মেঘভাঙা বৃষ্টির কারণে মঙ্গলবার উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীর ধারালী গ্রামে আচমকা নেমে আসে হড়পা বান। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে গ্রামের অনেক অংশ। শুধু উত্তরকাশী নয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়তে পারে উত্তরাখণ্ডের আরও কয়েকটি জেলা। এমনই আশঙ্কা করছে প্রশাসন। বুধবারও বৃষ্টি থামার সম্ভাবনা কম বলেই জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। জারি লাল সতর্কতা। সেই আবহে প্রশাসনের তরফে একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে। ন’জেলার সব স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তরকাশী-হর্ষিল সড়কে ধস নেমেছে। ফলে ওই সড়কে বেশ কয়েকটি অংশ বন্ধ। প্রভাব পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রাস্তা পরিষ্কারের কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট এক কর্তার কথায়, ‘‘বৃষ্টির কারণে রাস্তা পরিষ্কার এবং সারাইয়ের কাজে বিঘ্ন ঘটছে। তবে যত দ্রুত সম্ভব আমরা কাজ শেষ করে আবার যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছি।’’ শুধু তা-ই নয়, ধসের কারণে উত্তরকাশীর সঙ্গে ধারালী এবং গঙ্গোত্রীর যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। ফলে উদ্ধারকাজ থমকে গিয়েছে।
মৌসম ভবন জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টা হরিদ্বার, নৈনিতাল এবং উধম সিংহ নগর জেলায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। রাজ্যের অন্য জেলাগুলিতেও কম-বেশি বৃষ্টি চলবে। কোথাও লাল সতর্কতা জারি, আবার কমলা সতর্কতা। ৯ অগস্ট পর্যন্ত চলবে দুর্যোগ। এই আবহে উত্তরাখণ্ড সরকার চামোলি, রুদ্রপ্রয়াগ, আলমোরা, হরিদ্বার, পিথোরাগড়-সহ ন’জেলার স্কুল এবং অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রাজ্য এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী উদ্ধারকাজ করছে। সঙ্গে রয়েছে ভারতীয় সেনা এবং ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। দুর্গতদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনার জন্য চারটি হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে হেলিকপ্টারগুলিকে কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সেনার এক উচ্চপদস্থ কর্তা।
জায়গায় জায়গায় ধস নামার কারণে উদ্ধারকাজ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। সাতটি রাজ্য সড়ক, পাঁচটি জাতীয় সড়ক, দু’টি সীমান্ত সড়ক-সহ রাজ্যে মোট ১৬৩টি রাস্তা ধসের জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। উত্তরকাশীতে ধসের নীচে কেউ চাপা পড়ে আছেন কি না, খুঁজে বার করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষিত কুকুর নিয়ে আসা হয়েছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তিনটি দল উদ্ধারকাজে নেমেছে। অতিরিক্ত আরও দু’টি দলকে দেহরাদূন বিমানবন্দর থেকে আকাশপথে নিয়ে আসা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
আরও পড়ুন:
মঙ্গলবার দুপুরে উত্তরকাশীতে শুরু হয় মেঘভাঙা বৃষ্টি। তার জেরে আচমকা নেমে আসা হড়পা বানে ভেসে যায় একের পর এক বাড়ি, হোটেল। ধারালী গ্রাম জলের তলায়। জলের তোড়ে ভেসে যায় হর্ষিলের এক সেনাছাউনিও। নিখোঁজ ১১ জন জওয়ান। তবে সেই ধাক্কা সামলে হড়পা বানে বিধ্বস্ত এলাকা থেকে বাসিন্দাদের উদ্ধারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সেনা। এখনও পর্যন্ত চার জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না অনেকেরই। পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী। এই ঘটনাকে ‘বেদনাদায়ক’ বলে জানিয়েছেন তিনি। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যসচিব আরকে সুধাংশু জানিয়েছেন, হড়পা বানের কারণে ৪০ থেকে ৫০টি বাড়ি ভেঙে পড়েছে। উত্তরাখণ্ডের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উত্তরাখণ্ডের পরিস্থিতি নিয়ে ধামীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তিনি। কেন্দ্রের তরফে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন মোদী।