বিহারে বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না আরজেডি-র। ভোটে ভরাডুবি হয়েছে। পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বেরিয়ে এসেছেন লালুপ্রসাদ যাদবের কন্যা রোহিণী আচার্য। সেই কন্যা, যিনি কয়েক বছর আগে নিজের কিডনি দিয়ে দিয়েছেন লালুকে। পরিবার ছেড়ে বেরিয়ে রোহিণী কাঠগড়ায় তুলেছেন ভাই তেজস্বী যাদব এবং তাঁর ঘনিষ্ঠদের। অভিযোগ, অপমান করে তাঁকে বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে। এই তেজস্বীই ছিলেন আরজেডি তথা মহাগঠবন্ধন জোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী। ফলে রোহিণীর অভিযোগে তাঁর সঙ্গে অস্বস্তিতে তাঁর দলও।
রোহিণী দাবি করেছেন, বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে তাঁকে গালিগালাজ করা হয়েছে। মারার জন্য তোলা হয়েছে জুতোও। আত্মসম্মানের সঙ্গে আপস না করে তিনি পরিবার ছেড়েছেন। রবিবার সকালে সমাজমাধ্যমে আরও এক ধাপ এগিয়ে রোহিণী জানিয়েছেন, বাবাকে কিডনি দেওয়া নিয়েও তাঁকে খোঁটা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, তাঁর কিডনি ‘নোংরা’। রোহিণী লিখেছেন, ‘‘আমাকে গালিগালাজ করে বলা হয়েছে, আমি নোংরা। আমি আমার নোংরা কিডনি বাবাকে দিয়েছি। কোটি কোটি টাকা নিয়েছি। টিকিট কিনেছি।’’
আরও পড়ুন:
নিজের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বিবাহিত মেয়েদের পরামর্শ দিয়েছেন লালুকন্যা। বলেছেন, ‘‘বিবাহিত মেয়ে-বোনেদের আমি বলতে চাই, যদি বাপের বাড়িতে ভাই বা ছেলে থাকে, ঈশ্বরতুল্য বাবাকেও তোমরা কেউ বাঁচাতে যেয়ো না। ভাইকে, অর্থাৎ সেই বাড়ির ছেলেকে বলো কিডনি দিতে। সব মেয়ে-বোনের উচিত নিজের বাড়ি, নিজের পরিবার, নিজের সন্তান, নিজের কাজ এবং নিজের শ্বশুর-শাশুড়ির খেয়াল রাখা। মা-বাবার যত্ন নেওয়া উচিত নয় মেয়েদের। শুধু নিজের কথা ভাবা উচিত।’’ রোহিণীর পোস্টের পরতে পরতে ঝরে পড়েছে ক্ষোভ, অভিমান। তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘আমি বাবাকে কিডনি দেওয়ার সময় নিজের পরিবার, তিন সন্তানের কথা না ভেবে বড় অপরাধ করে ফেলেছি। স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির অনুমতিও নিইনি। বাবাকে বাঁচাতে আমি যা করেছিলাম, তাকে এখন নোংরা বলা হচ্ছে। আমার মতো ভুল কেউ কোনও দিন কোরো না। রোহিণীর মতো মেয়ে যেন কেউ না-পায়।’’
এর আগেই আরও একটি পোস্টে রোহিণী জানিয়েছিলেন, তিনি বাড়ি ছাড়ার সময় তাঁর বাবা-মা, বোনেরা কান্নাকাটি করছিলেন। কিন্তু তিনি অসহায় ছিলেন। জোর করে তাঁকে বাপের বাড়ি ছাড়তে, পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। তবে কোনও পোস্টেই তেজস্বী বা অন্য কারও নাম নেননি রোহিণী। শনিবার বাড়ি ছাড়ার পর প্রথম বার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিন জনকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন তিনি। তেজস্বী এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সঞ্জয় যাদব, রমীজ় খানদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। দাবি, কেন দল হারল, সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। দলে সঞ্জয়, রমীজ়দের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেই কারণে তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। তেজস্বীরা কেউ এখনও এ বিষয়ে মুখ খোলেননি। ২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় শেষ বার ৭৫টি আসন পেয়েছিল লালু-তেজস্বীর দল। এ বার সেই সংখ্যা কমে হয়েছে মাত্র ২৫।
আরজেডি নীরব থাকলেও রোহিণীর ‘বিদ্রোহ’কে কেন্দ্র করে আসরে নেমে পড়েছে বিজেপি। লালু এবং তাঁর দলকে ‘পুরুষতান্ত্রিক’, ‘নারীবিদ্বেষী’ বলে কটাক্ষ করা হয়েছে।