E-Paper

কাঁওয়ার যাত্রীদের বিরুদ্ধে বাড়ছে ক্ষোভ

মির্জাপুরের ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠেছে, আমজনতা তো দূর, কাঁওয়ার যাত্রীদের এই তাণ্ডবের হাত থেকে সেনা বা আধাসেনার জওয়ানেরাও কি তা হলে নিরাপদ নন?

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৫ ০৭:০৪
ওয়ানকে মাটিতে ফেলে পর পর ঘুষি ও লাথি মারা হয়।

ওয়ানকে মাটিতে ফেলে পর পর ঘুষি ও লাথি মারা হয়। ছবি: সংগৃহীত।

মির্জাপুর স্টেশন চত্বরে গত কাল একদল কাঁওয়ার যাত্রীর হাতে এক সিআরপিএফ জওয়ানের বেধড়ক মার খাওয়ার ঘটনা ঘিরে নতুন করে প্রশ্নের মুখে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ-প্রশাসন। মণিপুরে কর্মরত ওই জওয়ান কাজে যোগ দিতে ব্রহ্মপুত্র মেল ধরবেন বলে মির্জাপুর স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন। সেখানে একদল কাঁওয়ার যাত্রীর সঙ্গে কোনও কারণে কথা কাটাকাটি শুরু হয় তাঁর। তার পরের যে ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, আধা সামরিক বাহিনীর পোশাক পরা ওই সিআরপিএফ জওয়ানকে মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারধর করছে গোটা দশেক লোক। বিষয়টি নিয়ে সমাজমাধ্যমে হইচই শুরু হওয়ার পরে জনা সাতেক লোককে গ্রেফতার করা হলেও ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই তাঁরা জামিন পেয়ে যান বলে জানা গিয়েছে‌।

মির্জাপুরের ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠেছে, আমজনতা তো দূর, কাঁওয়ার যাত্রীদের এই তাণ্ডবের হাত থেকে সেনা বা আধাসেনার জওয়ানেরাও কি তা হলে নিরাপদ নন? প্রতি বছরই শ্রাবণ মাসে গঙ্গা থেকে জল আনতে পায়ে হেঁটে হরিদ্বার, সুলতানগঞ্জ বা একাধিক জায়গায় গঙ্গার ঘাটে ভিড় জমান শিবভক্তেরা। এঁদের বলে কাঁওয়ার যাত্রী বা কাঁওয়ারিয়া। কিন্তু গত সাত-আট বছরে এই কাঁওয়ারিয়াদের বড় অংশই উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, হরিদ্বারের গঙ্গা লাগোয়া জনপদগুলির ত্রাস হয়ে উঠেছে। কাওঁয়ারিয়াদের বেপরোয়া, মারমুখী মনোভাবের একাধিক ছবি গত কয়েক বছর ধরেই ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে। কখনও রাস্তার ধারের হোটেলে খেতে গিয়ে খাবার পছন্দ না হওয়ায় বা দোকানদার খাবারের দাম ‘বেশি’ চেয়েছে‌ন বলে অভিযোগ তুলে সেখানে মালিক-কর্মচারীদের বেধড়ক মারধর করে, হোটেল ভাঙচুর করার ঘটনার ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি আশপাশের লোকেরা প্রতিবাদ করলে সার দিয়ে একাধিক হোটেল, দোকানে চলেছে তাণ্ডব, ভাঙচুর! মারধর করে মাথা ফাটিয়ে বা পা ভেঙে দেওয়ার ঘটনাও নতুন নয়।

হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত কাঁওয়ারিয়াদের থানার ভিতরেই চেয়ারে বসিয়ে খোদ পুলিশকর্তা তাঁদের পা টিপে দিচ্ছেন, এমন ছবিও ছড়িয়েছে। এমনকি রাস্তায় যান চলাচল আটকে ‘বিশ্রামে’র জন্য কাঁওয়ার যাত্রী দলে থাকা নাবালক-নাবালিকারা গাঁজা বা মদ খেলেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে একাধিক বার। পাশাপাশি কাঁওয়ারিয়াদের যাত্রাপথে কোনও বাস বা গাড়ি পথ আটকালে সেগুলিতে ভাঙচুর, যাত্রীদের মারধর করার ঘটনাও ঘটেছে। এমনকি পড়ুয়াভর্তি স্কুলবাসও বাদ যায়নি ভাঙচুর, পাথর ছোড়া থেকে!

গত কয়েক বছর ধরেই উত্তরপ্রদেশের পাশাপাশি হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড, বিহারের মতো কয়েকটি রাজ্যে কাঁওয়ারিয়াদের এই তাণ্ডব অব্যাহত। ঘটনাচক্রে প্রতিটি রাজ্যই বিজেপি-শাসিত। কাঁওয়ারিয়াদের এই তাণ্ডবের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নির্দেশে কাঁওয়ারিয়াদের যাত্রাপথে হেলিকপ্টার থেকে ফুল ছড়ানো হয়!। রবিবারই সরকারি উদ্যোগে একাধিক জায়গায় কপ্টার থেকে এই ‘পুষ্পবৃষ্টি’ হয়েছে। আক্রান্তরা জানেন, পুলিশে জানিয়ে লাভ নেই। উল্টে পুলিশ পাল্টা অভিযোগ দায়ের করে গ্রেফতার করতে পারে তাঁদেরই! এই অবস্থায় আগামী বছর থেকে কাঁওয়ার যাত্রাপথে সমস্ত দোকান বন্ধ রাখার ভাবনাচিন্তাও করছেন কানপুর, মিরাট, মির্জাপুর, বাগপত, হাপুর, মুরাদনগর, ফতেহাবাদ-সহ বেশ কিছু এলাকার লোকজন। পরিস্থিতি বুঝে আজ উত্তরপ্রদেশ পুলিশ স্থানীয়দের ভরসা দিতে কাঁওয়ারিয়াদের ত্রিশূল, হকি স্টিক জাতীয় বস্তু নিয়ে পথে নামতে বারণ করে নির্দেশিকা জারি করেছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kanwar Yatra CRPF Jawan harassment Mirzapur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy