Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Mamata Banerjee-Akhilesh Yadav

উত্তরপ্রদেশে তৃণমূলকে একটি আসন দেবে এসপি

রাজনৈতিক শিবিরের মতে, বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’র মধ্যেই একটি ‘জিঞ্জার গোষ্ঠী’ তৈরি হয়েছে মমতাকে কেন্দ্র করে। তাতে রয়েছেন অখিলেশ, অরবিন্দ কেজরীওয়াল, উদ্ধব ঠাকরের মতো নেতারা।

Mamata Banerjee-Akhilesh Yadav

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অখিলেশ সিংহ যাদব। —ফাইল চিত্র।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:৪৬
Share: Save:

এই প্রথম দেশের সর্ববৃহৎ রাজ্য উত্তরপ্রদেশ থেকে লোকসভার একটি আসনে লড়তে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। গত কাল সমাজবাদী পার্টির কোর কমিটির বৈঠকে বিষয়টিতে চূড়ান্ত সিলমোহর পড়েছে। দলের সহ সভাপতি কিরণময় নন্দ আজ বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি আসনে লড়তে চেয়েছিলেন। আমরা তৃণমূলকে একটি আসন দেব। বিষয়টি আমাদের বৈঠকে চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। এর আগে দিল্লিতে আমাদের নেতা অখিলেশ সিংহ যাদবের সঙ্গে মমতার এই বিষয়ে কথা হয়। তারও আগে আমার সঙ্গেও তৃণমূল নেত্রীর আলোচনা হয়েছে।”

এসপি সূত্রে জানানো হয়েছে, কংগ্রেসের প্রাক্তন নেতা কমলাপতি ত্রিপাঠীর নাতি রাজেশ ত্রিপাঠী লড়বেন ঘাসফুল চিহ্নে। কমলাপতি যে আসন থেকে লড়তেন সেই চাঁদোলি নির্বাচনী ক্ষেত্র থেকে (বারাণসীর পার্শ্ববর্তী) লড়তে চাইছে ত্রিপাঠী পরিবার। এ নিয়ে সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে সূত্রের খবর। তবে মির্জাপুর জেলা থেকেই লড়তে দেখা যাবে তৃণমূল প্রার্থীকে। তৃণমূলকে টিকিট দেওয়ার প্রশ্নে নিশ্চয়তার কথা রাজেশের বাবা অর্থাৎ কমলাপতির পুত্র ললিতেশকে জানানো হয়েছে।

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, বিনিময়ে এসপি কী পাবে পশ্চিমবঙ্গে? আপাতত বলা হয়েছে, মমতার ‘দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের প্রতি শ্রদ্ধাবশতই’ এই আসনটি তৃণমূলকে দেওয়া হচ্ছে। কোনও প্রত্যাশা বা দেনা পাওনার হিসাবে নয় বলে সূত্রের খবর । এই নিয়ে তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য ডেরেক ও’ব্রায়েনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “তৃণমূল নেত্রীর দীর্ঘদিনের সংগ্রাম এবং মানুষের পাশে থাকার ইতিহাসকে শ্রদ্ধা করেন অখিলেশ সিংহ যাদব, অরবিন্দ কেজরীওয়াল, উদ্ধব ঠাকরের মতো নেতারা। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কারণেই আমরা দিল্লিতে বাড়তি সম্মান পাই।”

রাজনৈতিক শিবিরের মতে, বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’র মধ্যেই একটি ‘জিঞ্জার গোষ্ঠী’ তৈরি হয়েছে মমতাকে কেন্দ্র করে। তাতে রয়েছেন অখিলেশ, অরবিন্দ কেজরীওয়াল, উদ্ধব ঠাকরের মতো নেতারা। উত্তরপ্রদেশে একটি আসন মমতাকে ছেড়ে দেওয়ার পরে এই তত্ত্ব আরও জোরালো হল বলেই মনে করা হচ্ছে। কিরণময়ের কথায়, “আমরা তৃণমূলের প্রার্থী রাজেশকে সম্পূর্ণ সমর্থন করব, যাতে তিনি জিততে পারেন।”

কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নিয়ে কী ভাবছেন অখিলেশ? কিরণময় জানান, “খুব দ্রুতই কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে জানতে চাওয়া হবে তাঁরা ক’টা আসন চাইছেন এবং সেই চাহিদার ভিত্তি কী? খুব বেশি দিন আমরা অপেক্ষা করতে পারব না কারণ এখানে নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। বিজেপি মাঠে নেমে পড়েছে। খুব বেশি হলে, জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব।” ক’টা আসন কংগ্রেসকে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তা জানতে চাওয়ায় নন্দ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। কিন্তু এসপি শীর্ষ সূত্রে জানানো হয়েছে, সব মিলিয়ে মোট ১৫টির বেশি আসন অন্য দলগুলিকে ছাড়া হবে না। এই ১৫টির মধ্যে একটি তৃণমূল ছাড়াও পশ্চিমাঞ্চলের জাঠ বলয়ে আরএলডি-কে তিন থেকে চারটি আসন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে অখিলেশের। অর্থাৎ কংগ্রেসের ভাগে থাকছে গোটা দশেক আসন। বাকি ৬৫টি আসনে একাই লড়বে এসপি। নন্দ বলেন, “উত্তরপ্রদেশে গত বিধানসভা নির্বাচনে ৪০০টি আসনে কংগ্রেস লড়ে মাত্র ২টি পেয়েছিল। বহু আসনে তাদের জমানত বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়। অমেঠী এবং রায়বরেলীতে কংগ্রেসের তুলনায় এসপি-র শক্তি অনেক বেশি থাকা সত্ত্বেও ঐতিহ্য মেনে এই দু’টি আসন সনিয়া এবং রাহুল গান্ধীকে ছেড়ে থাকে এসপি।”

কংগ্রেস নেতৃত্ব অবশ্য আজ জানিয়েছেন, বাস্তবকে স্বীকার করে উত্তরপ্রদেশে আসন সমঝোতার ব্যাপারে নমনীয়তা দেখাতে প্রস্তুত তাঁরা। জাতীয় স্বার্থে ‘ইন্ডিয়া’র হাত পোক্ত করতে তাঁরা দরকষাকষি করবেন না এসপি-র সঙ্গে।

পাশাপাশি ১৪ তারিখ শুরু হওয়া রাহুল গান্ধীর ‘ন্যায় যাত্রা’ যখন উত্তরপ্রদেশে ঢুকবে, তখনও কিন্তু এসপি তাতে যোগ দেবে না বলেই গত কালের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। নন্দর কথায়, “এটি কংগ্রেসের নিজস্ব কর্মসূচি। ইন্ডিয়া জোটের যাত্রা হচ্ছে না। ফলে আমরা কেনই বা তাতে যোগ দিতে যাব?” যদিও এর আগে রাহুলের ভারত জোড়ো যাত্রার সময় মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যে এনসিপি, শিবসেনা, ডিএমকে যোগ দিয়েছিল নিজ নিজ রাজ্যে।

অযোধ্যাকে কেন্দ্র করে গোটা রাজ্যেই হিন্দুত্বের জোয়ার তুলতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর দল। লোকসভার প্রচারে কোন অস্ত্রে তার মোকাবিলা করবে দল? এসপি সূত্রে বলা হচ্ছে, জাতভিত্তিক জনগণনা, গণনার ভিত্তিতে জনসংখ্যা অনুযায়ী ওবিসি-দের ভাগীদারি, কিছু কর্পোরেটের হাতে দেশের অর্থব্যবস্থাকে তুলে দেওয়া, কৃষকের দুরবস্থা, বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধির মতো সাধারণ মানুষের সমস্যার বিষয়গুলিকে আনা হবে প্রচারে। গত পাঁচ বছরে যোগী সরকারের বিরুদ্ধে অনুন্নয়নের অভিযোগকেও সামনে আনা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Samajwadi Party Uttar Pradesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE