Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Rishi Sunak

এমন ঋষিপুরাণে লাভ নেই ভারতের

বণিকের মানদণ্ড থেকে একদা রাজদণ্ডে রূপান্তরিত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মালিকানা আগেই ভারতীয় উদ্যোগপতি সঞ্জীব মেহতার অধীনে গিয়েছিল।

ঋষি সুনক।

ঋষি সুনক। ছবি: রয়টার্স।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২২ ০৮:০৬
Share: Save:

বাতাসা বা আনন্দনাড়ুর হরির লুটের খবর নেই ঠিকই! তবে এমন দিনে খাস বিলেতেও লাড্ডু বিলি কষ্টকল্পিত নয়। বরং একে দেওয়ালি, তায় বিলেতের ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রী লাভ-- তামাম ভারতীয়ের হাতে ‘জোড়া লাড্ডু’ ভাবা যেতেই পারে। ঋষি সুনকের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী পদে অভিষেক পাকা হতেই অনেক বঙ্গসন্তানের পরশুরামকে মনে পড়ছে।

সেই কবে ‘উলটপুরাণ’ গল্পে পরশুরাম লেখেন, “ইওরোপীয়গণের শনৈঃ শনৈঃ উন্নতি হইতেছে।…ভারত-সন্তানগণ সাত-সমুদ্র তেরো নদী পার হইয়া এই পাণ্ডববর্জিত দেশে আসিয়া নিঃস্বার্থভাবে শান্তি শৃঙ্খলা ও সভ্যতার প্রতিষ্ঠা করিতেছেন।” কথাগুলো আজ এক প্রকার সত্যি তো বটেই। উলটপুরাণে বিলিতি শিশুর জিভের আড় ভাঙতে বাঙালি গভর্নেস চকলেটের বদলে ছোলাভাজা খাওয়ার নিদান দিয়েছিলেন। শাসকভক্ত বিলেতি কাগজে বিলাতবাসীর দাঁত শক্ত করতে চর্বিমেশা অসভ্য ইংরেজি বিস্কুটের বদলে আনন্দনাড়ু খাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছিল। দেখা যাচ্ছে, এ বার সত্যিই এমন এক জন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী আবির্ভূত যিনি সস্ত্রীক ভক্তিভরে গোমাতার পুজো পর্যন্ত করে থাকেন। ব্রিটিশ রসনায় অতি আদরের বিফস্টেক বস্তুটি নির্ঘাত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর মুখে রোচে না।

বণিকের মানদণ্ড থেকে একদা রাজদণ্ডে রূপান্তরিত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মালিকানা আগেই ভারতীয় উদ্যোগপতি সঞ্জীব মেহতার অধীনে গিয়েছিল। এ বার স্বাধীনতার ৭৫ বছরে ভারতীয় বংশোদ্ভূতের এত বড় গৌরব! তবে নামী, অনামী ভারতীয়ের আবেগ উথলে উঠলেও ইতিহাসবিদদের একাংশ তাতে গা ভাসাতে রাজি নন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুগত বসু বলছেন, “ঋষি সুনককে নিয়ে হুজুগে আমার আগ্রহ নেই। তবে এটা বলব কয়েক বছর আগেও অশ্বেতাঙ্গ কাউকে কনজারভেটিভ পার্টি তো বটেই, ব্রিটেনে কোনও দলেই এই ভূমিকায় দেখা অভাবনীয় ছিল। তবু কেউ ভারতীয় বংশোদ্ভূত বলেই তাঁকে নিয়ে মাতামাতির যুক্তি নেই।” তাঁর কথায়, “অতি দক্ষিণপন্থী দৃষ্টিভঙ্গির এক নেতা ও দলের থেকে ভারতের জন্য আলাদা করে কিছু পাওয়ার নেই। তা ছাড়া, ব্রিটেনের যা পরিস্থিতি, তাতে ভোট না হলে অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটবে না, স্টেবিলিটি (সুস্থিতি) আসবেও না।”

ঋষির ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবিত নন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের অধ্যাপক দীপেশ চক্রবর্তী। তবে এই পরিবর্তনের তাৎপর্যে তিনি জোর দিচ্ছেন। আমেরিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মতো ঋষি সুনকের নামও ইতিহাসে থাকবে বলেই দীপেশের অভিমত। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘অশ্বেতাঙ্গ এক জনের উত্থানে স্পষ্ট, সাম্রাজ্যবাদের দুনিয়াটা কত পিছনে পড়ে আছে। আজকের বিশ্বায়ন উত্তর দুনিয়ার সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদের জমানার ফারাকটাও আরও পরিষ্কার হল।” কী ভাবে? দীপেশের কথায়, “আজকের পৃথিবীতেও জাতি বা ধর্ম নিয়ে বিদ্বেষের অভাব নেই। কিন্তু এখন বিশ্বের প্রধান বড়লোক হিসেবে কোনও চিনা বা আদানি, অম্বানী উঠে আসতেই পারেন! ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী পদের এই নতুন মুখটিও বোঝাচ্ছে দুনিয়ার ক্ষমতাশালীরা জাতিগত ভাবে কতটা পাঁচমিশেলি হতে পারে। সাদাদের মৌরসিপাট্টা এখন অনেকটাই ক্ষুণ্ণ। তবে কোথাওই সমাজ-অর্থনীতির তলানির বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবনে এতে হেরফের ঘটবে না।”

সমাজমাধ্যম উদ্বেল, ভারতীয় বংশের প্রধানমন্ত্রী ও পাক পরিবার থেকে আসা লন্ডনের মেয়রের (সাদিক খান) বিলেতের ঘোর কলিকাল নিয়ে! তবে প্রশ্ন উঠছে, ভারতের ক্ষেত্রে কি এমন সংখ্যালঘু সমাজভুক্তকে প্রধানমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে ভাবা যেতে পারে! “ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে সেটা এখন অসম্ভবই বলব।” দীপেশও তা মেনে নিচ্ছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rishi Sunak United Kingdom
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE