রাহুল গান্ধী আগামী দু’তিন মাস একের পর এক সাংবাদিক সম্মেলন করে ‘ভোট চুরি’ নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও বিজেপিকে নিশানা করবেন। কিন্তু বুথ স্তরে সংগঠন না থাকলে, এই ভোট চুরি রোখা যাবে কী করে, তা নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরমহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ‘টিম রাহুল’-এর সদস্যরাই মানছেন, বুথ স্তরে কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী না থাকলে, ভোটার তালিকায় ভুয়ো ভোটার যোগ করা বা কংগ্রেসের ভোটারদের নাম বেছে বেছে বাদ দেওয়ার চেষ্টা রোখা সম্ভব নয়।
‘ভোট চুরি’ নিয়ে রাহুল গান্ধীর প্রথম অভিযোগ ছিল, মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রায় ৩৯ লক্ষ ভুয়ো ভোটারের নাম যোগ হয়। এই সব ভোট বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছিল। এর পরে রাহুল অভিযোগ তোলেন, কর্নাটকে মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রে ভুয়ো ভোটারের নাম জুড়ে কংগ্রেসকে হারানো হয়েছিল। বৃহস্পতিবার রাহুল অভিযোগ করেছিলেন, কর্নাটকেরই আলন্দে কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটিতে বেছে বেছে ৬০১৮ জন ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কংগ্রেসের ভোটারদের নাম বাদ দেওয়াই ছিল লক্ষ্য। নাম না বললেও, এর পিছনে বিজেপির মস্তিষ্কই রয়েছে বলে রাহুল ইঙ্গিত করেছেন।
কংগ্রেসের ‘টিম রাহুল’-এর এক সদস্য বলেন, ‘‘বিজেপি যে কংগ্রেস বা বিরোধী ভোটারদের নাম মোছার চেষ্টা করছে, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু তার জন্য বিজেপি বুথ স্তরে এমন সংগঠন খাড়া করেছে যে, কোথায় কারা বিরোধীদের ভোট করছে, তা-ও ওরা আঁচ করতে পারছে। তার পরে বিজেপি সক্রিয় হচ্ছে। যেখানে বিজেপির ভোট বাড়ানো প্রয়োজন, সেখানে ভুয়ো ভোটারের নাম তালিকায় যোগকরা হচ্ছে।’’
রাহুল কর্নাটকের যে আলন্দ
বিধানসভা নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন, সেখানকার কংগ্রেসের বিধায়ক বি আর পাটিল বলেন, ‘‘আলন্দের ২৫৪টি বুথে ৬,০১৮ জনের নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জমা পড়েছিল। এর মধ্যে ২৪ জন বাকে বাকি সবাই ওখানকার বাসিন্দা। মূলত সংখ্যালঘু, দলিত ও অনগ্রসর শ্রেণির মানুষ। একেবারেই কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক।’’ ‘টিম রাহুল’-এর সদস্যের বক্তব্য, এ থেকে স্পষ্ট, বিজেপির কাছে লোকসভা বা বিধানসভা কেন্দ্রের একেবারে বুথ স্তর পর্যন্ত খুঁটিনাটি খবর রয়েছে।’’
উল্টো দিকে, কংগ্রেসের অবস্থা কী? এআইসিসি-র এক নেতা বলেন, ‘‘বিহারে ভোটার তালিকায় সংশোধনে কোথায় কার নাম কাটা যাচ্ছে, তা আমরা আগে থেকে জানতেই পারিনি। কারণ বুথ স্তরে সংগঠন নেই। নির্বাচন কমিশন বার বার প্রশ্ন করেছে, কংগ্রেসের বিএলএ বা বুথ স্তরের এজেন্টরা কী করছেন? বাস্তব হল, বিএলএ হিসেবে যাঁদের নাম কমিশনকে দেওয়া হয়েছে, তাঁরা নিজেরাই জানেন না তাঁদের ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বা জানলেও বিএলএ হিসেবে কী করতে হবে, তা জানা নেই।’’ এই সংগঠনের অভাবে মহারাষ্ট্রেও লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে ভোটার তালিকায় ৩৯ লক্ষ নাম যোগ হয়ে গেলেও তা কংগ্রেস টের পায়নি। ‘টিম রাহুল’-এর সদস্যদের বক্তব্য, রাহুল গান্ধী নির্বাচন কমিশন, বিজেপিকে নিশানা করে চাপে রাখবেন। কিন্তু বাস্তবের জমিতে ভোট চুরি রোখার কাজ স্থানীয় নেতা-কর্মীদেরই করতে হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)