বিহারে যে খামতি ছিল, পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, তামিলনাড়ু-সহ ১২টি রাজ্যে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) ক্ষেত্রে যাতে তা না হয়, তা নিয়ে ওই রাজ্যের নেতাদের নির্দেশ জারি করল কংগ্রেস হাইকমান্ড।
যে ১২টি রাজ্যে এখন এসআইআর চলছে, আজ সেখানকার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি, পরিষদীয় দলনেতা, এআইসিসি-তে রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে, রাহুল গান্ধী। সূত্রের খবর, নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে এই রাজ্যগুলিতে খসড়া ভোটার তালিকায় যোগ্য ভোটারদের নাম বাদ গেলে, তাঁদের নাম যোগ করতে নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানাতে হবে। ভুয়ো ভোটারদের নাম থেকে গেলে আপত্তি তুলতে হবে। বিহারে বিরোধী দলের তরফে খসড়া ভোটার তালিকা নিয়ে কোনও দাবি বা আপত্তি জানানো হয়নি। সুপ্রিম কোর্টে নির্বাচন কমিশন এই নিষ্ক্রিয়তাকে ঢাল করে বলেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির বিএলএ-র তরফে কোনও আপত্তি জমা পড়েনি।
প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের আজ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এসআইআর-এর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পরে তা নিয়ে আপত্তি বা দাবি জানানোর জন্য কংগ্রেসের আইন বিভাগের সাহায্য নিতে হবে। চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় যদি ভুয়ো ভোটার বা ভিন রাজ্যের ভোটারদের নাম যোগ হয়, তা হলে নিয়মমাফিক প্রথম ও দ্বিতীয় আপিল করতে হবে।
সূত্রের খবর, রাহুল আজ বৈঠকে বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নিখুঁত ভোটার তালিকা তৈরি করা, যাতে কোনও যোগ্য ভোটারের নাম বাদ না যায়। কিন্তু কমিশন রাজনৈতিক দলগুলির উপরে দায় চাপাচ্ছে। বিজেপির অঙ্গ হিসেবে কাজ করছে। বিজেপি, কংগ্রেসের মতো দলের পক্ষে ভোটার তালিকায় নজরদারি সম্ভব হলেও হতে পারে। কিন্তু ছোট দলগুলির পক্ষে তা সম্ভব নয়। কমিশনের এই ‘ভূমিকা’ ও ‘ভোট চুরি’-র অভিযোগ তুলে ধরতে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দিল্লির রামলীলা ময়দানে জনসভার ডাক দিয়েছে কংগ্রেস।
পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার, এসআইআর সংক্রান্ত কমিটির প্রধান প্রসেনজিৎ বসু বৈঠকে এসেছিলেন। শুভঙ্কর বলেন, ‘‘জ্ঞানেশ কুমার বিজেপি সভাপতির মতো আচরণ করছেন। বুথ, ব্লক, অঞ্চলে সংগঠন তৈরিতে জোর দিয়েছি। পশ্চিমবঙ্গে একমাত্র এসআইআর নিয়ে কংগ্রেসের কমিটি গঠন হয়েছে।’’ পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত এআইসিসি-র নেতা গুলাম মীর বলেন, ‘‘রাজ্যের ৮০ হাজার বুথের মধ্যে ৩২ হাজার বুথে বিএলএ নিয়োগ করা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত ৭০ শতাংশ বুথে বিএলএ নিয়োগ করা যাবে।’’
কংগ্রেসের অভিযোগ, এসআইআর-এর মাধ্যমে ভোটারদের ছেঁটে ফেলে এনডিএ জিতেছে। ওয়ার্কিং কমিটির নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘বৈঠকে বিহারের ১৩টি আসনের ভোটের ফল বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে, সেখানে এনডিএ-র জয়ের ব্যবধানের থেকে এসআইআর-এর ফলে ভোটারদের নাম কাটার সংখ্যা অনেক বেশি। এসআইআর না হলে ভোটের ফল অন্য রকম হত।’’ বৈঠকে রাজস্থানের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি গোবিন্দ ডোটাসরা বলেছেন, নাম কাটার জন্য সংখ্যালঘু, দলিত ভোটারদের নিশানা করা হচ্ছে। তাঁরা মূলত বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দেন। বেশ কিছু নেতা ভোট বয়কটের প্রসঙ্গ তুললেও প্রবীণ নেতা দিগ্বিজয় সিংহের মত ছিল, সাংগঠনিক ও আইনি স্তরেই ‘ভোট চুরি’-র মোকাবিলা করতে হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)