Advertisement
E-Paper

হাজার হাজার লোক, ব্রিজ যেন মরণফাঁদ

এলফিনস্টোন রোড থেকে প্যারেল রেলস্টেশন যেতে হয় ব্রিটিশ আমলের এই জীর্ণ ব্রিজ পেরিয়ে। শ্রুতির কথায়, ‘‘মানুষের মাথার উপর দিয়ে মানুষের স্রোত নামছিল যেন। আমরা একে অন্যের উপরে গড়িয়ে পড়ছিলাম। কয়েক হাজার মানুষ যখন প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠে, তখন এক মারাত্মক অবস্থা হয়।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৪২
শোকার্ত: ছেলের দেহের সামনে কান্না। শুক্রবার মুম্বইয়ে। ছবি: রয়টার্স।

শোকার্ত: ছেলের দেহের সামনে কান্না। শুক্রবার মুম্বইয়ে। ছবি: রয়টার্স।

সকাল থেকেই চলছিল লাগাতার বৃষ্টি। ব্যস্ত মুম্বই তবু থেমে ছিল না এ দিনও। ট্রেন ধরে কাজের জায়গায় পৌঁছনোর তাড়া ছিল অন্যান্য দিনের মতোই। এলফিনস্টোন রোড স্টেশনে নেমে হাজার হাজার যাত্রী পরেলে যাওয়ার জন্য ছুটছিলেন ফুটব্রিজের দিকে। কিন্তু বৃষ্টিতে আটকে ব্রিজের উপরেই অপেক্ষা করছিলেন তাঁরা। সেই সময়েই ঘটে বিপত্তি। শ্রুতি লোকরে নামে এক যাত্রীর কথায়, ‘‘হঠাৎ ভিড় এত বেড়ে গিয়েছিল যে শ্বাস নিতে পারছিলাম না। কোনও মতে জনস্রোত ঠেলে বেরিয়ে এসে দেখি ততক্ষণে সিড়িতে লুটিয়ে পড়েছেন অনেকে।’’

এলফিনস্টোন রোড থেকে প্যারেল রেলস্টেশন যেতে হয় ব্রিটিশ আমলের এই জীর্ণ ব্রিজ পেরিয়ে। শ্রুতির কথায়, ‘‘মানুষের মাথার উপর দিয়ে মানুষের স্রোত নামছিল যেন। আমরা একে অন্যের উপরে গড়িয়ে পড়ছিলাম। কয়েক হাজার মানুষ যখন প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠে, তখন এক মারাত্মক অবস্থা হয়। আমরা সবাই বাঁচার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু না ছিল ভিড় সামলানোর কোনও ব্যবস্থা, না ছিল কী হয়েছে, তার ঠিকঠাক খবর। তার উপর গুজব ছড়ানোয় বিপত্তি আরও বাড়ে।’’

দুর্ঘটনার খতিয়ান

• ২০১৫, ফেব্রুয়ারি: কর্নাটকের আনেকালে বেঙ্গালুরু-এর্নাকুলম ইন্টারসিটি, মৃত ১০ জন।

• ২০১৫, মার্চ: রায়বরেলীতে দেহরাদূন-বারাণসী জনতা এক্সপ্রেস, মৃত ১৫০ জন।

• ২০১৫, মে: উত্তরপ্রদেশে রৌরকেলা-জম্মু তাওয়াই মুরি এক্সপ্রেস, মৃত ৫ জন, জখম ৫০ জন।

• ২০১৫, অগস্ট: মধ্যপ্রদেশে কামায়নী এক্সপ্রেস ও জনতা এক্সপ্রেস, মৃত ৫০ জন।

• ২০১৬: পটনা-ইনদওর এক্সপ্রেস, মৃত ১৫০ জন।

• ২০১৭, জানুয়ারি: অন্ধ্রপ্রদেশে জগদলপুর-ভুবনেশ্বর হীরকখণ্ড এক্সপ্রেস, মৃত ৪১ জন, জখম অন্তত ৭০ জন।

• ২০১৭, ১৯ অগস্ট: উত্তরপ্রদেশে উৎকল এক্সপ্রেস, মৃত ২২ জন, জখম ২০০-এরও বেশি।

• ২০১৭, ২২ অগস্ট: উত্তরপ্রদেশে কৈফিয়ত এক্সপ্রেস, জখম ৭০ জনেরও বেশি।

• ২০১৭, ৭ সেপ্টেম্বর: বেলাইন রাজধানী-সহ তিন ট্রেনের কামরা।

• ২০১৭, ২৯ সেপ্টেম্বর: এলফিনস্টোন স্টেশনে ফুটব্রিজে পদপিষ্ট হয়ে মৃত ২২, জখম ৩৯।

মুম্বইয়ের ব্যবসার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ও বহু মানুষের কর্মক্ষেত্র পরেল। সকালের ব্যস্ত সময়ে এলফিনস্টোন রোড স্টেশনে নামেন কয়েক হাজার লোক। জীর্ণ ফুটব্রিজটি পেরিয়ে পরেলে এসে গন্তব্যে যান তাঁরা। এক সঙ্গে দু’তিনটি ট্রেন ঢুকলে ফুটব্রিজ দিয়ে যাতায়াত করেন প্রায় ১৫ হাজার লোক। যাত্রীদের অভিযোগ, ব্রিজটির অবস্থা এতটাই খারাপ যে নীচ দিয়ে ট্রেন গেলে কাঁপতে থাকে সেটি। বৃষ্টিতে পিছল ব্রিজের সরু সিড়ি বেয়ে ওঠানামা করাও যথেষ্ট ঝুঁকির। শ্রুতির টুইট, ‘‘এক সময় বুঝলাম আমিও মরণফাঁদে আটকে পড়েছি। দেখি মাটিতে পদপিষ্ট দেহ পড়ে রয়েছে সারি সারি। কী ভাবে বাঁচলাম জানি না।’’

আরও পড়ুন: গুজবে হুড়োহুড়ি, মুম্বইয়ে পদপিষ্ট হয়ে মৃত অন্তত ২২

বৃষ্টির জন্য এ দিন বাড়িতে ছিলেন মণীশ মিশ্র। বাড়ির ঠিক পাশে এলফিনস্টোন রোড রেল স্টেশনের দিক থেকে হঠাৎই ব্যাপক চিৎকার-চেঁচামেচি, কান্নাকাটির আওয়াজ পান তিনি। বেরিয়ে এসে দেখেন ভয়ঙ্কর অবস্থা। ফুটব্রিজের উপর লোকে লোকারণ্য। কয়েক জন মাটিতে পড়ে। অনেকে আবার ব্রিজের রেলিং ধরে নীচে নামার জন্য চেষ্টা করছেন। মণীশ বলেছেন, ‘‘আমরা আশপাশের বাড়ি থেকে জল নিয়ে যাই। অনেক যাত্রী অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁদের জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করি। পুলিশ অবশ্য এসেছে বেশ পরে।’’

মুম্বই Mumbai Stampede Elphinstone Road Station Rumor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy