Advertisement
E-Paper

শবরীমালায় কী হবে, প্রশ্ন

অযোধ্যার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট যে ভাবে হিন্দুদের ‘আস্থা ও বিশ্বাস’-কে গুরুত্ব দিয়েছে, তাতে প্রশ্ন উঠেছে, সেই মাপকাঠিতে শবরীমালার দ্বার কি ফের মহিলাদের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৪০
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

আস্থা-বিশ্বাস বা ধর্মীয় আচার নয়। শবরীমালার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট গুরুত্ব দিয়েছিল সংবিধান প্রদত্ত নারী-পুরুষের সমানাধিকারকে। এক বছর আগে পুরনো প্রথা ভেঙে শবরীমালার দরজা মহিলাদের জন্য খুলে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।

অযোধ্যার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট যে ভাবে হিন্দুদের ‘আস্থা ও বিশ্বাস’-কে গুরুত্ব দিয়েছে, তাতে প্রশ্ন উঠেছে, সেই মাপকাঠিতে শবরীমালার দ্বার কি ফের মহিলাদের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে?

২০১৮-র সেপ্টেম্বরে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ শবরীমালার দরজা মহিলাদের জন্য খুলে দেয়। সেই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য প্রায় ৫০টি আর্জি জমা পড়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। বর্তমান প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বেঞ্চে সে সব আর্জির শুনানি হয়েছে। আগামী সপ্তাহে অবসরের আগে প্রধান বিচারপতি তার রায় ঘোষণা করবেন। আইনজীবী মহলের প্রশ্ন, রামমন্দিরের মতো শবরীমালার ক্ষেত্রেও কি ‘আস্থা ও বিশ্বাস’ গুরুত্ব পাবে? অযোধ্যা রায়ের পরে রামলালার আইনজীবী কে এন ভাটের মত, এই রায়ের প্রভাব শবরীমালা রায়ের উপরেও পড়বে। তাঁর যুক্তি, শীর্ষ আদালত স্পষ্ট বলে দিয়েছে, বিতর্কিত জমি রামের জন্মভূমি কি না, সেটা প্রশ্ন নয়। আসল বিষয় হল, হিন্দুরা বিশ্বাস করে ওটা রামের জন্মভূমি। এবং তা প্রমাণিত।

শবরীমালায় মহিলাদের প্রবেশের বিরোধী বিজেপি। কেরলের বাম সরকার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কার্যকর করতে গেলে তারা রাস্তায় নেমে আটকানোর চেষ্টা করেছিল। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ সে সময় বাম সরকারকে হঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘হিন্দু ধর্মে নানা আচার রয়েছে। শবরীমালার দেবতা চির ব্রহ্মচারী। সেটাই এখানকার বিশেষত্ব। একে রক্ষা করতে হবে।’’ কিন্তু বিজেপির আপত্তি খারিজ করে শবরীমালায় মহিলা পূণ্যার্থীদের ঢোকার পথ করে দেয় বাম সরকার।

শবরীমালায় ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সি ঋতুমতী মহিলাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। ভক্তদের বিশ্বাস, শবরীমালার প্রধান বিগ্রহ আয়াপ্পা ব্রহ্মচারী। ঋতুমতী মহিলারা মন্দিরে প্রবেশ করলে তাঁর কৌমার্যব্রত ভেঙে যেতে পারে। কিন্তু অবসরের আগে তাঁর শেষ রায়ে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র বলেন, লিঙ্গভিত্তিক এই বৈষম্য ভিত্তিহীন, অযৌক্তিক এবং সমর্থনযোগ্য নয়। সংবিধান এর পক্ষে নয়। ওই বেঞ্চের বিচারপতি ইন্দু মলহোত্র বাকিদের মত মানেনি। তাঁর মত ছিল, ধর্মীয় আচার-আচারণে আদালত এ ভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। বিজেপিরও অবস্থান হল, ধর্মীয় বিশ্বাসে হস্তক্ষেপ করা যাবে না।

হায়দরাবাদের নালসার আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফয়জান মুস্তাফার মত, সুপ্রিম কোর্ট অন্য বিষয়ের থেকে বিশ্বাস ও আস্থাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। অযোধ্যাকে জমি বিবাদের মামলা বলেও আদালত মানুষের একাংশের বিশ্বাসকে আইনের যুক্তির থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। আদালত আইন ও আস্থার মধ্যে ভারসাম্য করতে চেয়েছে। কিন্তু আস্থাই শেষ হাসি হেসেছে। শবরীমালার রায় পুনর্বিবেচনা করতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি সেই আস্থাকেই গুরুত্ব দেন কি না, তা দেখতে চান বিশেষজ্ঞরা।

বিজেপির দাবি ছিল, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ যেন কেরল সরকার কার্যকর না করে। শবরীমালা মন্দিরে মহিলাদের যেন ঢুকতে না দেয় তারা। তার জন্য কেরলের সরকার আইন আনুক বলেও দাবি তুলেছিল বিজেপি। কিন্তু কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছেন, রাজ্য সরকার শীর্ষ আদালতের রায় কার্যকর করতে বাধ্য।

Sabarimala Temple Supreme Court Sabarimala Case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy