিব কল্যাণ প্রকল্প থেকে শুরু করে ২০ লক্ষ কোটির আত্মনির্ভর প্যাকেজ- সমস্ত কিছুই ঘোষণা করা হয়েছে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে। মোদীর দাবি, শুধু এই ঋণের জন্য সারা দেশে আবেদন জমা পড়েছে অন্তত ২৫ লক্ষ। যার মধ্যে ১২ লক্ষকে স্বীকৃতি দিয়েছে ব্যাঙ্ক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy