বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার পথে হাঁটছে মহারাষ্ট্র সরকার। এ নিয়ে শীঘ্রই নিয়ম তৈরি হবে বলে বৃহস্পতিবার বিধানসভায় জানালেন সে রাজ্যের মন্ত্রী মেঘনা বরদিকার।
রাজ্যে বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে কি না, তা জানতে চেয়েছিলেন কংগ্রেস বিধায়ক বিকাশ ঠাকরে। প্রশ্নোত্তর পর্বে তারই জবাব দেন জনস্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী মেঘনা। তিনি জানান, মহারাষ্ট্রে বর্তমানে অন্তত ১২,৮৬০ জন মানুষ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত।
মন্ত্রী বলেন, ‘‘এটা জিনগত অসুখ। সঠিক সময় চিকিৎসা না হলে তা পরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আমরা এই রোগ দূরীকরণের প্রচার চালাচ্ছি। পারভানিতে পাইলট প্রকল্প শুরু হয়েছিল। ধীরে ধীরে তা গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে।’’ রাজ্যের প্রতিটি জেলায় থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী।
থ্যালাসেমিয়ার রক্তবাহিত অসুখ। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মানুষের দেহে স্বাভাবিক নিয়মে যে পরিমাণ লোহিত রক্তকণিকা তৈরি হয়, সেই পরিমাণ লোহিত রক্তকণিকার মৃত্যুও হয়। কিন্তু যখন এই কণিকা উৎপাদনের থেকে ধ্বংসের পরিমাণ বাড়ে, তখনই বিপত্তি বাধে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা এবং লোহিত রক্তকণিকার মাত্রার তারতম্যের কারণে অ্যানিমিয়া ও থ্যালাসেমিয়ার মতো মারণ রোগ দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞেরা জানান, থ্যালাসেমিয়া জিনবাহিত রোগ। আক্রান্ত ব্যক্তিরা মা-বাবার কাছ থেকেই রোগটি পেয়ে থাকেন।
বিভিন্ন সময়ে দেখা গিয়েছে, থ্যালাসেমিয়ার বাহক হওয়ায় বহু তরুণীকে নানা ভাবে হেনস্থার শিকার হতে হয়। কখনও আত্মীয়দের কাছে, আবার কখনও বিবাহ পর্বে ‘রোগী’ তকমা লাগিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং চিকিৎসকেরা একযোগে বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সচেতনতার বার্তা দিয়ে থাকেন।
তবে চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, থ্যালাসেমিয়ার বাহকের অর্থ কিন্তু তিনি থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত নন। এ দেশে অধিকাংশ মেয়েই রক্তাল্পতায় ভোগেন। পুষ্টির অভাবেই এ সমস্যা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম হওয়ার কারণ, রক্তে আয়রনের অভাব। কিন্তু ভ্রান্ত ধারণা কাটাতে না পারলে সমস্যা বাড়বে। বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষার কারণ, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে বাঁচানো। কিন্তু কেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে, তার বৈজ্ঞানিক দিক সম্পর্কেও জানা জরুরি বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা।