Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

মাওবাদী বন্‌ধে পুড়ল গাড়ি, বিস্ফোরণে লাইন ভেঙে স্তব্ধ ট্রেন

বন্‌ধের ডাক দিয়েছিল মাওবাদীরা। নাশকতার আশঙ্কা ছিল। সতর্কও করে দিয়েছিল রেল বোর্ড। আশঙ্কা সত্যি করে ফের বিস্ফোরণ হল রেললাইনে। সময়মতো বিভিন্ন জায়গায় ট্রেন থামিয়ে দেওয়ায় বড় ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো গিয়েছে।

হামলা: রেললাইন কেটে দিয়েছে মাওবাদীরা। সোমবার গিরিডিতে। ছবি: চন্দন পাল

হামলা: রেললাইন কেটে দিয়েছে মাওবাদীরা। সোমবার গিরিডিতে। ছবি: চন্দন পাল

নিজস্ব সংবাদদাতা
রাঁচী ও কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৭ ০৪:২৮
Share: Save:

বন্‌ধের ডাক দিয়েছিল মাওবাদীরা। নাশকতার আশঙ্কা ছিল। সতর্কও করে দিয়েছিল রেল বোর্ড। আশঙ্কা সত্যি করে ফের বিস্ফোরণ হল রেললাইনে। সময়মতো বিভিন্ন জায়গায় ট্রেন থামিয়ে দেওয়ায় বড় ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো গিয়েছে।

ঝাড়খণ্ড পুলিশ ও রেলের অভিযোগ, ঝাড়খণ্ডের গিরিডির কাছে রবিবার রেললাইনে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে মাওবাদীরাই। এবং রাতের অন্ধকারে এমন জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে, যে-পথ দিয়ে হাওড়া ও শিয়ালদহ থেকে ছাড়া রাজধানী এক্সপ্রেস-সহ দিল্লি তথা উত্তর ভারতমুখী ট্রেনগুলি চলে। গিরিডির কাছে কর্মাবাঁধ ও চিচাকি স্টেশনের মাঝখানে রবিবার গভীর রাতে রেললাইনে যখন বিস্ফোরণ ঘটে, তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেখান দিয়ে যাওয়ার কথা ছিল হাওড়ামুখী দুন এক্সপ্রেসের। বিস্ফোরণের জেরে হাওড়া-দিল্লি শাখায় ট্রেন চলাচল পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে যায়। রাজধানী এক্সপ্রেস-সহ প্রতিটি ট্রেন গড়ে ছ’ঘণ্টা দেরিতে হাওড়া-শিয়ালদহে ঢুকেছে। ছাড়েও দেরিতে।

রেল সূত্রের খবর, কোনও যাত্রীর ক্ষতি না-হলেও রবিবার রাতের বিস্ফোরণে রেললাইনের বেশ খানিকটা অংশ ভেঙে দু’টুকরো হয়ে যায়। কী হয়েছিল রবিবার রাতে?

কর্মাবাঁধ স্টেশনের এক রেলকর্মীর অভিজ্ঞতা, ‘‘রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ প্রচণ্ড শব্দে আশপাশ কেঁপে ওঠায় ভেবেছিলাম, কোনও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটল বোধ হয়। সঙ্গে সঙ্গে টর্চ নিয়ে বেরিয়ে যাই। কিছু দূর গিয়েই দেখি, বিস্ফোরণে ডাউন লাইনটা ভেঙে দু’টুকরো হয়ে গিয়েছে।’’

রেল জানাচ্ছে, কর্মাবাঁধ ও চিচাকি স্টেশনের মাঝখানে রবিবার রাতে যখন বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, সেই সময়েই ওই লাইন দিয়ে পরপর হাওড়ামুখী মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেন যাওয়ার কথা ছিল। গোমো জিআরপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিস্ফোরণের কিছু ক্ষণের মধ্যেই ওই লাইন দিয়ে যাওয়ার কথা ছিল হাওড়ামুখী দুন এক্সপ্রেসের। বিস্ফোরণের খবর পেয়েই ট্রেনটিকে মাঝপথে থামিয়ে দেওয়া হয়। তার পরে বিভিন্ন স্টেশনে আরও বেশ কয়েকটি ট্রেনকেও থামিয়ে দেন
রেল-কর্তৃপক্ষ।

এ মাসের ২৫ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে মাওবাদীরা হামলা চালাতে পারে বলে রেল আগেই সতর্কতা জারি করেছিল। ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ ও ছত্তীসগঢ় রাজ্য পুলি‌শকেও আগাম সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল। সোমবার ঝাড়খণ্ডে বন্‌ধের ডাক দিয়েছিল মাওবাদী সংগঠন। পুলিশ-প্রশাসন সতর্ক থাকলেও সেই বন্‌ধের ঠিক আগেই নাশকতা
ঘটানো হয়।

গিরিডির পুলিশ সুপার অখিলেশ বি ভেরিয়র বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, এই নাশকতামূলক কাজ মাওবাদীদের। লাইনে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তারাই।’’ বিস্ফোরণটি এতটাই জোরালো ছিল যে, প্রায় পাঁচ ফুট রেললাইন উড়ে গিয়েছে। বিকট আওয়াজে গ্রামবাসীরা বুঝতে পারেন, কোনও বিস্ফোরণ ঘটেছে। তাঁরাই সঙ্গে সঙ্গে খবর দেন পুলিশে। সোমবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান রেলের আধিকারিক ও গিরিডি জেলার প্রশাসনিক কর্তারা। দুপুর পর্যন্ত আপ লাইন দিয়ে ট্রেন চালানো হয়। ডাউন লাইন দ্রুত সারানোর কাজ চলছে বলে রেল সূত্রের খবর।

বন্‌ধে গিরিডির সড়কেও তাণ্ডব চালায় মাওবাদীরা। মধুবন এলাকায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। ডুমরিতে রাস্তা মেরামতির কাজে বহাল একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ভোরে বোকারোর গোমিয়ায় পুলিশের গাড়িতেও আগুন লাগায় জঙ্গিরা। জামশেদপুর, রাঁচী, ধানবাদ স্বাভাবিক থাকলেও অন্য জেলায় বেশি গাড়ি চলেনি। বন্ধ ছিল দূরপাল্লার বাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jharkhand violence Maoists bandh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE