‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে রাজ্যসভায় তাঁর বক্তৃতার একটি দীর্ঘ অংশ জুড়ে নাম না করে কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী এবং জয়রাম রমেশকে নিশানা করলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বার বার তাঁদের ‘চিন-গুরু’ হিসেবে সম্বোধন করতে দেখা গেল জয়শঙ্করকে। কংগ্রেস বেঞ্চ প্রতিক্রিয়ায় হট্টগোল করলেও বক্তৃতায় রাজনৈতিক আক্রমণ আগগোড়া শানিয়ে গিয়েছেন তিনি।
শ্লেষাত্মক ভঙ্গিতে জয়শঙ্কর এ দিন বলেন, “আজকাল দেখছি চিন সম্পর্কে অনেকেই খুব জ্ঞান দিচ্ছেন। অনেকে আবার বলেছেন, আমি চিন সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানি না। অবশ্য আমি মাত্র ৪১ বছর বিদেশ মন্ত্রকে কাজ করেছি! চিনে সবচেয়ে বেশি দিন রাষ্ট্রদূত হিসেবেও থেকেছি! তবে এখন অনেক চিন-গুরু এসে গিয়েছেন। এক জন মান্যগণ্য সাংসদআমার বিপরীতে বসে রয়েছেন। তাঁর চিন সম্পর্কে ভালবাসা এতই প্রখর যে, তিনি নতুন সন্ধি তৈরি করেছিলেন, চিন্ডিয়া! হতে পারে আমার চিন সম্পর্কে জ্ঞান কিছু কম। কারণ, চিনের অলিম্পিক্স দেখতে গিয়ে আমার সে দেশ সম্পর্কে জ্ঞান তৈরি হয়নি। আবার কারও তাতেও হয়নি, বাড়িতে চিনা রাষ্ট্রদূতকে ডেকে প্রাইভেট টিউশন নিয়েছেন!”
গত কাল লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী চিন প্রশ্নে জয়শঙ্করকে বিঁধে বলেছিলেন, বিদেশমন্ত্রী অলীক স্বর্গে বাস করছেন। চিনের সঙ্গে পাকিস্তানের সংযোগের কথা তিনিই প্রথম সংসদে তুলেছিলেন বলে দাবি করেন রাহুল। সেই সঙ্গে বলেন, তখন সবাই তাঁর কথা শুনে হেসেছিল। বস্তুত, শুধু লোকসভাতেই নয়, গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে মোদী সরকারের চিন-নীতির সমালোচনা করছেন রাহুল। আবার তিনিই নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত চিনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখাও করেছেন। তাকেই ‘প্রাইভেট টিউশন’ বলে আজ ব্যঙ্গ করেছেন জয়শঙ্কর। ২০২৩-এ লন্ডনে একটি সম্মেলনে রাহুল বলেছিলেন, চিন নিয়ে বিদেশমন্ত্রীর ধারণা খুবই মেকি। ভারত এবং চিনের একসঙ্গে কাজ করার ধারণাটি সামনে এনে জয়রাম রমেশ ‘চিন্ডিয়া’ শব্দের প্রবর্তন করেছিলেন ২০০০ সালে।
আজ সে সবেরই সবিস্তার জবাব দেন বিদেশমন্ত্রী। বলেন, “চিন-গুরু বলেছেন, পাকিস্তান এবং চিন ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। অবশ্যই হয়েছে। এটা তো বাস্তব। কিন্তু কেন হয়েছে? কারণ, আমরা তাদের মধ্যে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের ভূখণ্ড ছেড়ে রেখে এসেছি বলে। রাতারাতি এই ঘনিষ্ঠতা তো হয়নি। কী করা যাবে। অনেকেই ইতিহাসের ক্লাসে ঘুমোতেন!”
আজই রাষ্ট্রপুঞ্জের মনিটরিং টিমের রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে যে, দ্য রেজিস্ট্যান্ট ফ্রন্ট(টিআরএফ) লস্কর-ই-তইবার শাখা সংগঠন এবং পহেলগাম হামলার সঙ্গে তাদের যোগ রয়েছে। বিষয়টিকে তাঁর বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন বিদেশমন্ত্রী। তাঁর দাবি, ভারতের সফল দৌত্যের ফলেই রাষ্ট্রপুঞ্জ টিআরএফ-কে পহেলগাম হামলার জন্য চিহ্নিত করেছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)