ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে এক দিকে দু’দেশের আধিকারিকেরা আলোচনা ও দর কষাকষির মাধ্যমে সমঝোতায় আসতে চাইছেন। কিন্তু আগাগোড়া নিজস্ব কায়দায় বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, মোদীকে নিয়ে তিনি যে ভাবে কথার খেলা খেলছেন, তাতে কার্যত স্তব্ধবাক সাউথ ব্লক। কূটনৈতিক সংলাপের ধার ধারছেন না ট্রাম্প। আর গোটা বিষয়টি নিয়ে ঘরোয়া রাজনীতিতে আক্রমণ শানাচ্ছেন বিরোধীরা।
আজ দক্ষিণ কোরিয়ায় ‘এশিয়া প্যাসিফিক ইকনমিক কনফারেন্স’-এর মঞ্চে ট্রাম্প বলেছেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করবেন। মোদীর রূপের প্রশংসা করেছেন যা কূটনৈতিক ভাষ্যে কিছুটা অভিনব। পাকিস্তানের প্রশংসা করে ভারসাম্যও রেখেছেন। মোদী কতটা দর কষাকষিতে পটু সে কথাও জানিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। আবারও বাণিজ্যের জুজু দেখিয়ে ভারত-পাকিস্তান সংঘাত থামানোর সবিস্তার উল্লেখ করেছেন তিনি।
স্বাভাবিক ভাবেই আসরে নেমেছে কংগ্রেস। লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী তাঁর এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘ট্রাম্প একের পর এক দেশে গিয়ে মোদীকে অপমান করছেন। তার শেষতম নিদর্শন দক্ষিণ কোরিয়া। বাণিজ্যের ভয় দেখিয়ে ‘অপারেশন সিঁদুর’ বন্ধের দাবির পুনরাবৃত্তি করেছেন ট্রাম্প। বলেছেন, ৭টি বিমানকে অস্ত্র ব্যবহার করে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। মোদীজি আপনি ভয় পাবেন না! জবাব দেওয়ার মতো সাহস সংগ্রহ করুন’। ট্রাম্প আজ বলেছেন, “ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করব। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতি আমার অত্যন্ত সম্মান এবং ভালবাসা রয়েছে। আমাদের মধ্যে সম্পর্ক দুর্দান্ত। একই ভাবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীও দারুণ মানুষ। তাঁদের এক জন ফিল্ড মার্শাল রয়েছেন। জানেন কেন তিনি ফিল্ড মার্শাল? তিনি এক জন তুখোড় লড়াকু লোক। আমি ওদের সবাইকে জানি, দেখেছি সাতটি বিমান মাটিতে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।” এখানেই না থেমে ট্রাম্পের মন্তব্য, “মোদীকে বললাম তোমাদের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে পারব না, তোমরা পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বাধিয়েছো। তার পর পাকিস্তানকে বললাম, তোমাদের সঙ্গেও বাণিজ্য করব না, ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করছো। প্রথমে ওরা বলল না, না আমাদের যুদ্ধ চালাতে দাও।’’
এর পরই অপ্রত্যাশিত এবং অপ্রাসঙ্গিক ভাবে মোদীর রূপের বর্ণনায় চলে আসেন ট্রাম্প। বলেন, “তারা খুবই কড়া ধাঁচের মানুষ। প্রধানমন্ত্রী মোদী সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ। দেখে মনে হবে তিনি তোমার বাবা। কিন্তু তিনি অসম্ভব কড়া একেবারে কিলার!” দু’দিন পরে তাঁরা ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় রাজি হয়ে ফোন করেছিলেন, সে কথাও জানিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।
ট্রাম্প দ্বিতীয় বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরই আমেরিকা সফরে গিয়েছিলেন মোদী। সে সময়ে ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি হওয়ার কথা জানান দুই রাষ্ট্রপ্রধান। তবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)