রাহুল গাঁধী। —ফাইল চিত্র।
সামনে বসা নরেন্দ্র মোদীর চোখে চোখ রেখে তাঁকেই আক্রমণ।
ভোটাভুটিতে হার নিশ্চিত জেনেও লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব আনার পিছনে বিরোধী শিবিরের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল এটাই।
আজ সেই কাজটাই সফল ভাবে করে নিজেকে গোটা বিরোধী শিবিরের নেতা হিসেবে তুলে ধরলেন রাহুল গাঁধী। একই সঙ্গে বিজেপির অন্দরমহলে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের বিরুদ্ধে ক্ষোভকে প্রকাশ্যে এনে বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা ও এনডিএ-র অসন্তুষ্ট শরিক নেতাদেরও পাশে টেনে নিলেন।
বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে রাহুলের মন্তব্য, ‘‘বলে দিচ্ছি, গোটা বিরোধী শিবির আর আপনাদের অনেক লোক মিলে প্রধানমন্ত্রীকে ভোটে হারাতে চলেছেন।’’ তৃণমূল থেকে সিপিএম, সপা থেকে এনসিপি, সকলে টেবিল চাপড়ে সমর্থন করেছেন রাহুলকে। এক রকম নিঃশব্দেই তখন বিরোধীদের নতুন নেতা হিসেবে অভিষেক হয়ে গিয়েছে রাহুলের।
সব মিলিয়ে, ২০১৯-এর ভোটের আগে উদয় হল এক নতুন ‘ব্র্যান্ড রাহুল’-এর। যিনি মোদীকে ভয় না পেয়ে, পাল্টা আক্রমণে গিয়ে শাসক শিবিরের অন্দরে কাঁপুনি ধরিয়ে দিলেন। দুর্নীতি নিয়ে আক্রমণ করে মোদীকে ‘চৌকিদার নয়, ভাগিদার’ বলে লোকসভা ভোটের প্রচারের ‘স্লোগান’-ও জোগালেন। ১৫-২০ জন শিল্পপতিকে সুবিধা করে দেওয়ার অভিযোগ তুলে মোদীকে বললেন, ‘‘উনি হাসছেন বটে। কিন্তু আমার চোখে চোখ মেলাতে পারছেন না। কারণ প্রধানমন্ত্রী সত্যি বলছেন না।’’ অস্বস্তি কাটাতে মোদী তখন রাহুলের দিকে তাকিয়ে হাসতে শুরু করেন।
বছরে ২ কোটি চাকরি, কালো টাকা ফিরিয়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা জমা, চাষের খরচের দেড়গুণ ফসলের দামের মতো প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থতা, বড় শিল্পপতিদের অনাদায়ী ঋণ, কৃষকদের ঋণ মকুব
না করা নিয়ে রাহুল যে মোদীকে নিশানা করবেন, তা প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু সেই আক্রমণকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়ে মোদী-শাহের রাজনৈতিক দর্শনকেই বিঁধলেন তিনি। বিজেপির সকলেই যে মোদী-শাহকে ভয় পান, সেই ইঙ্গিত করে বিজেপি নেতাদের উদ্দেশে বললেন, ‘সত্যকে ভয় পাবেন না’।
রাহুল বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি বাকি সকলের থেকে ভিন্ন ধাঁচের রাজনীতিক। আমাদের সকলের সঙ্গে ওঁদের ফারাক হল, আমরা নিজেদের ক্ষমতায় এবং ক্ষমতার বাইরে দেখতে পারি। কিন্তু ওঁদের পক্ষে ক্ষমতা হারানো মুশকিল। কারণ ক্ষমতা হারালেই ওঁদের বিরুদ্ধে অন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। সেই ভয় থেকেই ওঁরা কাজ করছেন। ভয় থেকে রাগ জন্ম নিচ্ছে। গোটা দেশ সেই রাগ টের পাচ্ছে।’’
হট্টগোলের জন্য রাহুলের বক্তৃতার মাঝখানে লোকসভার অধিবেশন দশ মিনিটের জন্য মুলতুবি হয়ে যায়। ফিরে এসে বিজেপির অন্দরে মোদী-শাহের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রমাণ করতে রাহুল বলেন, ‘‘বাইরে গিয়ে অবাক হয়ে দেখলাম, বিরোধীদের সঙ্গে বিজেপির সাংসদরাও হাত মিলিয়ে ভাল বক্তৃতার জন্য অভিনন্দন জানালেন। (মোদী-শাহর বিরুদ্ধে) এই স্বর বিজেপির ভিতরেও রয়েছে।’’
‘ইকনমিস্ট’ পত্রিকায় প্রচ্ছদ তুলে বলেছেন, আন্তর্জাতিক দুনিয়ার ধারণা, ভারত নিজেদের মহিলাদের রক্ষা করতে পারে না। ডোকলাম প্রসঙ্গে মোদীর বিদেশনীতির সমালোচনা করেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন, দলিত-আদিবাসী-সংখ্যালঘু-মহিলাদের উপর নির্যাতন সত্ত্বেও কেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে একটা শব্দও বের হয় না? কেনই বা তাঁর মন্ত্রী গিয়ে গণপ্রহারে অভিযুক্তদের গলায় মালা পরান?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy