রাজ্যের থেমে থাকা রেল প্রকল্পের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অসহযোগিতাকেই দায়ী করলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। আজ পশ্চিমবঙ্গের জন্য রেলের বাজেট বরাদ্দ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “জমি অধিগ্রহণ ও আইনশৃঙ্খলার মতো সমস্যা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে একাধিক বার চিঠি দিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি।”
এ বারের বাজেটে পশ্চিমবঙ্গের জন্য সব মিলিয়ে ১৩,৯৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রেল। অশ্বিনীর দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন পশ্চিমবঙ্গের জন্য গড়ে যে অর্থ (৪৩৮০ কোটি টাকা) বরাদ্দ করা হত, তার চেয়ে বর্তমান বাজেটে চার গুণ বেশি অর্থ বরাদ্দ হয়েছে রাজ্যের জন্য। রাজ্যে যে ক’টি প্রকল্প চালু রয়েছে, তার প্রকল্পমূল্য প্রায় ৬৮ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু রাজ্যের একাধিক রেল প্রকল্প (নৈহাটি–রানাঘাট, দীঘা-জলেশ্বর, বালুরঘাট-হিলি, সাঁইথিয়া-সীতারামপুর) জমি অধিগ্রহণ ও আইনশৃঙ্খলার সমস্যার কারণে আটকে রয়েছে বলে জানান রেলমন্ত্রী। তিনি বলেন, “রাজ্য প্রশাসন যাতে জমি অধিগ্রহণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সাহায্য করে, সে জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে একাধিক বার চিঠি লেখা হয়েছে।” রেলমন্ত্রীর দাবি, তাতে বিশেষ লাভ হয়নি। রেল কর্তাদের বক্তব্য, আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের একাধিক স্থানে রেলের জমি উচ্ছেদ করতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে। সেই সময়ে রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও ইতিবাচক সাহায্য না-পাওয়ায় নিজের জমির দখল পেতে সমস্যা হচ্ছে রেলের। অন্য রাজ্যের তুলনায় প্রকল্পের অগ্রগতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। ফলে ক্রমশ দীর্ঘমেয়াদি হচ্ছে প্রকল্প। বাড়ছে প্রকল্পের খরচ। আগ্রহ হারাচ্ছে রেল। অশ্বিনী বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বা জমি অধিগ্রহণের প্রশ্নে রাজ্য সরকার সক্রিয় হলে দ্রুত প্রকল্প শেষ করা সম্ভব। রেলের কাজের জন্য রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের ছাড়পত্র লাগে। পশ্চিমবঙ্গে সেই ছাড়পত্র পাওয়া বেশ সমস্যার।”
রেল সূত্রের মতে, রেলের কাজের জন্য কখনও বিদ্যুতের খুঁটি বা আবার কখনও জলের লাইন সরাতে হয়। এ ধরনের অনুমতি পাওয়া পশ্চিমবঙ্গে
একটি বড় সমস্যা বলে জানিয়েছেন রেলকর্তারা। রেলের বক্তব্য, মমতার আমলে বরাহনগর থেকে ব্যারাকপুর মেট্রো লাইনের ঘোষণা হয়। কিন্তু বি টি রোডের নীচে জলের পাইপ সরানোর কাজ এখনও শুরু না হওয়ায় ১৪ বছরেও প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি। এক রেলকর্তার আক্ষেপ, “যে প্রকল্প মমতা ঘোষণা করেছিলেন, সেই প্রকল্পই আটকে রয়েছে মমতা সরকারের অসহযোগিতায়।”
এ বারের বাজেটে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রেল। দমদম বিমানবন্দর-নিউ গড়িয়া প্রকল্পের বরাদ্দ গত বারের প্রায় অর্ধেক (৭২০.৭২ কোটি) করা হয়েছে। জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রো প্রকল্পে বরাদ্দ বেড়েছে নামমাত্র (৬৪ কোটি)। কলকাতা মেট্রোর বরাদ্দ সঙ্কোচনের কারণ হিসেবেও জমি অধিগ্রহণকেই মূল সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন রেলমন্ত্রী। তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে জমি অধিগ্রহণ দ্রুত হলে টাকা বাড়াতে সমস্যা হবে না।” এ বছর রেলের আয়-ব্যয়, কোন প্রকল্পে কত টাকা বাড়ল বা কমল সেই বিস্তারিত নথি (পিঙ্ক বুক) এখনও প্রকাশ করেনি রেল। তবে অশ্বিনী দাবি করেন, “পশ্চিমবঙ্গের ১০১টি স্টেশনকে ‘অমৃত স্টেশন’-এ রূপান্তরিত করা হবে।” পাশাপাশি দুর্ঘটনা রুখতে নিরাপত্তা খাতে ১.১৬ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, দাবি রেলমন্ত্রীর। যদিও রেলের সার্বিক ব্যয়বরাদ্দের নথিতে দেখা গিয়েছে, দু’টি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়াতে যে কবচ ব্যবস্থা বসতে চলেছে, তার একাধিক খাতে ১ হাজার টাকার নামমাত্র বরাদ্দ করা হয়েছে। রেল নথি বলছে, ৬০ লক্ষ টাকার ৩,২৪০টি কবচ বসাতে খরচ হওয়ার কথা রয়েছে ১,৯৪৪ কোটি টাকা। কিন্তু বরাদ্দ মাত্র হাজার টাকা। যার মধ্যে কেবল ২,৪৬৫টি ডিজ়েল ইঞ্জিনে কবচ বসাতে খরচ হবে ১,৪৭৯ কোটি। বরাদ্দ সেই হাজার টাকা।
তৃণমূলের লোকসভার মুখ্যসচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা বলেন, “এখনকার রেলমন্ত্রী আসলে মমতাকে হিংসে করেন। শুনেছি মমতা যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন, তখন অশ্বিনী বৈষ্ণব রেল মন্ত্রকে কর্মরত ছিলেন। রাজ্যের নীতি, জোর করে জমি অধিগ্রহণ হবে না। রেল নিজেরা জমি নিতে চাইলে রাজ্যের কোনও সমস্যা নেই। এ সব অভিযোগ রাজনৈতিক। আসলে পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রের কোনও সদিচ্ছা নেই।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)